দুই দশকে রাজস্ব আয় ১২০ কোটি টাকা

গত দুই দশকে চট্টগ্রামের দুই বন বিভাগের রাজস্ব আয় হয়েছে প্রায় ১২০ কোটি টাকা। এর মধ্যে চট্টগ্রাম উত্তরের ৭৪ কোটি ৭১ লাখ ও দক্ষিণ বন বিভাগের রাজস্ব আয় হয়েছে ৪৪ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। বিভিন্ন সময়ে পাচার হওয়া কাঠ উদ্ধার, ইজারা, চারা বিক্রি, সামাজিক বনায়নের গাছ এবং অন্যান্য বনজ দ্রব্য নিলামে বিক্রি করে এ রাজস্ব আয় করেছে তারা। তবে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা দাবি করছেন, লোকবল সংকট, পূর্ণাঙ্গ নকশা না থাকায় বিভিন্নভাবে রাজস্ব আদায় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে বন বিভাগ।

বন বিভাগসংশ্লিষ্টরা জানান, সময়ের সঙ্গে সরকারের বিভিন্ন বিভাগ এবং দপ্তরগুলো পরিবর্তিত হলেও বন বিভাগ আগের কাঠামোতেই রয়েছে। পর্যাপ্ত লোকবল না থাকার কারণে এ বন বিভাগের দখল যেমন একদিকে ক্রমে বাড়ছে, অন্যদিক কাঠ পাচারের ঘটনা এখন নিয়মিত। তাছাড়া বন আইনের দুর্বলতার কারণে এ দখল কিংবা পাচার প্রতিরোধ করা এখন বেশ কষ্টকর হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ কারণে বড় ধরনের রাজস্ব আদায় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে বন বিভাগ। সেজন্য বন বিভাগকে যুগোপযোগী করার দাবি জানান তারা।

চট্টগ্রাম উত্তর ও দক্ষিণ বন বিভাগের রাজস্ব আয়ের নথিপত্র বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ২০০১-০২ অর্থবছর থেকে ২০১৯-২০ অর্থবছর পর্যন্ত এ দুই বন বিভাগ জব্দকৃত কাঠ, বনজ দ্রব্য, চারা বিক্রিসহ বিভিন্ন উৎস থেকে রাজস্ব আদায় করেছে ১১৯ কোটি ১০ লাখ ৭ হাজার ২০১ টাকা। এর মধ্যে চট্টগ্রাম উত্তর বিভাগের রাজস্ব আয় ৭৪ কোটি ৭১ লাখ ৯০ হাজার টাকা ও দক্ষিণ বন বিভাগের আয় ৪৪ কোটি ৩৮ লাখ ১৭ হাজার ২০১ টাকা।

চট্টগ্রাম উত্তর বন বিভাগের তথ্যমতে, গত দুই দশকে চট্টগ্রাম বন বিভাগগুলোর মধ্যে চট্টগ্রাম উত্তর বন বিভাগ সর্বোচ্চ পরিমাণে রাজস্ব আদায় করেছে বিভিন্ন উৎস থেকে। সব মিলিয়ে প্রায় ৭৪ কোটি ৭২ লাখ টাকা রাজস্ব আদায় করেছে প্রতিষ্ঠানটি। এদিকে এ রাজস্ব আদায়ে চট্টগ্রাম উত্তর বন বিভাগ চোরাই পথে নিয়ে যাওয়া প্রায় ৪ লাখ ৭৫ হাজার ঘনফুট কাঠ, ৩ লাখ ১০ হাজার ৪৩৬ ঘনফুট জ্বালানি এবং প্রায় ৪০ হাজার পিস বল্লী পাচারের সময় জব্দ করে নিলামে বিক্রি করেছে। এছাড়া এ বন বিভাগের বিভিন্ন প্রকল্প ইজারা দেয়া আছে। সেখান থেকেও রাজস্ব আয় আসে বলে জানিয়েছেন বন বিভাগের কর্মকর্তারা।

অন্যদিকে চট্টগ্রাম দক্ষিণ বন বিভাগের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ২০০১-০২ অর্থবছর থেকে সমাপ্ত ২০১৯-২০ অর্থবছর পর্যন্ত বিভিন্ন উৎস থেকে রাজস্ব আয় হয়েছে সাড়ে ৪৪ কোটি টাকা। এ সময়ে কাঠ জব্দ করা হয়েছে ৩ লাখ ২ হাজার ৭০২ ঘনফুট, জ্বালানি কাঠ জব্দ করা হয়েছে ১ লাখ ২২ হাজার ৭৩৪টি এবং বল্লী জব্দ করা হয়েছে ৭২ হাজার ৯১৪টি। এসব বনের কাঠ উদ্ধারে প্রায় ৭ হাজার ২০৬টি মামলা দায়ের করা হয়েছে চট্টগ্রাম দক্ষিণ বন বিভাগের পক্ষ থেকে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চট্টগ্রাম অঞ্চলে গড়ে ওঠা ১ হাজার ২০০টি করাতকলের মধ্যে প্রায় ৭০০টিই অবৈধ। এ অবৈধ করাতকলের বেশির ভাগই কাঠ পাচার ব্যবসায় জড়িত। চট্টগ্রামের মধ্যে সব থেকে বেশি করাতকল আছে চট্টগ্রাম উত্তর বন বিভাগের আওতায়। এ বিভাগের ৪৯৬টি করাতকলের মধ্যে ১৯৯টি বৈধ। বাকি ৩০০টি অবৈধ। অন্যদিকে চট্টগ্রাম দক্ষিণ বন বিভাগের তালিকাভুক্ত করাতকলের সংখ্যা ৪০২টি, যার মধ্যে বৈধ ২২০টি এবং অবৈধ ১৩৩টি। এসব অবৈধ করাতকল কাঠ পাচারে জড়িত বলে জানান রেঞ্জ কর্মকর্তারা।

বন বিভাগের রেঞ্জ কর্মকর্তারা জানান, ট্রান্সপোর্ট পারমিশনের (টিপি) নানা জটিলতার সুযোগ নিয়ে রক্ষিত ও সংরক্ষিত বনভূমি থেকে কাঠের পাচার বাড়ছে। আবার বেশির ভাগ করাতকল বন বিভাগের সীমানাঘেঁষেই স্থাপন করা হয়েছে। ফলে বন বিভাগের লোকবল সংকট এবং নিরাপত্তা সরঞ্জামের অপ্রতুলতার কারণে কাঠ পাচারকারীদের নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়ে ওঠে না। পূর্ণাঙ্গ সমস্যার সমাধান করা গেলে কাঠ পাচারকারীদের প্রতিরোধ করা সম্ভব হতো। তাছাড়া বন বিভাগের কর্মীদের ঝুঁকি ভাতা না থাকায় কর্মীদের ঝুঁকিপূর্ণ কাজের ক্ষেত্রে উৎসাহ অনেক কম বলে জানান তারা।

এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রামের বন সংরক্ষক মোহাম্মদ আবদুল আউয়াল সরকার বণিক বার্তাকে বলেন, রক্ষিত এবং সংরক্ষিত বনের পাচার হয়ে যাওয়া বনজ দ্রব্য উদ্ধারে সদা তত্পর বন বিভাগ। আমাদের রেঞ্জ কর্মকর্তারা খুবই সতর্ক অবস্থানে আছেন। এ কারণে সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন রেঞ্জ থেকে পাচার হয়ে যাওয়া কাঠ জব্দের পরিমাণ বেড়েছে। এর বিপরীতে বন বিভাগের রাজস্ব আদায় বাড়ছে। তাছাড়া বিভিন্ন সময়ে বন বিভাগের গেট ইজারা, সামাজিক বনায়নের গাছ বিক্রি থেকে নির্ধারিত পরিমাণ অর্থ আদায় হয় বন বিভাগের। এ রাজস্ব আয় আমরা সরাসরি সরকারি কোষাগারে জমা দিয়ে থাকি। বন বিভাগের লোকবল সংকটের সমস্যার সমাধান হলে রাজস্ব আদায় আরো বেশি হবে বলে আশাবাদ প্রকাশ করেন এ কর্মকর্তা।

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *