থমকে আছে ১৪০০ কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প

বরিশাল নগরীর স্থায়ী জলাবদ্ধতা নিরসনে ৪৬টি খাল ও ৩০টি পুকুর উন্নয়নে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে একটি প্রকল্প গ্রহণ করে বরিশাল সিটি করপোরেশন (বিসিসি)। প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয় প্রায় ১ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। কিন্তু নভেল করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পর থেকেই থমকে গেছে উন্নয়ন প্রকল্পের সব কাজ। মহামারী এ ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে প্রজেক্ট মনিটরিং কমিটি বরিশালে আসতে পারেনি। তাই প্রায় এক বছর অতিবাহিত হয়ে গেলেও প্রকল্পের কাজ এগোয়নি আশানুরূপভাবে। যদিও বিসিসির দাবি, ভিজিবিলিটি সার্ভের প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে। প্রজেক্ট মনিটরিং কমিটির পরিদর্শনের পর অন্যান্য কাজ শুরু হবে।

বরিশাল সিটি করপোরেশনের প্রকৌশলী বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, বরিশাল নগরীর জালের মতো বিস্তৃত খাল ও পুকুরগুলো এখন মরা জলাশয়ে পরিণত হয়েছে। ফলে বন্ধ হয়ে গেছে এসব জলাশয়ের পানিপ্রবাহ। বর্ষায় ডুবে যায় পুরো নগরী। নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে ৪৬ খাল ও ৩০ পুকুর নিয়ে উন্নয়ন যজ্ঞ শুরু করতে গত জানুয়ারিতে ১ হাজার ৩৮৮ কোটি টাকার প্রকল্প মন্ত্রণালয়ে পাঠায় সিটি করপোরেশন।

প্রকল্পের নাম ‘বরিশাল সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন খালগুলোর পাড় সংরক্ষণসহ পুনরুদ্ধার ও পুনর্খনন’। সাড়ে তিন বছর মেয়াদি এ প্রকল্পের মাধ্যমে ৪৬টি খাল পুনর্খননের জন্য বরাদ্দ ধরা হয় ১২১ কোটি টাকা। ১০৯ কিলোমিটার এলাকার খালগুলোর দুই পাড়ের ২৩ কিলোমিটার স্থানে করা হবে সৌন্দর্য বর্ধনের কাজ। এজন্য বরাদ্দ ধরা হয়েছে ৪৮০ কোটি টাকা। এছাড়া ঘাটলা, বসার বেঞ্চ, ড্রেন, লাইট, ১৭টি আরসিসি ব্রিজ ও ৩০টি পুকুর সংস্কারের জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৭৮৭ কোটি টাকা।

সিটি করপোরেশনের প্রকৌশলী বিভাগ জানায়, প্রকল্পটি পরিবেশবান্ধব। প্রকল্প পাঠানের জন্য খালগুলোর সীমানা ম্যাপ অনুযায়ী প্রি-ওয়ার্ক সার্ভে করতে হয়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় ডিজাইন প্রণয়ন করা হয়েছে। এ প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে বরিশাল পরিবেশবান্ধব নগরীতে পরিণত হবে। পাশাপাশি পর্যটন ও নৌ-পরিবহনে গুরুত্ব বাড়বে। নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসন হবে।

বরিশালের নদী-খাল রক্ষার জন্য দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে আসছে বরিশাল নদী-খাল রক্ষা কমিটি। এ সংগঠনের সদস্য সচিব কাজী এনায়েত হোসেন শিপলু বলেন, একসময় বরিশালের পরিচিতি ছিল নদী-খালের শহর হিসেবে। অব্যবস্থাপনা ও নজরদারির অভাবে দখল ও দূষণে নগরীর ভেতর দিয়ে বয়ে যাওয়া খালগুলো হারিয়ে যেতে বসেছে। এ প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে খালগুলো প্রাণ ফিরে পাবে।

বরিশাল বিএম কলেজের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক হাফিজা আক্তার বলেন, খালগুলো নগরীর প্রাণ। বৃষ্টিতে জমে যাওয়া পানিসহ বর্জ্য নিষ্কাশনে এগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। রক্ষা করে পরিবেশের ভারসাম্য। তাই খালগুলো রক্ষণাবেক্ষণ জরুরি।

তিনি বলেন, কেবল প্রশাসন কর্তৃক অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করলেই হবে না, খাল রক্ষায় জনসচেতনতাও প্রয়োজন। তাই অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ এবং জনগণের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টির মাধ্যমে নগরীর খালগুলোর অস্তিত্ব রক্ষার বিষয়ে মতামত ব্যক্ত করেন তিনি।

নগরীর ১১ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মজিবর রহমান বলেন, শুধু আমার ওয়ার্ডের খালই নয়, নগরীর অন্য খালগুলো সংস্কার এবং পুনর্খননের পরিকল্পনা আমরা এরই মধ্যে গ্রহণ করেছি। এজন্য জলবায়ু প্রকল্পের আওতায় বরাদ্দও চাওয়া হয়েছে। এডিবির অর্থ বরাদ্দ পেলেই বিসিসি কাজ শুরু করবে।

এ বিষয়ে সিটি করপোরেশনের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী খান মো. নুরুল ইসলাম ও করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইসরাইল হোসেনের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

এ ব্যাপারে বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ বলেন, এ প্রকল্পের আগে আরো দুটি প্রকল্প পাঠানো হয়েছিল। পরে মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় আমরা বড় আকারে এ প্রকল্প তৈরি করে পাঠিয়েছি। তবে তারা ভিজিবিলিটি সার্ভে চেয়েছে। এরই মধ্যে সার্ভে করে তা প্রেরণ করা হয়েছে। কিন্তু করোনার কারণে আর কোনো অগ্রগতি হয়নি। আশা করি, এ প্রকল্পের সুফল নগরীর জনগণ পাবে। বৃদ্ধি পাবে পর্যটন সেক্টর, নৌ-পরিবহন খাত, নগরী সবুজায়ন হবে এবং জলাবদ্ধতা হ্রাস পাবে। সর্বোপরি একটি পরিবেশবান্ধব নগরীতে পরিণত হবে এ সিটি।

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *