বৈশ্বিক মহামারী করোনাভাইরাসের প্রভাবে ৮৬ শতাংশ মানুষ দৈনন্দিন ব্যয় মেটাতে পারছে না। গত বছরের এপ্রিল ও মে মাসে ৬২ শতাংশ মানুষ বেকার হয়ে পড়ে। কভিডের কারণে এখন পর্যন্ত ৮৫ শতাংশ মানুষ অন্তত এক মাসের জন্য হলেও চাকরি হারিয়েছে। চাকরি ফিরে পেয়েছে এমন ৪০ শতাংশ মানুষের আর্থিক অবস্থা এখনো কভিড-পূর্বের মতো স্বাভাবিক হয়ে ওঠেনি। এছাড়া কভিডের প্রভাবে প্রত্যেকের আয় কমেছে গড়ে ১২ শতাংশ। গতকাল সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) উদোগে আয়োজিত ‘কভিডকালে কাজ ফিরে পেলেও আয় বাড়েনি: মধ্যমেয়াদি এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রয়োজন’ শীর্ষক ওয়েবিনারে এসব তথ্য উঠে আসে।
ওয়েবিনারে বক্তারা বলেন, করোনাভাইরাসের প্রভাবের গভীরতা এখনো পুরোপুরি বোঝা যাচ্ছে না। তবে বর্তমান শ্রমবাজার গভীরভাবে পর্যক্ষেণ করে একটি ধারণা নেয়া জরুরি। করোনার প্রভাব যাতে ভয়ংকর হতে না পারে এজন্য এখন থেকেই বেসরকারি খাতকে সুদূরপ্রসারী কার্যকরী পরিকল্পনা নিয়ে এগোতে হবে। পাশাপাশি দেশীয় ও বিদেশী দুই উৎস থেকেই বেসরকারি বিনিয়োগকে আকৃষ্ট করার জন্য অবকাঠামোগত বিনিয়োগ, দক্ষতা বিকাশ ও শ্রমবাজারকে শক্তিশালী করার বিষয়ে নজর দিতে হবে। এছাড়া ব্যবসার পদ্ধতিতেও আধুনিক ও প্রযুক্তিগত উত্কর্ষ অর্জন করতে হবে।
বক্তারা বলেন, কভিডের ক্ষতি কাটাতে স্বল্প ও মধ্যমেয়াদি পরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হবে। এক্ষেত্রে যারা চরম দ্রারিদ্র্যের মুখোমুখি হয়ে পড়েছে, অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সবার আগে তাদের পাশে দাঁড়াতে হবে। এদের জরুরি ভিত্তিতে আর্থিক সহযোগিতা করতে হবে, যেন করোনার আঘাত ঠেলে তারা ঘুরে দাঁড়াতে পারে। এজন্য গত বছরের অভিজ্ঞতা কাজে লাগানোর পরামর্শ দিয়ে বক্তারা বলেন, গত বছর প্রণোদনার ক্ষেত্রে যাদের অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে এবারো তেমনটাই করা উচিত। এক্ষেত্রে কৃষক ও নিম্ন আয়ের মানুষকে আরো বেশি পরিমাণে ঋণ দেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। এক্ষেত্রে এনজিও ও ক্ষুদ্র ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো এগিয়ে এলে আসন্ন বেকারত্ব ও শ্রমবাজারের কঠিন পরিস্থিতি মোকাবেলা করা সম্ভব হবে।
ওয়েবিনারে অংশ নেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তপন চৌধুরী, সিপিডির চেয়ারম্যান ও অর্থনীতিবিদ ড. অধ্যাপক রেহমান সোবহান, অর্থনীতিবিদ রিজওয়ানুল ইসলাম, ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সভাপতি রিজওয়ান রহমান, বাংলাদেশ এমপ্লয়ার্স ফেডারেশনের (বিইএফ) সভাপতি কামরান টি রহমান, ক্ল্যাসিক ফ্যাশন কনসেপ্ট লিমিটেডের পরিচালক মো. শহিদুল্লাহ আজিম, সোস্যাল লেবার ফ্রন্টের সভাপতি রাজেকুজ্জামান রতন, সিপিডির ডিস্টিংগুইশ ফেলো অধ্যাপক মুস্তাফিজুর রহমান, সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন, অক্সফাম ইন বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ড. দিপন কুমার দত্ত প্রমুখ। ওয়েবিনারে গবেষণাপত্র উপস্থাপন করেন সিপিডির সিনিয়র গবেষণা ফেলো ড. তৌফিকুল ইসলাম খান।