দলগত ব্যর্থতাকেই দায়ী মনে করেন মুমিনুল

জয়হীন থেকেই শেষ হলো বাংলাদেশ দলের টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ মিশন। ২০১৯ এ ভারতের বিপক্ষে সিরিজ দিয়ে শুরু হয়েছিল এই চ্যালেঞ্জ। সেই সিরিজে দুই ম্যাচ হেরে হোয়াইটওয়াশ দিয়ে শুরু। এরপর পাকিস্তান, ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে তিন ম্যাচের সবগুলোতেই হার। তাই শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে তাদের মাটিতে খুব বেশি আশা ছিল না টাইগারদের কাছে। ক্যান্ডি টেস্ট সিরিজের প্রথম ম্যাচেই ঘুরে দাঁড়ায় দল। ড্র দিয়ে শুরু করে সিরিজ। সেই সঙ্গে থামে দেশের বাইরে টাইগারদের টানা ৯ হারের মিছিল।
ভক্ত-সমর্থকদের আশা ছিল শেষ ম্যাচ জিতে সিরিজটা নিজেদের করে নেবে বাংলাদেশ দল। কিন্তু তা হয়নি, ২০৯ রানে হেরে সিরিজ খুইয়েছে দল। প্রশ্ন উঠেছে ফের তাদের টেস্ট খেলার যোগ্যতা নিয়ে। বিশেষ করে দলের ব্যাটিং ব্যর্থতা বারবারই আঙুল তুলছে টাইগারদের টেস্ট ভবিষ্যত নিয়ে। তবে দলের অধিনায়ক মুমিনুল হক সৌরভ এককভাবে ব্যাটসম্যান, বোলার কিংবা ফিল্ডারদের দায় দিতে নারাজ। তার কাঠগড়ায় ‘টিম বাংলাদেশ’। দলগত ভাবে পারফরম্যান্স করতে না পারাকেই তিনি দায়ী করছেন। গতকাল সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘আমরা দলগতভাবে ভালো ব্যাটিং করতে পারিনি। শুধু তামিম ভাই প্রথম ইনিংসে ভালো করেছে, ভালো শুরু এনে দিয়েছে। এছাড়া আমরা কেউই দলগতভাবে ভালো করতে পারিনি। আমার কথাই যদি বলি আমি আসলে ইনিংস বড় করতে পারিনি, আমরা যদি তিন-চার সেশন ব্যাটিং করতে পারতাম তাহলে অন্যরকম হতো। প্রথম টেস্টে কিন্তু আমরা প্রায় ছয় সেশন ব্যাট করেছিলাম। আমরা যদি অন্তত ৫ সেশন ব্যাট করতে পারতাম তাহলে ফল ভিন্ন হতে পারতো। এর দায় অবশ্য আমাদের নিজেদেরই।’
শুধু তাই নয় দলগত ব্যর্থতার সঙ্গে পাল্লেকেলে স্টেডিয়ামে দ্বিতীয় টেস্ট হারের জন্য টসে হারকেও বড় করে দেখছেন অধিনায়ক মুমিনুল। তিনি বলেন, ‘আমার মনে হয় এই টেস্ট ম্যাচে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল টস। দেখুন, প্রথম দুই দিনে কিন্তু উইকেটে বোলারদের জন্য কোনো সুবিধা ছিল না। আমার মনে হয়েছে, এই ম্যাচটার ৫০ শতাংশ ফলাফল টসের সময়েই নির্ধারণ হয়ে গিয়েছিল। কন্ডিশন অনেকটা একই। পার্থক্য শুধু এখানে আর্দ্রতা একটু বেশি।’ অন্যদিকে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের এখন পর্যন্ত ৭ ম্যাচে ৬টিতেই হেরেছে বাংলাদেশ। ড্র করেছে একটিতে। এমন পারফরম্যান্সের মাপকাঠিতে নিজেদের কতটা মূল্যায়ন করতে পেরেছে বাংলাদেশ! এ বিষয়ে মুমিনুল বলেন, ‘টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে যতগুলো ম্যাচ খেলেছি এর সঙ্গে আগের টেস্টগুলোর পারফরম্যান্সে খুব একটা ব্যাবধান নেই। বলতে পারেন করোনার এক বছর পর চট্টগ্রাম ও ঢাকা টেস্ট মিলিয়ে ১০ দিনের মধ্যে কয়েকদিন আমরা ডমিনেট করতে পারিনি। আর এই সিরিজে আরো একটু উন্নতি করেছি। তো ওভারঅল মনে হয় পয়েন্ট পাইনি কিন্তু এ ছাড়া অতীতের সঙ্গে খুব বেশি পার্থক্য নেই।’
অন্যদিকে স্পিনে অভ্যস্ত বাংলাদেশ লঙ্কায় এই অস্ত্রেই ঘায়েল হয়েছে। বিশেষ করে বাঁহাতি স্পিনে। নিজেদের এই ঘাটতি নিয়ে টাইগার অধিনায়ক বলেন, ‘বিশেষ বোলারের জন্য সবারই কিছু পরিকল্পনা থাকে। কেউ সেটা কাজে লাগাতে পারে আর কেউ পারে না। আমি যখন বাঁহাতি স্পিনারের বিপক্ষে খেলছিলাম তখন আমার একরকম ব্যাট ছিল আবার তামিম ভাই যখন ডান হাতি স্পিনারের বিপক্ষে খেলছিল তখন তার ভিন্ন ব্যাট ছিল। কোন কোন সময় এই পরিকল্পনাগুলো হয়ে ওঠে না।’ তবে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজ হারের পরও ইতিবাচক কিছু বিষয় দেখছেন টাইগার অধিনায়ক। তিনি বলেন, ‘অবশ্যই প্রাপ্তিও আছে। আমি সিরিজ হেরেছি এর মানে এই না যে সব কিছু হেরে গিয়েছি। হয়তো আমি জানি একটু সমালোচনা হবে, অনেকেই অনেক কথা বলবে। এর ভেতরেও অনেক ইতিবাচক দিক আছে। প্রথম টেস্টে আমি যেটা সব সময় চাচ্ছিলাম যে দলগতভাবে খেলবো। যেটা আমরা শেষ ২-১টি টেস্ট ম্যাচে খেলতে পারিনি। আমার কাছে মনে হয় প্রথম টেস্টে আমরা দল হিসেবে খেলতে পেরেছি। আমরা তখনই ভালো খেলি যখন আমরা দলগতভাবে খেলতে পারি। দলের সবাই যখন অবদান রাখে তখন আমরা দল হিসেবে ভালো করতে পারি। আপনি যদি দেখেন তামিম ভাইর দুইটা ৯০ আছে, একটা ৭০ আছে। শান্তর একটা ১৬৩ আছে, মুশফিক ভাই ও লিটনের হাফ সেঞ্চুরি আছে। তাইজুলের ৫ উইকেট আছে। আমার কাছে মনে হয় যেটা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, আপনারাও হয়তো অপেক্ষায় ছিলেন যে কোনো পেসার কি কিছু করতে পারছে কিনা, সেই হিসেবে তাসকিনকে দেখেছেন। আগের চেয়ে অনেক ভালো এখন। অনেক উন্নতি করেছে। আমার কাছে মনে হয় অনেক ইতিবাচক দিক আছে এই টেস্ট সিরিজে।’

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *