দেশি জাতের মূল্যবান চেরি টমেটোর ৪ নতুন জাত উদ্ভাবন

দেশি জাতের মূল্যবান চেরি টমেটোর চারটি নতুন জাত উদ্ভাবন করেছে গাজীপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৌলিতত্ত্ব ও উদ্ভিদ প্রজনন বিভাগ। জাতগুলো হলো- বিউ চেরি টমেটো-২, বিউ চেরি টমেটো-৩, বিউ চেরি টমেটো-৪ ও বিউ চেরি টমেটো-৫।

গাজীপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৌলিতত্ত্ব ও উদ্ভিদ প্রজনন বিভাগের অধ্যাপক ও পরিচালক (গবেষণা) প্রফেসর ড. একেএম আমিনুল ইসলাম সম্প্রতি এসব জাত উদ্ভাবন করেন।

আমিনুল ইসলাম জানান, দেশের কৃষক ও ভোক্তার চাহিদায় দেশি টমেটোর পরে নতুন করে জনপ্রিয় হচ্ছে চেরি টমেটো। উদ্ভাবিত চেরি টমেটোর জাত চারটি এ মাসে জাতীয় বীজ বোর্ড বাণিজ্যিকভাবে কৃষক পর্যায়ে চাষাবাদের জন্য অনুমোদন পায়। দেশে ভোক্তা ও চাষি পর্যায়ে চেরি টমেটোর চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। এদের বেশির ভাগই বিদেশি কোনো জাতকে দেশি আবহাওয়ার উপযোগী করে চাষ করা হচ্ছে।

এই জাতগুলো দেশে প্রথম বিদেশি জাতের চেরি টমেটোর সঙ্গে দেশি টমেটোর শংকরায়ন ও পরবর্তীসময়ে পিওর লাইন নির্বাচনের মাধ্যমে প্রাপ্ত একেবারেই নতুন জাত হিসেবে উদ্ভাবন করা হয়েছে। দেশীয় স্বাদ অক্ষুণ্ন রেখে চেরি সাইজ আনতে অপেক্ষা করতে হয়েছে ৭-৮ বছর। বিউ চেরি টমেটোর জাতগুলো দেশি আবহাওয়ায় কোনো প্রকার অতিরিক্ত যত্নবিহীনভাবে দেশি টমেটোর মতোই শীতকালে চাষযোগ্য, উচ্চফলনশীল, আকর্ষণীয় আকৃতি, বর্ণ, খেতে অত্যন্ত সুস্বাদু, মিষ্টি, কম বীজযুক্ত বা প্রায় বীজবিহীন এবং পুষ্টিকর।

গাছ প্রতিফলন আড়াই থেকে সাড়ে তিন কেজি। এছাড়াও সুপারশপগুলোতে যে বিদেশি বীজবিহীন বা কম বীজযুক্ত চেরি টমেটো পাওয়া যায় তার বেশির ভাগই প্রায় ১ হাজার থেকে ১ হাজার ৩শ টাকা কেজি পর্যন্ত বিক্রি হয়। সেক্ষেত্রে এই জাতগুলো হতে পারে বিদেশি জাতগুলোর পরিপূরক। তাছাড়া যেকোনো সবজির মধ্যে রান্নার পর টমেটোর এন্টিঅক্সিডেন্ট গুণাবলী সবচেয়ে বেশি অক্ষুণ্ন থাকে।

তিনি জানান, নতুন উদ্ভাবিত জাতগুলো রান্না ছাড়াই পাকা অবস্থায় আঙুরের মতো খাওয়া যায়। এদের এন্টিঅক্সিডেন্ট গুণাবলী বেশি থাকায় মানবদেহে ক্যানসার প্রতিরোধে সহায়তা করবে বলে মনে করা হচ্ছে। এছাড়া টমেটোতে বেশি পরিমাণে লাইকোপিন থাকায় ত্বকের যত্নে চেরি টমেটো খুবই উপকারি। চেরি টমেটো গাছের ক্যানোপি কম হওয়ায় ছাদ বাগানেও এ জাতগুলো সহজেই উৎপাদন করা যাবে।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. গিয়াসউদ্দীন মিয়া জানান, সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেকগুলো জাতই এসেছে কৌলিতত্ত্ব ও উদ্ভিদ প্রজনন বিভাগের এই অধ্যাপকের হাত ধরে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ধারাবাহিক জাত উদ্ভাবনে তিনি এবার উচ্চমূল্যের চেরি টমেটোর চারটি জাত যোগ করলেন। সব টমেটোর চাষ সারা দেশে ছড়িয়ে পড়লে মানুষ উপকৃত হবে। জাতগুলোর আকর্ষণীয় বৈশিষ্ট্যের জন্য এরা বাণিজ্যিক উৎপাদন কিংবা ছাদ বাগান, উভয়ক্ষত্রেই সমান জনপ্রিয়তা পাবে। দেশি আবহাওয়া উপযোগী করে উদ্ভাবিত উচ্চফলনশীল এ জাতগুলো দেশের কৃষকদের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে পারলে কৃষকরা চেরি টমেটো চাষ করে বেশি লাভবান হবে।

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *