পাশবিকতা নিয়ন্ত্রণে ধর্ষণের শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের বিধান করেছে সরকার: প্রধানমন্ত্রী

অ্যাসিড সন্ত্রাসের মতো ধর্ষণ নামের পাশবিকতা নিয়ন্ত্রণেই সরকার আইন সংশোধন করে ধর্ষণের জন্য মৃত্যুদণ্ডের বিধান সংযুক্ত করেছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ধর্ষণ একটা পাশবিকতা, মানুষ পশু হয়ে যায়। ফলে আমাদের মেয়েরা আজ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। সেজন্য আমরা আইনটি সংশোধন করে ধর্ষণ করলে যাবজ্জীবনের সঙ্গে মৃত্যুদণ্ডের বিধান রেখে মন্ত্রিসভায় সেই আইন পাস করেছি।

গতকাল ‘আন্তর্জাতিক দুর্যোগ প্রশমন দিবস-২০২০’-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হয়ে উদ্বোধন করেন। এছাড়া গাইবান্ধা ও বরগুনা জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে সংযুক্ত হয়ে মতবিনিময় করেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এসিড নিক্ষেপকে আমরা নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছি। কারণ সেখানে আমরা আইন সংশোধন করেছিলাম। যেহেতু পার্লামেন্ট সেশনে নেই, তাই আমরা এক্ষেত্রে অধ্যাদেশ জারি করে দিচ্ছি। একটা সমস্যা দেখা দিলে তাকে মোকাবেলা করা ও দূর করাই আমাদের লক্ষ্য এবং সেই লক্ষ্য নিয়েই আমরা কাজ করে যাচ্ছি।

উল্লেখ্য, ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড রেখে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মন্ত্রিসভার বৈঠকে অনুমোদিত সংশোধনীর খসড়া গতকাল অধ্যাদেশ আকারে জারি হয়েছে। রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের সই করা অধ্যাদেশটি গেজেট আকারে প্রকাশিত হয়েছে।

দুর্যোগ মোকাবেলায় সরকার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা একটা দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পেরেছি আন্তর্জাতিকভাবে। শুধু আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি না, বাংলাদেশ পথ দেখাতে পারছে কীভাবে দুর্যোগ মোকাবেলা করা যায়। মানুষকে সঙ্গে নিয়ে কীভাবে করতে হবে, সেটাও আমরা করে যাচ্ছি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের উপকূলীয় অঞ্চলগুলো যেখানে জলোচ্ছ্বাস বা ঘূর্ণিঝড়কবলিত সেখানে ব্যাপক হারে বৃক্ষরোপণ সবুজবেষ্টনী তৈরি করা এবং সেই এলাকার মানুষের বসতগুলো যেন দুর্যোগ সহনীয় হয়, সেই ব্যবস্থা নিচ্ছি। পাশাপাশি যারা গৃহহারা যাদের ঘরবাড়ি নেই, তাদের ঘর করে দিচ্ছি এবং সেগুলো দুর্যোগ সহনীয় করে তৈরি করে দিচ্ছি।

সরকারপ্রধান বলেন, বাংলাদেশ যেহেতু বদ্বীপ কাজেই বন্যা আমাদের মাটিকে উর্বর করে। যে মাটি সারা বছর বৃষ্টিতে ধুয়ে যায়, সেটা আবার পুনর্বহন করে। আমাদের ভূগর্ভস্থ পানির স্তর ভালো রাখে। আমরা ডেল্টা প্ল্যান নিয়েছি। অর্থাৎ ২১০০ সাল পর্যন্ত এই বদ্বীপটাকে কীভাবে উন্নত করব, সেই পরিকল্পনা নিয়ে তা বাস্তবায়নও শুরু করেছি। সব নদীকে ড্রেজিং করে নব্যতা ও গভীরত ফেরানো, আমাদের খাল-বিল, জলাধার আবার পুনঃখনন করে সেখানে যেন পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি থাকতে পারে তার ব্যবস্থাও আমরা নিচ্ছি।

তিনি বলেন, জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন করছি। আমরা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত। এ করোনাভাইরাসের কারণে যেভাবে মুজিব বর্ষ উদযাপন করার কথা ছিল, সেভাবে পারিনি। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, আমাদের দলের পক্ষ থেকে প্রায় এক কোটি বৃক্ষরোপণের নির্দেশ দিয়েছি। আমাদের আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, কৃষক লীগ থেকে শুরু করে সব সহযোগী সংগঠন মিলে এতদিন আমরা এক কোটির ওপরে গাছ লাগানোর সফলতা অর্জন করেছি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, উপকূলীয় অঞ্চলে কৃত্রিম ম্যানগ্রোভ তৈরি করে দিয়ে জলোচ্ছ্বাস থেকে দেশকে রক্ষার পাশাপাশি প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষা পাবে, সেদিকে লক্ষ রেখেই বৃক্ষরোপণের পদক্ষেপ নিচ্ছি। এবারে যখন আম্পান ঘূর্ণিঝড় এল আমরা ২৪ লাখ মানুষকে তাদের ঘরবাড়ি থেকে নিয়ে আমরা সেখানে শেল্টার দিয়েছি। এত মানুষকে আশ্রয় দিতে মনে হয় কোনো দেশ পারবে না।

অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী জিজিটাল পদ্ধতিতে বিনা মূল্যে ১৭ হাজার ৫টি দুর্যোগসহনীয় গৃহ প্রদান এবং ১৮ হাজার ৫০৫ জন নারী কর্মী সংবলিত ‘ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচির (সিপিপি)’ নতুন একটি মহিলা ইউনিটও উদ্বোধন করেন। অনুষ্ঠানে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ৪২ জন পুরুষ এবং ৪২ জন নারীকে পদক দেয়া হয়।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমানের সভাপতিত্বে আরো বক্তব্য রাখেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি এ বি তাজুল ইসলাম, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মোহসীন।

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *