বলিউড অবরুদ্ধ করোনা সেন্সরশিপ ও হিন্দুত্ববাদে

বলা হয়ে থাকে, বলিউডই সেই জায়গা, যেখানে ভারতের স্বপ্ন তৈরি হয়। তবে এই মুহুর্তে এটি একটি স্বপ্নভঙ্গের স্থানে পরিণত হয়েছে। কারণ দুটি যুগপত মহামারী শতাব্দী প্রাচীন এই শিল্পকে হুমকির মুখে ঠেলে দিয়েছে, যা তার নিকটতম প্রতিদ্বদ্বী চীন ও আমেরিকার চেয়ে আরও বেশি পরিমাণ চলচ্চিত্র তৈরি করে।

গত বছর ৬ মাসের জন্য করোনা মহামারীরর জেরে ভারতের ১০ হাজার প্রেক্ষাগৃহ পুরোপুরি বন্ধ ছিল। সেগুলি ধীরে ধীরে খুলতে শুরু করলেও, বেশিরভাগই ধারণ ক্ষমতার অর্ধেক দিয়ে চলছে এবং আর্থিক ধ্বসের আশঙ্কায় পরিচালকরা তাদের কথিত ব্লকবাস্টার সিনেমাগুলি স্থগিত করে রেখেছে। পাশাপাশি, করোনার থেকেও মারাত্মক প্রচীন ও আরও সূক্ষ্ম, আরকেটি জীবাণু বলিউডকে কুঁড়ে খাচ্ছে। এটি হ’ল, উগ্র হিন্দুপন্থীদের তাদের পছন্দ ও চাহিদা অনুসারে বলিউডের ধর্মনিরপেক্ষতাকে দুমড়ে-মুচড়ে হিন্দু জাতীয়তাবাদে পরিণত করার পাঁয়তারা।

প্রানঘাতি ভাইরাসের মতোই এই চাপটি বলিউডের চলচিত্রগুলিতে রাষ্ট্রীয় সেন্সরশিপে অলঙ্ঘণীয় বাঁধা তৈরি করা থেকে শুরু করে বলিউডকে আর্থিকভাবে সঙ্কুচিত করে ফেলা, আইনী চ্যালেঞ্জগুলির বিরুদ্ধে পাল্টা মামলা মোকদ্দমার গোলকধাঁধা তৈরি করা এবং দর্শকদের কাতারে দাড়িয়ে বয়কট ডাকা, এমনকি সহিংসতার হুমকির দিকে ঠেলে দিচ্ছে।
[১] বাজার করতে গিয়েও আপনি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারেন [২] সংক্রমণের ঝুঁকি এড়াতে যা যা করবেন ≣ [১]বিশ্বব্যাপী করোনা শনাক্তের হারে বাংলাদেশের অবস্থান ২৪ [২] এশিয়ায় ৭ম, দক্ষিণ এশিয়ায় ৩য় ≣ ঠাকুরগাঁও-২ আসনের এমপি দবিরুল ইসলাম করোনায় আক্রান্ত

২০১৪ সালে হিন্দু-জাতীয়তাবাদী ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকেই এই চাপ ক্রমেই বেড়ে চলেছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ২০১৯ সালের নিরঙ্কুশভাবে পুনর্বার বিজয়ী হওয়ার পর থেকে এই চাপটি গত বছর থেকে অনলাইন বিনোতনের প্লাটফর্মগুলিতেও কঠোরভাবে আরোপ হতে শুরু করেছে।

বিশেষ করে এই জানুয়ারিতে অ্যামাজন প্রাইম দ্বারা নির্মিত ‘তান্ডব’ থ্রিলার সিরিজটি প্রকাশের পর, যা ছাত্রদের আদর্শবাদের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক ভ্রষ্টাচার দেখানো হয়েছে। নিউজ লন্ড্রি নামের একটি তদন্তকারী ওয়েবসাইট প্রমান করেছে যে, এক বিজেপি রাজনীতিকের নেতৃত্বে এই সিরিজটির বিরুদ্ধে সোশাল মিডিয়ায় ব্যাপক আন্দোলন চালানো হয়েছে।

তান্ডব প্রচারিত হওয়ার সাথে সাথেই তিনি ২০ হাজার বিজেপিপন্থীকে পুলিশ এবং হিন্দু ধর্মীয় অনুভূতিকে ‘অসম্মান’ করার জন্য নিষেধাজ্ঞা দাবি করে আন্দোলন করার নির্দেশ দেন। সিরিজটির বিরুদ্ধে আধ ডজন মামলা মোকদ্দমা করা হয়। এর পরিচালক এবং প্রযোজক দ্রুত ক্ষমা চেয়েছেন, একটি আপত্তিজনক আক্রমণাত্মক দৃশ্যে ছাঁটতে রাজি হয়েছেন।

তারা মামলা-মোকদ্দমা থেকে রক্ষা পেতে ভারতের সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করেছিলেন, কিন্তুবিচারকদের একটি বেঞ্চ প্রত্যাখ্যান তা করে, এমনকি আদালত এও বলেন যে, অভিনীত চরিত্রের কারণে অভিনেতাদেরও অপরাধের জন্য দায়বদ্ধ করা উচিত। এরপর কয়েকটি নির্ধারিত সিরিজ শীঘ্রই স্থগিত বা বাতিল করা হয়।

তবে এটি কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। ‘তান্ডব’ এর প্রধান দু›জন অভিনেতা মুসলমান হওয়ার কারণেই এই আক্রমনটি করা হয়েছে। ভারতের অনেক শীর্ষস্থানীয় মুসলিম তারকা বলিউডের জন্মের পর থেকেই রয়েছেন। তবে গত দশক থেকে ধর্মীয় বিদ্বেষকে বলিউডের একটি গূরুতর বিষয়ে পরিণত করা হয়েছে।

বর্তমানে বিজেপির হিন্দুত্ববাদের টার্গেট ‘তিন খান’ সোশ্যাল মিডিয়ায় সবথেকে বেশি ট্রোলের শিকার হচ্ছে। এই ত্রয়ী এখন পাকিস্তানের প্রতি সহানুভূতিশীল, বা ্রলাভ জিহাদগ্ধ এর প্রচারক হিসাবে অভিযুক্ত হয়ে আক্রমণের শিকার হচ্ছেন। উদাহরণস্বরূপ, ‘জেম্স অফ বলিউড’ নামে একটি টুইটার অ্যাকাউন্ট থেকে তাদের বিরুদ্ধে ইসলাম প্রচারের হাতিয়ার হিসাবে বলিউডকে ব্যবহার করার অভিযোগ তোলা হয়েছে। মুসলিমদের বিরুদ্ধে ঘৃষা উস্কে দিতে একাউন্টটি ‘উর্দুবাদ’ শব্দটি ব্যবহার করেছে, যা মূলত দক্ষিণ এশিয়ার মুসলিমদের সাধারণ ভাষা।

এরা সম্প্রতি তিন খানের অন্যতম সালমান খানকে হিন্দুদের ‘খৎনা করানোর জন্য মিশন’-এ নেমেছেন বলে অভিযোগ তুলেছে। সমালোচকরা বলছেন যে, তারা বলিউডের মুসলিম তারকাদের শিক্ষা দেয়ার এবং তাদের নিজস্ব নায়কদের প্রতিস্থাপন করার মিশনে নেমেছে। কেউ এর বিরুদ্ধচারণ করলে তিনি সহকর্মীদের কাছ থেকে শীতল আচরণ পাওয়ার জন্য দায়ী থাকবেন। তবে কেবলমাত্র সমালোচকরাই বলিউডের ভবিষ্যত নিয়ে উদ্বিগ্ন নন।

প্রডিউসার্স গিল্ড অফ ইন্ডিয়া’র সভাপতি সিদ্ধার্থ রায় কাপুর তার একটি ব্লগ পোস্টে কথিত খলনায়ক শিকারের নিন্দা করে একটি গুরুত্বপূর্ণ শিল্পকে রক্ষা করার জন্য ভারতের সরকারকে নিরবতা ভাঙার অনুরোধ করেছেন। তিনি লিখেছেন, ‘নির্মাতাদের কাজ বিশাল দেশজুড়ে থানা এবং আদালদগুলিতে চক্কর কাটা নয়, বরং ছবি তৈরিতে নিয়োজিত থাকা।’ সিদ্ধার্থ আরও লিখেছেন যে, সেই ব্যবসা চালানো সম্ভব না, যেখানে ভারতের ১৩০ কোটি লোকের প্রত্যেকেই সরকারী ভেটো ব্যবহার করবে।

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *