প্রথমবারের মতো টি২০ বিশ্বকাপ জিতল অস্ট্রেলিয়া

ওয়ানডে ক্রিকেটে পাঁচবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়া প্রথমবারের মতো টি২০ বিশ্বকাপ শিরোপা জিতে নিল। গতকাল দুবাই ফাইনালে প্রতিবেশী দেশ নিউজিল্যান্ডকে ৮ উইকেটে হারিয়ে সংক্ষিপ্ত সংস্করণের ক্রিকেটে প্রথমবারের মতো শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট পেল অ্যারন ফিঞ্চের দল। এর আগে ২০১০ সালে কাছাকাছি গিয়েও ব্যর্থ হয় অজিরা। সেবার ফাইনালে তারা হেরেছিল ইংল্যান্ডের কাছে।

টি২০ বিশ্বকাপ ফাইনালের রেকর্ড ১৭২ রানের পুঁজি নিয়েও অস্ট্রেলিয়াকে আটকাতে পারল না কিউইরা। ১৭৩ রান তাড়া করতে নেমে ডেভিড ওয়ার্নার, মিচেল মার্শ ও গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের অনবদ্য ব্যাটিংয়ে জয় পায় অস্ট্রেলিয়া। ওয়ার্নার ৩৮ বলে ৪ বাউন্ডারি ও ৩ ছক্কায় ৫৩ রানের মূল্যবান ইনিংস খেলেন। ওয়ার্নার ও মার্শ ৫৯ বলে ৯২ রান যোগ করেন। এরপর গ্লেন ম্যাক্সওয়েলকে নিয়ে ৩৯ বলে ৬৬ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটিতে অজিদের জিতিয়ে মাঠ ছাড়েন মার্শ। ৬ বাউন্ডারি ও ৪ ছক্কায় ৫০ বলে ৭৭ রান করে অপরাজিত থাকেন মার্শ, আর ম্যাক্সওয়েল ৪ বাউন্ডারি ও ১ ছক্কায় করেন ১৮ বলে ২৮ রান।

ফাইনাল শেষে স্টেডিয়ামের এক প্রান্তে অজিদের জয়োল্লাস, অন্য প্রান্তে কিউইদের কান্না। ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় দুর্ভাগা জাতি হয়তো ব্ল্যাক ক্যাপসরাই। ২০১৫ থেকে এ নিয়ে তিনটি বিশ্বকাপ ফাইনালে হারল তারা! ২০১৫ সালে মেলবোর্নে ওয়ানডে বিশ্বকাপ ফাইনালে তাদের গুঁড়িয়ে দিয়ে পঞ্চম মুকুট জিতে নেয় অজিরা। ২০১৯ সালে লর্ডস ফাইনালে সুপার ওভারের চরম নাটকীয়তা শেষে বাউন্ডারির সংখ্যা বিচারে তাদের হারিয়ে শিরোপা উৎসব করে ইংল্যান্ড। এবার দুবাইয়ে টি২০ বিশ্বকাপেও পরাজিত দলের নাম নিউজিল্যান্ড। গত জুনে ভারতকে ফাইনালে হারিয়ে জেতা ওয়ার্ল্ড টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপই এখন সান্ত্বনা কিউইদের।

গতকাল দুবাইয়ে টস হেরে ব্যাটিংয়ে নামা নিউজিল্যান্ড প্রচণ্ড চাপের মুখে পড়লে বুক চিতিয়ে লড়াই করেন অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন। এ ব্যাটার ৪৮ বলে ৮৫ রানের বিস্ফোরক ইনিংস খেলে দলকে এনে দেন ১৭২ রানের পুঁজি, যা বিশ্বকাপ ফাইনালে সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহের রেকর্ড। কিন্তু কিউইদের হারে বিফলেই যায় তার অনবদ্য এ লড়াই।

সূচনাটা দুর্দান্ত হয়েছিল নিউজিল্যান্ডের। ৩.২ ওভারে ২৮ রান তুলে নেয় নিউজিল্যান্ড। যদিও চতুর্থ ওভারের পঞ্চম বলে ড্যারিল মিচেলকে ফেরান জস হ্যাজেলউড। প্রথম উইকেট পতনের পর পেস-স্পিনের সাঁড়াশি আক্রমণে কিউইদের কোণঠাসা করে রাখে অজিরা। তখন কিউইদের পরিস্থিতি এতটাই নাজুক হয়ে ওঠে যে পাওয়ার প্লের ৬ ওভার শেষে তাদের স্কোর দাঁড়ায় ৩২/১!

নবম ওভারে আক্রমণে আসা মিচেল মার্শকে দুটি বাউন্ডারি মেরে জড়তা কাটান উইলিয়ামসন। কিউইদের এই ফেরা। ১০ ওভার শেষে কিউইদের সংগ্রহ ৫৭/১। সেখান থেকে অবিশ্বাস্য ব্যাটিংয়ে পরের ১০ ওভার থেকে ১১৫ রান তুলে নেয় নিউজিল্যান্ড। এতে নেতৃত্ব দেন উইলিয়ামসন। ২১ বলে ২১ রানের সময় জীবন পেয়েছেন তিনি। জীবন পেয়ে ভয়ংকর হয়ে ওঠেন কিউই দলনায়ক। এর পরের ২১ বলে করেছেন ৫৬ রান।

৩২ বলে হাফ সেঞ্চুরি পূর্ণ করা উইলিয়ামসনের কল্যাণে ১৪তম ওভারে ১০০ রান তুলে নেয় নিউজিল্যান্ড। স্টার্কের করা ১৬তম ওভার থেকেই তিনি নেন ২২ রান। এ ওভারে ৪ বাউন্ডারি ও একটি ছক্কা মারেন নিউজিল্যান্ড দলনায়ক। সব মিলিয়ে গতকাল স্টার্ককে ৮টি বাউন্ডারি মেরেছেন তিনি, যা টি২০ বিশ্বকাপে যুগ্মভাবে রেকর্ড। উইলিয়ামসন ৭টি চার ও একটি ছক্কা মেরেছেন অজি বামহাতি ফাস্ট বোলারকে। এর আগে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ক্রিস গেইল ২০০৯ বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়ার ব্রেট লিকে ও পাকিস্তানের আহমেদ শেহজাদ ২০১৪ বিশ্বকাপে বাংলাদেশের মাশরাফি বিন মর্তুজাকে সমান ৮টি বাউন্ডারি মেরেছিলেন।

১৭ ওভারে ২ উইকেটে ১৪৪ রান তুলে নেয়া নিউজিল্যান্ডের সংগ্রহটা ১৮০ টপকানোও তখন অসম্ভব ছিল না। যদিও হ্যাজেলউডের করা ১৮তম ওভারে ৪ বলের ব্যবধানে গ্লেন ফিলিপস ও উইলিয়ামসনের বিদায় ঘটলে রান তোলায় ছন্দপতন ঘটে। অধিনায়কের বিদায়ের পর শেষ ২ ওভার থেকে ২৪ রান তুলতে সমর্থ হয় নিউজিল্যান্ড। এতেই বিশ্বকাপ ফাইনালে সর্বোচ্চ সংগ্রহের রেকর্ডটা হয়ে যায় কিউইদের। ২০০৭ সালের আসরে ভারতের করা ৫ উইকেটে ১৫৭ রানই ছিল এতদিন ফাইনালে সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহ।

৪৮ বলে ১০টি চার ও ৩টি ছক্কায় ৮৫ রানের রাজসিক ইনিংস খেলেন উইলিয়ামসন। বিশ্বকাপ ফাইনালে এটা যুগ্মভাবে সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত স্কোর। ২০১৬ আসরে কলকাতায় ৮৫ রানের হার না মানা ইনিংস খেলেছিলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের মারলন স্যামুয়েলস। আর চলতি আসরে অধিনায়ক হিসেবে সর্বোচ্চ স্কোরের মালিক হলেন উইলিয়ামসন।

মিচেল মার্শ হয়েছেন ফাইনালের সেরা খেলোয়াড় আর ২৮৯ রান করে টুর্নামেন্টসেরা খেলোয়াড় ডেভিড ওয়ার্নার।

হার শেষে উইলিয়ামসন বলেন, আমরা খুব দূরে ছিলাম না। অস্ট্রেলিয়া যেভাবে চেজ করল তাতে কৃতিত্ব তাদেরই দিতে হবে। আমাদের কোনো সুযোগই দেয়নি তারা। দিনটি আমাদের ছিল না। কিন্তু যেভাবে আমরা খেলে এসেছি তাতে দলটি নিয়ে গর্বিত।

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *