পার্বত্য চট্টগ্রামের ৪ হাজার ৩০০টি পাড়াকেন্দ্রে কর্মরতদের প্রণোদনা দেয়া হয়েছে। নভেল করোনাভাইরাসের কারণে উদ্ভূত পরিস্থিতিতেও সংক্রমণ ঠেকাতে তত্পরতা ও প্রত্যন্ত অঞ্চলে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা রাখায় তাদের প্রায় ১ কোটি টাকা প্রণোদনা দেয় পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড। এরই মধ্যে উপহারভোগীদের নিজস্ব ব্যাংক অ্যাকাউন্টে প্রণোদনার টাকা পৌঁছে গেছে।
পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, উন্নয়ন বোর্ড পরিচালিত ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকায় টেকসই সামাজিক সেবা প্রদান’ প্রকল্পের অধীনে ৪ হাজার ৩০০টি পাড়াকেন্দ্র রয়েছে। পার্বত্য জেলা রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানে ৪ হাজার ৩০০ পাড়াকেন্দ্রের অধীনে বর্তমানে ৪ হাজার ২৪৩ জন পাড়াকর্মী ও ৪৩০ জন মাঠ সংগঠক রয়েছেন। একজন মাঠ সংগঠক ৮-১০টি পাড়াকেন্দ্রের তত্ত্বাবধান করেন। বাংলাদেশে করোনার প্রাদুর্ভাবের শুরু থেকেই সরকারিভাবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ঘোষণার পর থেকেই তিন জেলার ৪ হাজার ৩০০টি পাড়াকেন্দ্রে শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। তবে এর মধ্যেও পাড়াকর্মী ও মাঠ সংগঠকরা পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকায় করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধি, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে বারবার হাত ধোয়ার অভ্যাস গড়ে তোলা, করোনাকালে প্রসূতি মা ও শিশু-কিশোরীদের শরীরের যত্ন নেয়া, প্রান্তিক এলাকার শিশুরা যেন অপুষ্টিতে না ভোগে সেজন্য পুষ্টিকর বিস্কুট বিতরণ কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। পাড়াকর্মী ও মাঠ সংগঠকদের কাজের গতি আরো ত্বরান্বিত করতে ও স্বীকৃতিস্বরূপ প্রণোদনা দেয় পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড।
সূত্রে আরো জানা গেছে, বিশেষ প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় তিন পার্বত্য জেলার মধ্যে রাঙ্গামাটির ১ হাজার ৬০৭ পাড়াকেন্দ্রে কর্মরত ১ হাজার ৫৮৫ জন পাড়াকর্মী ও ১৬১ মাঠ সংগঠক, খাগড়াছড়ির ১ হাজার ৫১৮টি পাড়াকেন্দ্রে কর্মরত ১ হাজার ৫০৪ পাড়াকর্মী ও ১৫১ মাঠ সংগঠক এবং বান্দরবানের ১ হাজার ১৭৫টি পাড়াকেন্দ্রে কর্মরত ১১৫৪ পাড়াকর্মী ও ১১৮ জন মাঠ সংগঠক এ প্রণোদনার অর্থ পেয়েছেন। একজন পাড়াকর্মীকে ২ হাজার টাকা এবং একজন মাঠ সংগঠককে ৩ হাজার টাকা হারে প্রণোদনা দেয়া হয়। মাঠ সংগঠক ও পাড়াকর্মীরা জানান, করোনাকালীন পাড়াকেন্দ্রে কেবল শিক্ষা কার্যক্রম সাময়িক বন্ধ থাকলেও বাকি অন্য সব সেবা কার্যক্রম তাদের চালিয়ে যেতে হয়েছে। করোনাকালেও তারা ঝুঁকি নিয়ে মাঠে কাজ করে যাচ্ছেন। দেশের এ সংকটময় পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষের সেবা করতে পেরে তারাও খুশি।
পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকায় টেকসই সামাজিক সেবা প্রদান প্রকল্পের ব্যবস্থাপক জানে আলম বলেন, করোনার সময়েও আমাদের পাড়াকর্মীরা ঝুঁকি নিয়ে দুর্গম এলাকায় মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করেছেন। আমরা তাদের মাঠ পর্যায়ে কাজ করার জন্য প্রথম থেকেই পর্যাপ্ত সুরক্ষা উপকরণ দিয়েছি। এছাড়া এ সময়টায় পাড়াকর্মী ও মাঠ সংগঠক নিজ নিজ দায়িত্বপ্রাপ্ত এলাকায় খাদ্যসহায়তা কাজে সংযুক্ত রয়েছেন। বিশেষত স্বাস্থ্য সচেতনতা, বারবার হাত ধোয়ার অভ্যাস গড়ে তোলা, করোনার সময়ে প্রসূতি মা, কিশোরী ও শিশুর যত্ন নিতে প্রান্তিক মানুষকে সচেতন করছেন তারা।
পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড চেয়ারম্যান নব বিক্রম কিশোর ত্রিপুরা বণিক বার্তাকে বলেন, করোনার এ সংকটকালেও পার্বত্য চট্টগ্রামের তিন জেলাতেই পুলিশ-প্রশাসনের তত্পরতার বাইরে একমাত্র পাড়াকেন্দ্রের কর্মীরাই কঠোর পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। করোনাকালীন পার্বত্য চট্টগ্রামে টেকসই সামাজিক সেবা প্রকল্পের অধীনে পাড়াকেন্দ্রের শিক্ষা কার্যক্রম সাময়িক বন্ধ থাকলেও স্বাস্থ্য সচেতনতা, পুষ্টিকর খাবার বিতরণসহ নানামুখী সহায়ক ভূমিকা পালন করছে পাড়াকেন্দ্রগুলো। তাই কাজের স্বীকৃতি বা পাড়াকর্মীদের উৎসাহ দিতে এ বিশেষ প্রণোদনা ভাতা দেয়া হয়েছে।