দুই লেন বন্ধ, ভারী গাড়ি চলবে না

সদরঘাটের কাছে বুড়িগঙ্গায় ডুবে যাওয়া লঞ্চ উদ্ধার করতে এসে উদ্ধারকারী জাহাজের ধাক্কায় মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী বুড়িগঙ্গা-১ সেতু। স্থানীয়ভাবে এটি পোস্তগোলা সেতু হিসেবে পরিচিত। গত সোমবার দুপুরে সেতুর গার্ডারে আঘাত করে উদ্ধারকারী জাহাজ প্রত্যয়। ঝুঁকি বিবেচনায় নিয়ে সেদিন সন্ধ্যা থেকে সেতুর চার লেনের মধ্যে একটি লেনে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়। গতকাল ঘটনাস্থল পরিদর্শনে এসে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের (সওজ) একটি বিশেষজ্ঞ দল পোস্তগোলা সেতুর আরেকটি লেনে যান চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে। নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে ভারী গাড়ি চলাচলে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সোমবার সকালে সদরঘাটে ভেড়ার আগ মুহূর্তে চাঁদপুরগামী একটি লঞ্চের ধাক্কায় অর্ধশত যাত্রী নিয়ে ডুবে যায় মর্নিং বার্ড নামে মুন্সীগঞ্জ থেকে ছেড়ে আসা একটি লঞ্চ। এ ঘটনায় গতকাল পর্যন্ত ৩৩ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। উদ্ধার অভিযানে অংশ নিতে নারায়ণগঞ্জ থেকে সদরঘাটের দিকে রওনা হয় উদ্ধারকারী জাহাজ প্রত্যয়। কিন্তু জাহাজটির উচ্চতা পোস্তগোলা সেতুর চেয়ে বেশি হওয়ায় সেটি সেতু পার হতে পারেনি। পার হওয়ার চেষ্টা করতে গিয়ে সেতুর একটি গার্ডারে আঘাত করে প্রত্যয়। এতে গার্ডারটির চার ফুটের বেশি অংশে ফাটল ধরে যায়।

সওজ সূত্র জানায়, যে গার্ডার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, সেটি সেতুর মূল কাঠামোর জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাদের আশঙ্কা, সেতুর ওপর দিয়ে ভারী যানবাহন চললে মারাত্মক দুর্ঘটনার ঝুঁকি তৈরি হতে পারে। এজন্য সোমবার সন্ধ্যা থেকেই সেতুর ঢাকা থেকে মাওয়ামুখী একটি লেনে গাড়ি চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়।

গতকাল সেতুর ক্ষতিগ্রস্ত অংশ পরিদর্শনে আসেন সওজ প্রকৌশলীদের একটি বিশেষজ্ঞ দল। তারা ক্ষতিগ্রস্ত স্থান পরিদর্শন করে সেতুর আরেকটি লেনে (মাওয়া থেকে ঢাকামুখী) যান চলাচল বন্ধ করে দেন। পাশাপাশি সেতুর ওপর দিয়ে ভারী গাড়ি না চালানোর পরামর্শ দিয়েছেন।

জাহাজের ধাক্কায় ক্ষতিগ্রস্ত পোস্তগোলা সেতুর সর্বশেষ অবস্থা সম্পর্কে সওজের ঢাকা জোনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী সবুজ উদ্দিন খান বণিক বার্তাকে বলেন, বিশেষজ্ঞ দলটি দুটি বিষয়কে প্রাধান্য দিচ্ছে। বর্তমানে যেহেতু যান চলাচল বন্ধ আছে, সেহেতু সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে যান চলাচল স্বাভাবিক করার। চলাচল শুরু হলে সব ধরনের গাড়ি চালানো যাবে কিনা, সে বিষয়টিও ক্ষতিয়ে দেখা হচ্ছে। পরামর্শক দল সিদ্ধান্ত দিয়েছে, চারটি লেনের মধ্যে দুটি লেন বন্ধ রাখা হবে। পাশাপাশি কোনো ধরনের ভারী যানবাহন অ্যালাউ করা হবে না। সব ধরনের ভারী যানবাহনকে বাবুবাজার সেতু ব্যবহারের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। এর বাইরে সেতুটি দ্রুততম সময়ের মধ্যে মেরামত করার ওপর জোর দিচ্ছে বিশেষজ্ঞ দল।

কবে নাগাদ সেতুতে যান চলাচল স্বাভাবিক হতে পারে এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, এটা আসলে নির্দিষ্ট করে বলা যাবে না। আগামীকালও (আজ বুধবার) বিশেষজ্ঞরা সেতুর ক্ষতিগ্রস্ত অংশ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করবেন। সে অনুযায়ী মেরামত করা হবে। আমরা যতটুকু দেখেছি, তাতে মনে হয়েছে সেতুটি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *