নওফেলের শক্তি বাড়ায় বিচলিত নাছিরপন্থিরা

চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা কমিটির নতুন সভাপতি হয়েছেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। তিনি চট্টগ্রাম-৯ (কোতোয়ালি) আসনের সংসদ সদস্য। চমেক হাসপাতালও এ আসনেই অবস্থিত। এর আগে এ পদে ছিলেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) সদ্য সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন। গত ৫ আগস্ট মেয়র হিসেবে তার মেয়াদ শেষ হলে হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতির দায়িত্ব থেকেও আপনাআপনি বাদ পড়েন।

তবে নতুন সভাপতিকে কেন্দ্র করে চমেক ছাত্রলীগের রাজনীতিতে ইতোমধ্যে সংঘাতের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। গত তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে ছাত্রলীগের আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারীরা চমেকের রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করে আসছেন। চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) ও হাসপাতাল এলাকায় নওফেলের শক্তি বৃদ্ধিতে বিচলিত হয়ে পড়েছেন আ জ ম নাছিরের অনুসারীরা।

এর কারণ হলো গত দুই মাসে মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল ও আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারীদের মধ্যে চমেক হাসপাতালের আশপাশে একাধিকবার সংঘর্ষ হয়েছে। এসব ঘটনায় থানায় মামলাও হয়েছে দুটি। গত ১২ জুলাই চমেক হাসপাতালের নিচে মারামারির ঘটনায় নওফেলে অনুসারী খোরশেদুল আলম বাদী হয়ে ১১ চিকিৎসকসহ ৩৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। আর গত ১৪ আগস্ট ডা. ওসমান ফরহাদ মামলা করেন নওফেলের অনুসারীদের বিরুদ্ধে। পুলিশ ওইদিন ১১ জনকে গ্রেপ্তারও করে। তবে আদালত থেকে তারা জামিনে বেরিয়ে আসেন।
[১] চট্টগ্রামে মারুফের রহস্যজনক মৃত্যুর ঘটনায় মহানগর বিএনপির উদ্বেগ প্রকাশ ≣ [১] রাজশাহীতে করোনায় পুলিশের এসআইয়ের মৃত্যু ≣ ইভিএমের বোতাম কে, কই টিপ দিয়ে বসে, তারও তো আসলে গ্যারান্টি ছিলো না

চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের রাজনীতি দীর্ঘদিন ধরে প্রধান দুই ধারায় বিভক্ত হয়ে আছে। এক অংশের নেতৃত্বে ছিলেন সাবেক মেয়র ও চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি প্রয়াত এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী, অপর অংশে আ জ ম নাছির উদ্দীন। ২০১৪ সালে আ জ ম নাছির প্রথমবারের মতো চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হন। পরে ২০১৫ সালে নির্বাচিত হন মেয়র। তবে মেয়র কিংবা দলের সাধারণ সম্পাদক না থাকা সত্ত্বেও নিজের একটি বড় অনুসারী তিনি নগর আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সৃষ্টি করতে সক্ষম হন। এই অংশ দীর্ঘদিন ধরে চট্টগ্রাম সরকারি কমার্স কলেজ, চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ, চট্টগ্রাম পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট ও চট্টগ্রাম আইন কলেজের রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করে।

অপরদিকে এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর অনুসারীদের নিয়ন্ত্রণে ছিল সরকারি সিটি কলেজ, ইসলামিয়া কলেজ ও ওমরগণি এমইএস কলেজ। ২০১৬ সালে মহিউদ্দিন চৌধুরীর অনুসারীরা ছাত্রশিবিরের কাছ থেকে চট্টগ্রাম কলেজ ও হাজী মুহম্মদ মহসিন কলেজের নিয়ন্ত্রণও নিয়ে নেন।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, গত ২০ আগস্ট স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে একটি প্রজ্ঞাপন জারি হয়। উপ-সচিব ড. বিলকিস বেগম স্বাক্ষরিত ওই প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলকে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি হিসেবে নির্দেশক্রমে মনোনয়ন প্রদান করা হলো।

এ প্রসঙ্গে শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেন, এটি স্থানীয় সংসদ সদস্যের জন্যই নির্ধারিত একটি পদ। এ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু এ দায়িত্ব দিয়েছিলেন সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনকে। মেয়র পদে তার মেয়াদ শেষ হওয়ায় এখন এ দায়িত্ব আমার ওপর বর্তেছে।

আ জ ম নাছির উদ্দীনও একই সুরে কথা বলেন। তিনি বলেন, মেয়রের দায়িত্ব শেষে আমি আর এ দায়িত্বে নেই। নিয়ম অনুযায়ী স্থানীয় সংসদ সদস্য, মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, উপমন্ত্রী কিংবা মেয়র এ দায়িত্বে থাকবেন। তিনি বলেন, চমেক হাসপাতালের সেবা নিয়ে সুনাম আছে। প্রত্যাশা থাকবে আগামীতেও তা অক্ষুণ্ন থাকবে এবং এ পদ কোনোভাবেই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হবে না।

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *