প্রথম প্রান্তিকে রেকর্ডের পর প্রবৃদ্ধির গতি অব্যাহত

কভিড-১৯ মহামারীর ধকল সামলে দৃঢ়ভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছে চীনা অর্থনীতি। চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ) রেকর্ড বৃদ্ধির সাক্ষী হয়েছিল বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম এ অর্থনীতি। শক্তিশালী রফতানি ও গ্রাহক ব্যয় এবং ক্রমবর্ধমান ব্যবসায়িক আত্মবিশ্বাসের উন্নতির বিষয়গুলো দেশটির অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে সহায়তা করেছে। অর্থনীতির আটটি প্রাথমিক সূচক অনুযায়ী, মার্চ থেকে চীনা অর্থনীতির দৃঢ় সম্প্রসারণ অব্যাহত রয়েছে। পাশাপাশি গত বছরের এপ্রিলের তুলনায় এ মাসে কিছু সূচকে ব্যাপক বৃদ্ধি দেখা যাচ্ছে। খবর ব্লুমবার্গ।

ব্রিটিশ বহুজাতিক ব্যাংকিং ও আর্থিক পরিষেবা সংস্থা স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড পিএলসির পাঁচ শতাধিক সংস্থার ওপর পরিচালিত একটি জরিপে দেখা গেছে, ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগগুলোর (এসএমই) মধ্যে টানা দ্বিতীয় মাসের মতো আত্মবিশ্বাস বেড়েছে। বিষয়টি প্রথম তিন মাসের তুলনায় বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে আরো শক্তিশালী পুনরুদ্ধারের ইঙ্গিত দিচ্ছে।

স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ডের অর্থনীতিবিদ ল্যান শেন ও ডিং চুয়াংয়ের মতে, রফতানিমুখী এসএমইগুলোয় দ্রুত উৎপাদন ও উৎপাদন খরচের মতো বিষয়গুলো অভ্যন্তরীণ এসএমইগুলোকে ছাড়িয়ে গেছে। পরিবহন ও লজিস্টিক, তথ্যপ্রযুক্তি, বাণিজ্যিক পরিষেবা শিল্পের হাত ধরে দেশটির পরিষেবা খাত দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে। প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা তুলে নেয়া ও টিকাদান কার্যক্রমের জন্য পরিষেবা খাতের উন্নতি হয়েছে। তবে ক্যাটারিং ও আবাসন খাত এখনো দুর্বল রয়ে গেছে। এছাড়া বর্তমানে রফতানি চাহিদা স্থিতিশীল থাকলেও দেশীয় চাহিদা বাড়তে শুরু করেছে।

প্রথম প্রান্তিকের মতো এখনো বিশ্বজুড়ে ক্রমাগতভাবে চীনা পণ্যের চাহিদা বাড়ছে। যেমন চলতি মাসের প্রথম ২০ দিনে দক্ষিণ কোরিয়ায় চীনের রফতানি আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৪৫ শতাংশ বেড়েছে। এটি ২০২১ সালে সবচেয়ে দ্রুত বৃদ্ধির রেকর্ড।

ব্লুমবার্গের ইকোনমিকসের মূল্য ট্র্যাকারের মতে, বিশ্বজুড়ে তীব্র চাহিদা চীনা পণ্যের দামও বাড়িয়ে দিচ্ছে। চীনে উৎপাদক পর্যায়ের মূল্যস্ফীতি ২০১৭ সালের পর সর্বোচ্চ পর্যায়ে উন্নীত হয়েছে। গত ফেব্রুয়ারিতে কপারের দাম নয় বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ উচ্চতায় পৌঁছেছিল। রডের মজুদ কমে গেলেও চীনে স্টিলের দাম রেকর্ড বেড়েছে।

অন্যান্য অর্থনৈতিক সূচকের মতো এপ্রিলে দেশটির শেয়ারবাজারেও বড় উত্থান দেখা গেছে। চীনা মেইনল্যান্ডের ৩০০ সংস্থার বেঞ্চমার্ক সূচকটি ৫ হাজার ১০০ পয়েন্টের উপরে চলে গেছে। এ মাসে দেশটিতে আবাসন খাতের বিক্রি প্রবৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। যদিও মার্চের তুলনায় এ প্রবৃদ্ধির গতি কিছুটা কম। আবাসন বাজারে আর্থিক সহজীকরণের ফলে এ খাত পুনরুদ্ধারের পর নিয়ন্ত্রকরা এখন ঝুঁকি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছেন। একই সময়ে গাড়ি বিক্রির গতিও কিছুটা ধীর হয়ে গেছে।

কভিড-১৯ মহামারীর পর দেশটির গ্রাহকরা ব্যয়ের ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করছেন। এ পরিস্থিতিতে গ্রাহকব্যয় বাড়িয়ে খুচরা খাত পুনরুদ্ধারে একাধিক প্রচারণামূলক কার্যক্রম শুরু করছে চীন। এরই অংশ হিসেবে মে মাসে দক্ষিণ হাইনান প্রদেশে একটি নতুন ভোক্তাপণ্য এক্সপোর আয়োজন করা হচ্ছে। গত মাসেও দেশটিতে খুচরা বিক্রি বেড়েছিল আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৩৪ দশমিক ২ শতাংশ। এটা বিশ্লেষকদের প্রত্যাশিত ২৮ শতাংশকে ছাড়িয়ে গেছে। আরো উল্লেখযোগ্য একটি বিষয় হলো, মহামারীর আগে ২০১৯ সালের মার্চের তুলনায় গত মাসে খুচরা বিক্রি খাতের আয় ১২ দশমিক ৯ শতাংশ বেড়েছিল।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র গাও ফেং এক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন, চীন পাঁচদিনের শ্রম দিবসের ছুটি শুরুর সঙ্গে সঙ্গে মাসব্যাপী গ্রাহকব্যয় নিয়ে প্রচারণা শুরু করবে। গ্রাহক ব্যয় বাড়াতে বেইজিং, চংকিং ও সুজুহুয়ের মতো বড় শহরগুলোয় বিভিন্ন আয়োজন করা হবে। তাছাড়া ই-কমার্স প্লাটফর্মগুলোও অর্ধমাসের জন্য খাদ্য, ভ্রমণ, সাংস্কৃতিক ও ক্রীড়াসামগ্রীর বিক্রি বাড়াতে বিভিন্ন অফারের ঘোষণা দেবে।

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *