দক্ষিণ কোরীয় কর্মকর্তা হত্যায় বিরল ক্ষমা প্রার্থনা কিমের

উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং-উন তাদের জলসীমায় দক্ষিণ কোরিয়ার এক নাগরিককে গুলি করে হত্যার ঘটনায় ক্ষমা চেয়েছেন। শুক্রবার দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্টের দপ্তরের বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা ইয়োনহাপ এমন তথ্য জানিয়েছে। খবর এএফপি।

উত্তর কোরিয়া থেকে এবং বিশেষ করে কিমের তরফ থেকে দুঃখ প্রকাশের ঘটনা খুবই অস্বাভাবিক। তার ওপরে এখন দুই কোরিয়ার মধ্যে সমঝোতা আলোচনায় স্থিতাবস্থা চলছে এবং পারমাণবিক কর্মসূচি স্থগিত করা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গেও কোনো ক্ষেত্রে তেমন অগ্রগতি হয়নি।

দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্টের কার্যালয়, ব্লু হাউজ থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়, প্রেসিডেন্ট মুন জা-ইনের কাছে পাঠানো চিঠিতে বারবার এ ঘটনা ঘটা উচিত হয়নি বলেছেন উত্তর কোরীয় নেতা কিম।

কিম প্রেসিডেন্ট মুনকে আনুষ্ঠানিকভাবে পাঠানো ওই চিঠিতে লেখেন, তিনি মুন এবং দক্ষিণ কোরিয়ার জনগণের কাছে গভীর দুঃখ প্রকাশ করছেন। এ ঘটনায় তিনি অত্যন্ত হতাশ হয়েছেন।

এর একদিন আগে উত্তর কোরিয়ার প্রতিবেশী দক্ষিণ কোরিয়ার এক কর্মকর্তাকে গুলি করে হত্যার পর তার মরদেহ পুড়িয়ে ফেলা হয়। এ ঘটনাকে নৃশংস কার্যক্রম আখ্যায়িত করে তার নিন্দা জানিয়েছে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়।

সিউল বলছে, সীমান্তের কাছে একটি টহল নৌকা থেকে সোমবার তিনি নিখোঁজ হন। পরে তাকে উত্তর কোরিয়ার জলসীমায় পাওয়া যায়। উত্তর কোরিয়ার সেনারা তাকে গুলি করে তার মরদেহে তেল ঢেলে দিয়ে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে। সোমবার উত্তরের সীমানা থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে থাকা অবস্থায় ওই কর্মকর্তা একটি টহল নৌকা থেকে নিখোঁজ হয়ে যান। তিনি পক্ষত্যাগ করে উত্তর কোরিয়ার প্রবেশের চেষ্টা করেছিলেন বলে অজ্ঞাত গোয়েন্দা সূত্রের বরাত দিয়ে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা ইয়োনহাপ। দক্ষিণ কোরিয়ায় প্রেসিডেন্টের কাছে পাঠানো চিঠিতে পিয়ংইয়ং স্বীকার করেছে, তারা ওই ব্যক্তির ওপর ১০ রাউন্ড গুলি নিক্ষেপ করে।

প্রাণঘাতী নভেল করোনাভাইরাসের প্রবেশ ঠেকাতে উত্তর কোরিয়া সীমান্তে কঠোর নজরদারির যে নির্দেশ দিয়েছে বলে ধারণা করা হয়, তার কারণেই দেশটির সৈন্যরা দক্ষিণের ওই কর্মকর্তার ওপর গুলি ছুড়েছিলেন বলে প্রাথমিকভাবে অনুমান করা হচ্ছে। ৪৭ বছর বয়সী ওই মৎস্য কর্মকর্তা কী করে উত্তরের জলসীমায় পৌঁছেছিলেন, দক্ষিণের সেনাবাহিনী তার ব্যাখ্যা দেয়নি।

বৃহস্পতিবার সংবাদ ব্রিফিংয়ে দক্ষিণের সামরিক বাহিনীর কর্মকর্তা জেনারেল আন ইয়ং-হো বলেন, আমাদের সেনাবাহিনী এ ধরনের বর্বরতার কড়া নিন্দা জানাচ্ছে; উত্তর কোরিয়ার কাছে এ ঘটনার ব্যাখ্যা চাইছি এবং দোষীদের শাস্তি দেয়ারও দাবি জানাচ্ছি।

পিয়ংইয়ংয়ের ক্ষমা প্রার্থনার ঘটনা নিয়ে সিউলভিত্তিক গবেষক আহন চ্যান-ইল বলেন, উত্তর কোরিয়ার সুপ্রিম কমান্ডার কর্তৃক ক্ষমা প্রার্থনার ঘটনা খুবই বিরল। তা-ও আবার দক্ষিণ কোরিয়ার নাগরিক ও তার বাসিন্দাদের প্রতি। এর আগে ১৯৭৬ সালে বেসামরিকীকৃত অঞ্চলে (ডিএমজেড) দুই মার্কিন সেনা কর্মকর্তা হত্যার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেছিল উত্তর কোরিয়া।

সিউলের ইওহা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক লিফ এরিক ইয়াসলি বলেন, কিম জং-উনের এ ক্ষমা প্রার্থনায় দুই কোরিয়ার মধ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধির ঝুঁকি প্রশমন করেছে এবং কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালু রাখার পক্ষে আশাবাদ বেঁচে রয়েছে।

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *