পরিবার নিয়ে বিপাকে কলাপাড়ার ১৮ হাজার কর্মহীন জেলে

সামুদ্রিক মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ, বাধাহীন প্রজননের জন্য ইলিশ রক্ষার জন্য গত ২০ মে থেকে আগামী ২৩ জুলাই পর্যন্ত বঙ্গোপসাগরে ৬৫ দিনের জন্য সব ধরনের মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা অরোপ করেছে মৎস্য বিভাগ। সরকারি নিষেধাজ্ঞা মেনে গভীর সমুদ্রে মাছ শিকারে না গেলেও প্রণোদনা জোটেনি পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার ১৮ হাজার ৩০৫ জেলের ভাগ্যে। এছাড়া নভেল করোনাভাইরাসের কারণে বাইরের কাজও কমে যাওয়ায় পরিবার-পরিজন নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন তারা। বাধ্য হয়ে প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে সাগরে মাছ ধরতে যাচ্ছেন অনেক জেলে।

মৎস্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার ৪০টি জেলেপাড়ায় ২ হাজার ৮০০টি জেলে পরিবারের ২৮ হাজার ৯৪০ জন সদস্য রয়েছেন। এর মধ্যে কার্ডধারী জেলে ১৮ হাজার ৩০৫ জন। নিষেধজ্ঞা চলাকালে কার্ডধারী জেলেদের বিশেষ খাদ্যসহায়তা কর্মসূচির আওতায় ৫৬ কেজি করে চাল দেয়ার আশ্বাস দেয় মৎস্য বিভাগ। কিন্তু নিষেধাজ্ঞার অর্ধেকটা সময় পেরিয়ে গেলেও অধিকাংশ জেলে এখনো পাননি এ খাদ্যসহায়তা।

উপজেলার বিভিন্ন জেলেপল্লী ঘুরে দেখা গেছে, উপজেলা মৎস্য বন্দর আলীপুর, মহীপুর, লালুয়া, ধুলাসার, বাবলতলাঢোস, খাজুরা, গঙ্গামতি, ধানখালী, আন্দামানিক ও রাবনাবাঁধ মোহনা এলাকায় বেশির ভাগ জেলে পরিবার নিয়ে বসবাস করেন। সাগরে মাছ ধরা বন্ধ থাকায় অনেক জেলে নৌকা ডাঙ্গায় তুলে রেখেছেন।

বিভিন্ন ঘাটে জেলেদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বরাদ্দকৃত চাল জেলেরা সময়মতো পাচ্ছেন না। যখন চাল পাচ্ছেন তখন জেলেদের কোনো উপকার হচ্ছে না। ফলে জেলেরা বাধ্য হয়ে নদীতে নামছেন মাছ শিকারে। এমন দুর্দশার সুযোগ নিয়ে কিছু সুবিধাবাদী ব্যবসায়ী জেলেদের উৎসাহিত করছে সাগরে মাছ শিকার করতে। ফলে পরিবারের খাদ্যের জোগান দিতে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে গোপনে মৎস্য শিকারে সমুদ্রে যাচ্ছেন অনেক জেলে। এতে অনেক সময় ধরা পড়ে ভ্রাম্যমাণ আদালতে গুনতে হচ্ছে জরিমানা।

স্থানীয় জেলেদের অভিযোগ, ভারতীয় জেলেরা বাংলাদেশের জলসীমায় অনুপ্রবেশ করে জোরপূর্বকভাবে ইলিশ মাছ শিকার করেন। তারা বাংলাদেশী পতাকা ব্যবহার করে বঙ্গোপসাগরে ইলিশ মাছ শিকার করেন। কিন্তু বাংলাদেশ সরকার ইলিশ রক্ষার জন্য নিষেধাজ্ঞা দিলেও ভারতীয় জেলেরা তা মানছেন না। তারা পশুর, শিবসা, রায়মঙ্গল, মালঞ্চ, কৃঞ্চা, ভাঙ্গারা, নদী এবং সুন্দরবনের নারিকেলবাড়িয়া, মান্দারবাড়ীয়া, আলোরকোল, পেয়ারওয়েবয়া এলাকায় মাছ শিকার করছেন।

গঙ্গামতিপাড়ার জেলে মো. আলি হোসেন বলেন, দীর্ঘদিন ধরে সাগরে মাছ ধরা বন্ধ । খাদ্যসহায়তাও নেই। ফলে পরিবার নিয়ে অমানবিক জীবন যাপন করতে হ্চ্ছে। এমনিতে করোনাভাইরাসের কারণে অনেক কাজকর্ম বন্ধ। নিজেদের কথা না হয় বাদই দিলাম। সন্তানদের মুখের দিকে তাকাতে পারি না। তারা ক্ষুধার জ্বালায় ছটফট করছে। এখন সরকারের পক্ষ থেকে দ্রুত খাদ্যসহায়তা না পেলে আমাদের না খেয়ে মরতে হবে।

আলীপুর-কুয়াকাটা ফিশিং ট্রলার মাঝি সমিতির সভাপতি নুরু মাঝি বলেন, মাছ ধরা ছাড়া অন্য কোনো কাজ জানা নেই জেলেদের। তাছাড়া মাত্র দু-এক মাসের জন্য কাজেও এদের কেউ নিতে চায় না। ফলে বাড়িতে অলস সময় কাটাতে হয়। যাদের সামান্য পুঁজি বা সঞ্চয় থাকে, তা দিয়ে পরিবারের ভরণ-পোষণ করতে পারলেও অধিকাংশ জেলে পরিবার না খেয়ে দিন পার করছে।

আলীপুর-কুয়াকাটা মৎস্য ব্যবসায়ী ও ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি আনসার উদ্দিন মোল্লা বলেন, ইলিশ মৌসুমের শুরুতে ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞার ফলে সাগরে মাছের উৎপাদন বাড়ছে, যার সুফল ভোগ করছেন জেলেসহ ব্যবসায়ীরা। কিন্তু এ সময়ে প্রদেয় প্রণোদনা বাড়ানো উচিত। অবরোধ শুরু হওয়ার কয়েক দিন পরই তা প্রদান করা হলে জেলেদের খুব উপকারে আসে। পাশাপাশি সাগরে নিয়মিত টহল আরো বাড়ানো দরকার।

কলাপাড়া উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মনোজ কুমার সাহা জানান, উপজেলায় নিবন্ধিত ১৮ হাজার ৩০৫ জন জেলে নিষেধাজ্ঞা চলাকালে সরকারি প্রণোদনা পাবেন। শিগগিরই তাদের সরকারি প্রণোদনার চাল বিতরণ করা হবে।

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *