দৃষ্টি সংযত রাখলে বান্দা যে উপকারিতা পাবেন

শরীরের সব অঙ্গপ্রত্যঙ্গই আল্লাহ তায়ালার অনেক বড় নিয়ামত আমাদের জন্য। একেক কাজের জন্য একেকটির প্রয়োজন। তবে গুনাহ থেকে সব অঙ্গই হেফাজত করা মুমিন বান্দার কর্তব্য। চোখ আল্লাহ তায়ালার অনেক বড় এক নিয়ামত। এই নিয়ামতের অপব্যবহার হলে উভয়জগতে আছে বহু ক্ষতি। কুদৃষ্টি মানবহৃদয়ে প্রবৃত্তির বীজ বপন করে। চোখের যত্রতত্র ব্যবহার গুনাহের দ্বার উন্মোচিত করে দেয়। চোখকে বলা হয় অন্তরের আয়না। চোখ সংযত থাকলে অন্তর সংযত থাকবে। ডেইলি বাংলাদেশ

আসুন জেনে নেয়া যাক দৃষ্টি সংযত রাখলে বান্দা কী কী উপকারিতা পাবেন-

১. মহান আল্লাহ তায়ালার আদেশ পালন। এর মধ্যে আছে মুমিনের সফলতা ও ব্যর্থতা। আল্লাহ তায়ালা তার প্রিয় নবীর মাধ্যমে নারী-পুরুষ সবাইকে আদেশ করেছেন, ‘মুমিনদের বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টি অবনত রাখে এবং তাদের যৌনাঙ্গের হেফাজত করে। ঈমানদার নারীদের বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে অবনত রাখে এবং তাদের যৌনাঙ্গের হেফাজত করে।’ (সুরা নূর, আয়াত : ৩০-৩১ )
চুলের আঠালো ভাব দূর করবেন যেভাবে ≣ অভিনেত্রী সন্ধ্যা রায় হাসপাতালে ভর্তি ≣ সুখী পরিবার গঠনে রাসূল (সা.) এর শিক্ষা

২. অন্তরকে পবিত্র করে, চোখের হেফাজতের মাধ্যমে আত্মা পরিশুদ্ধ হয়। যে ব্যক্তি অশ্লীল ও হারাম জিনিস থেকে নিজের দৃষ্টিকে অবনত রাখবে, আল্লাহ তার অন্তর পরিশুদ্ধ করে দেবেন। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘এতে তাদের জন্য খুব পবিত্রতা আছে। নিশ্চয়ই তারা যা করে সে সম্পর্কে আল্লাহ ভালোভাবেই অবগত।’ (সুরা নূর, আয়াত : ৩০ )

৩. ক্ষমা পাওয়ার মাধ্যম। দৃষ্টি অবনত রাখার দ্বারা আল্লাহ তায়ালা বান্দাকে গুনাহমুক্ত করে দেন। ফুজাইল ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, আমি আরাফার দিন রাসূলের পেছনে ছিলাম। সেখানে এক যুবক নারীদের দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করছিল। রাসূল (সা.) তখন তার চেহারা ঘুরিয়ে দিলেন এবং বলেন, হে ছেলে, এটি এমন এক দিন, এই দিনে যারা দৃষ্টি অবনত রাখবে, মুখ এবং লজ্জাস্থান হেফাজত করবে, আল্লাহ তায়ালা তাদের ক্ষমা করে দেবেন। (মুসনাদে আহমদ, হাদিস : ৩০৪২)

৪. দৃষ্টি অবনত রাখার দ্বারা জান্নাতে যাওয়ার পথ সহজ হয়ে যায়। উবাদাহ ইবনুস সামিত (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেছেন, তোমরা তোমাদের পক্ষ থেকে আমাকে ছয়টি জামানত দাও, আমি তোমাদের জন্য জান্নাতের জামিন হবো, ১. যখন তোমরা কথা বলবে, সত্য বলবে, ২. যখন প্রতিশ্রুতি দেবে, প্রতিশ্রুতি পালন করবে, ৩. যখন তোমাদের কাছে গচ্ছিত রাখা হবে, তা পরিশোধ করবে, ৪. নিজের লজ্জাস্থান হেফাজত করবে, ৫. নিজ দৃষ্টি অবনমিত রাখবে, ৬. নিজের দুই হাত আয়ত্তে রাখবে। (আল-মুজামুল কাবির, হাদিস : ৮০১৮)

৫. দৃষ্টি অবনতকারী ব্যক্তিকে আল্লাহ তায়ালা এর চেয়ে (যে জিনিস দেখতে সে খুব আগ্রহী ছিল) উত্তম জিনিস দান করবেন। হাদিসে এসেছে, ‘যখন তুমি আল্লাহর জন্য কোনো জিনিস কিছু বিসর্জন দেবে আল্লাহ তায়ালা এর চাইতে উত্তম বিনিময় দান করবেন। (মুসনাদে আহমদ, হাদিস : ২৩৭৭৬)

৬. দৃষ্টি অবনতকারী ব্যক্তি কিয়ামতের দিন ভয়াবহ অবস্থায় ক্রন্দন থেকে নিষ্কৃতি লাভ করবে। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা.) বলেছেন, কিয়ামতের দিন প্রতিটি চোখ ক্রন্দন করবে, একমাত্র ওই চোখ যে নাকি হারাম থেকে নিজের দৃষ্টিকে হেফাজত রেখেছে। যে চোখ আল্লাহর রাস্তায় পাহারা দিয়েছে এবং যে চোখ আল্লাহর ভয়ে কেঁদেছে। (দারিমি : ২/২৬৭)

৭. দৃষ্টি সংযতকারী ব্যক্তিকে আল্লাহ তায়ালা কিয়ামতের দিন জান্নাতের হুর দান করবেন। আবু দারদা (রা.) বলেন, যে ব্যক্তি হারাম জিনিস থেকে নিজের দৃষ্টিকে হেফাজত করল, আল্লাহ তায়ালা তাকে কিয়ামতের দিন সে যে হুর চাইবে তাকে তার বন্ধনে আবদ্ধ করে দেবেন। আর যে অন্যের ঘরে উঁকি দিল কিয়ামতের দিন তাকে অন্ধ অবস্থায় হাশর করানো হবে। (রিসালাতুল মুসতারসিদিন : ১১৯)

৮. দৃষ্টি অবনতকারী ব্যক্তির অন্তর দুঃখ-কষ্ট ও দুশ্চিন্তামুক্ত থাকে এবং অন্তরে অন্য রকম এক প্রশান্তি লাভ করে। কারণ সে চিরশত্রু প্রবৃত্তির সঙ্গে প্রতিনিয়ত যুদ্ধ করে তার দৃষ্টিকে হেফাজত রাখে। আল্লাহ তায়ালা এর কারণে তার অন্তরকে আনন্দিত করে দেন। এ কারণে অনেকেই বলেছেন, গুনাহে লিপ্ত হওয়ার আনন্দ থেকে গুনাহমুক্তির আনন্দ অনেক বেশি সুখকর। (রওজাতুল মুহিব্বিন : ১/৯৭)

আবু উমামা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা.) বলেছেন, যার দৃষ্টি কোনো স্ত্রীলোকের সৌন্দর্যের প্রতি প্রথমে পতিত হয়, অতঃপর দৃষ্টি সরিয়ে নেয়, আল্লাহ তায়ালা এর বিনিময়ে তাকে এমন ইবাদত দান করবেন, যার মজা বা স্বাদ তার অন্তরেই উপভোগ করবে। (মুসনাদে আহমদ, হাদিস : ২২২৭৮)

৯. দৃষ্টি সংযমকারী ব্যক্তির জন্য আল্লাহ তায়ালা এলেমের পথকে উন্মোচিত করে দেন। এর উপায়-উপকরণ সহজ করে দেন। এবং তাকে হিকমাহ দান করেন। আবুল হুসাইন ওয়াররাক (রহ.) বলেন, যে ব্যক্তি হারাম থেকে দৃষ্টিকে অবনত রাখবে আল্লাহ তায়ালা তাকে এমন হিকমাহ দান করবেন, যার দ্বারা সে এবং সঠিক পথ খুঁজে পাবে। (জাম্মুল হাওয়া, ১৪১)

১০. দৃষ্টি অবনতকারী ব্যক্তিকে আল্লাহ তায়ালা দূরদর্শিতা ও অন্তর্দৃষ্টি দান করবেন। এর দ্বারা সে সত্য-মিথ্যা ও ভালো-মন্দের মাঝে পার্থক্য করতে পারবে। লুত (আ.)-এর উম্মতের ঘটনা বর্ণনা করে আল্লাহ তায়ালা দূরদর্শী লোকদের প্রশংসা করে বলেছেন, ‘এতে অবশ্যই আল্লাহ তাআলার নিদর্শন রয়েছে সূক্ষ্মদর্শী চিন্তাশীল ব্যক্তিদের জন্য।’ (সুরা হিজর, আয়াত : ৭৫) যে ব্যক্তি তার দৃষ্টিকে অবনত রাখবে আল্লাহ তাকে বুদ্ধিমত্তা ও দূরদৃষ্টি দান করবেন। (ইবনে কাসির : ৬/৪৩)

মহান আল্লাহ আমাদের আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *