নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে সিলেটের পর্যটন কেন্দ্রে ভিড়

নিষেধাজ্ঞা অমান্য করেই ঈদের ছুটিতে সিলেটের বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্রে ভিড় করেছেন পর্যটকরা। স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা করে পর্যটন কেন্দ্রগুলোয় ঘুরে বেড়িয়েছেন তারা। তবে অন্যান্যবারের ঈদের সময়ের তুলনায় এবার পর্যটক সমাগম অনেক কম ছিল। যদিও নভেল করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকির কথা বিবেচনা করে সিলেটের পর্যটন কেন্দ্রগুলো অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ রাখার ঘোষণা দেয় প্রশাসন। পাশাপাশি পর্যটকদের যাতায়াতেও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। তবে এ নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করেই ঈদের ছুটিতে সিলেটের বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্রে ভিড় করেন অসংখ্য পর্যটক।

গত রোববার ঈদের সরকারি ছুটি শেষ হয়েছে। তবে গতকালও সিলেটের অধিকাংশ পর্যটন কেন্দ্রে ঈদের আমেজ বিরাজ করে। সিলেটের বিভিন্ন চা বাগান, গোয়াইনঘাট উপজেলার বিছনাকান্দি, রাতারগুল ও জাফলংয়ে গিয়ে দেখা গেছে পর্যটকদের ভিড়। বেশির ভাগ পর্যটকদের মুখেই নেই মাস্ক। সামাজিক দূরত্বেরও বালাই নেই। গত মঙ্গলবার জাফলংয়ের জিরো পয়েন্টে নদীতে সাঁতার কাটতে গিয়ে এক পর্যটক নিখোঁজ হন।

করোনা সংক্রমণের পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৮ মার্চ থেকে পর্যায়ক্রমে সিলেটের বিভিন্ন উপজেলার পর্যটন কেন্দ্রগুলোয় নিষেধাজ্ঞা জারি করে উপজেলা প্রশাসন। সেই নিষেধাজ্ঞা এখনো বলবৎ রয়েছে।

গতকাল সিলেটের লাক্কাতুরা চা বাগানে গিয়ে দেখা যায় পর্যটকদের ভিড়। পরিবার নিয়েও এসেছেন অনেকে। বেশির ভাগই এসেছেন বন্ধুদের সঙ্গে।

লাক্কাতুরা চা বাগান এলাকায় বন্ধুদের নিয়ে বেড়াতে গিয়েছিলেন কলেজছাত্র সৈকত ইসলাম। তাদের কারো মুখেই মাস্ক নেই। সামাজিক দূরত্ব বজায় না রেখেই ছবি তুলছেন, গল্প করছেন তারা। সৈকত বলেন, ঘরে থাকতে থাকতে সবকিছু একঘেয়ে হয়ে উঠেছে। তাছাড়া আজকে প্রচুর গরম। তাই এখানে একটু বাতাস খেতে এসেছি। মাস্ক মুখে না থাকলেও পকেটে আছে বলে জানান তিনি।

লাক্কাতুরা চা বাগানে কাজ করেন চা শ্রমিক ইউনিয়নের সিলেট ভ্যালির সভাপতি রাজু গোয়ালা। তিনি বলেন, ঈদের পরদিন থেকেই এখানে প্রচুর পর্যটক ভিড় করছেন। এতে তারা যেমন ঝুঁকিতে পড়ছেন, তেমনি আমাদের বাগানের শ্রমিকদেরও ঝুঁকিতে ফেলছেন। এ মহামারীর সময় চা বাগানে সব ধরনের পর্যটকের প্রবেশ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা উচিত।

সবুজ পাহাড় বেয়ে নেমে এসেছে ঝর্ণা। সেই ঝর্ণার পানিতে চিকচিক করছে অসংখ্য পাথর। নৈসর্গিক এ দৃশ্য দেখা যায় সিলেটের বিছনাকান্দিতে।

এমন গরমের দিনে বিছনাকান্দিতে জলে গা ভেজানোও এক পরম তৃপ্তি। সেই তৃপ্তির স্বাদ পেতে নিষেধাজ্ঞা ভুলে গতকাল বিছনাকান্দিতে হাজির হন অনেক পর্যটক।

কুমিল্লা থেকে পরিবার নিয়ে বিছনাকান্দিতে বেড়াতে এসেছেন অমিত আহমদ। তিনি বলেন, আমরা পরিবারের লোকজন নিয়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনেই বেড়াতে এসেছি। তবে এখানে এত ভিড় হবে বুঝিনি।

সিলেট হোটেল অ্যান্ড গেস্ট হাউজ ওনার্স গ্রুপের সভাপতি সুমাত নূরী চৌধুরী বলেন, গত ঈদের মতো এবারের ঈদেও ফাঁকা অবস্থায় আছে সিলেটের হোটেল-রিসোর্টগুলো। বাইরের পর্যটকরা একেবারেই আসেননি।

স্থানীয় লোকজনই পর্যটন কেন্দ্রগুলোয় ঘুরছেন বলে জানিয়েছেন প্রশাসনের কর্মকর্তারাও।

সিলেটের কোম্পানীগঞ্জের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুমন আচার্য বলেন, পর্যটক যাতায়াতের ক্ষেত্রে আমরা বিশেষ নজরদারি রেখেছি। এজন্য স্থানীয় লোকজন ছাড়া বাইরের মানুষজনের যাতায়াত নেই।

গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. নাজমুস সাকিব বলেন, করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় জনসমাগম এড়াতে গত ৩০ মার্চ জেলা প্রশাসনের নির্দেশনায় পর্যটকদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়। ওই নির্দেশনার কারণে ঈদুল ফিতরে পুরোপুরি পর্যটকশূন্য ছিল জাফলং। এবারের ঈদে পরিস্থিতির কিছু পরিবর্তন হওয়ায় আমরা পর্যটন কেন্দ্রে যাতায়াত সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ না করে নিরুৎসাহিত করছি।

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *