টিকটক ছিনিয়ে নেয়া মেনে নেবে না চীন!

চীনভিত্তিক প্রযুক্তি কোম্পানি বাইটডান্স নিয়ন্ত্রিত সোস্যাল মিডিয়া অ্যাপ টিকটক। জনপ্রিয় শর্ট ভিডিও তৈরির অ্যাপটির যুক্তরাষ্ট্রের কার্যক্রম নানা অজুহাত এবং অপকৌশলে বাগিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন, যা কোনো পরিস্থিতিতেই মেনে নেয়া হবে না বলে হুঁশিয়ার করে দিয়েছে চীন। খবর চায়না ডেইলি।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নিরাপত্তা দুর্বলতার অভিযোগে যুক্তরাষ্ট্রে টিকটক নিষিদ্ধে নির্বাহী আদেশে সই করার ঘোষণা দিয়েছেন। একই সঙ্গে বাইটডান্সকে টিকটকের যুক্তরাষ্ট্রের কার্যক্রম মার্কিন কোনো প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের কাছে বিক্রির পরামর্শ দিয়েছেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে টিকটকের যুক্তরাষ্ট্রের কার্যক্রম অধিগ্রহণে আগ্রহ প্রকাশ করেছে সফটওয়্যার জায়ান্ট মাইক্রোসফট। তবে চীন টিকটক ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের যে কোনো পদক্ষেপ নাকচ করতে সক্ষম বলে উল্লেখ করেছে। গতকাল টিকটক ইস্যুকে কেন্দ্র করে ওয়াশিংটনের পদক্ষেপের প্রতিক্রিয়ায় এমন বক্তব্য দিয়েছে চীন।

চায়না ডেইলির প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, বৈশ্বিক প্রযুক্তি শিল্পে প্রতিযোগিতা নয়; একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তারে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতি অনুসরণ করছে। যুক্তরাষ্ট্রে চীনা প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো নিয়মিত হেনস্তার শিকার হচ্ছে। চীনা প্রতিষ্ঠানগুলোর অগ্রগতি থামাতে একের পর এক অন্যায় অভিযোগ করা হচ্ছে। মার্কিন প্রতিষ্ঠানগুলোকে টেক্কা দেয়ার সক্ষম সব চীনা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ওয়াশিংটন তথ্য নিরাপত্তার অভিযোগ তুলছে, যা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। চীনা প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোকে ব্যবসার দিক থেকে দাবিয়ে রাখতে পরিকল্পিত ধ্বংসলীলা চালাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র।

প্রতিবেদনে যোগ করা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের এমন অপকৌশলের জবাব দেয়ার যথেষ্ট সুযোগ ও পন্থা চীনের হাতে রয়েছে। চীন প্রশাসন তাদের পরিকল্পিত ধ্বংসযজ্ঞ চালানো শুরু করলে তা মার্কিন প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য খুব একটা ইতিবাচক হবে না।

গত সোমবার মাইক্রোসফটের বিবৃতিতে বলা হয়, তারা টিকটকের যুক্তরাষ্ট্রের কার্যক্রম অধিগ্রহণে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। তবে অ্যাপটিকে কেন্দ্র করে মার্কিন প্রেসিডেন্ট কিছুটা সুর বদলেছেন। যুক্তরাষ্ট্রে টিকটক নিষিদ্ধে নির্বাহী আদেশে সই করার কথা থাকলেও আপাতত মালিকানা বদলের জন্য ৪৫ দিন সময় বেঁধে দেয়া হয়েছে। এর পরই মূলত টিকটক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে অধিগ্রহণ বিষয়ে আলোচনায় বসেছে মাইক্রোসফট। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে টিকটকের যুক্তরাষ্ট্র কার্যক্রমের মালিকানা বদল না হলে জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে দেশটিতে টিকটকের কার্যক্রম বন্ধ করা হতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তার জন্য হুমকি হতে পারে মনে হলে চীনভিত্তিক সফটওয়্যার জায়ান্টগুলোর বিষয়ে আগামীতে ব্যবস্থা নেবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলে জানিয়েছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও। তিনি অভিযোগ করেন, টিকটক সরাসরি চীনা কমিউনিস্ট পার্টিকে তথ্য দিচ্ছে। যদিও চীন সরকারের সঙ্গে তথ্য শেয়ার বা চীন সরকার দ্বারা নিয়ন্ত্রণের অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে টিকটক কর্তৃপক্ষ।

সম্প্রতি এক সাক্ষাত্কারে মাইক পম্পেও বলেন, জাতীয় নিরাপত্তার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ এবং চীনা কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা রয়েছে এমন চীনভিত্তিক সফটওয়্যার কোম্পানি বা তাদের সেবার বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়া হবে। এ ধরনের অসংখ্য প্রতিষ্ঠান যুক্তরাষ্ট্রে ব্যবসা করছে, যারা চীন সরকারের কাছে তথ্য পাচার করছে বলে আমরা মনে করছি। এসব গুরুত্বপূর্ণ তথ্যের মধ্যে রয়েছে ফেসিয়াল রিকগনিশন প্যাটার্ন, ঠিকানা, ফোন নম্বর ও কনট্যাক্ট।

অন্যদিকে অনেক রিপাবলিকান সিনেটর টিকটকের যুক্তরাষ্ট্রের কার্যক্রমের নিয়ন্ত্রণ অন্য প্রতিষ্ঠানের কাছে বিক্রির পরিকল্পনায় সম্মতি দিয়েছেন। সঠিক উত্তর কী হতে পারে? মাইক্রোসফটের মতো প্রতিষ্ঠানের হাতে টিকটকের নিয়ন্ত্রণ যাওয়া। এতে দুই কুল রক্ষা হবে। প্রতিযোগিতাও বাঁচিয়ে রাখা যাবে, আবার চীনা কমিউনিস্ট পার্টির হাত থেকে তথ্য বাঁচানো যাবে বলে যুক্তি উপস্থাপন করা হয়েছে।

ডোনাল্ড ট্রাম্পের নিষেধাজ্ঞা এড়াতে এরই মধ্যে টিকটকের প্রধান কার্যালয় চীন থেকে সরানোর উদ্যোগ নিয়েছে বাইটডান্স। চীনের বাইরে প্রধান কার্যালয় নির্মাণে টিকটকের কাছে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে লন্ডন। তবে বিষয়টি নিয়ে এখনো চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। যে কারণে লন্ডনের পাশাপাশি অন্যান্য অঞ্চল নিয়েও ভাবতে হচ্ছে টিকটক কর্তৃপক্ষকে। কার্যক্রমে স্বচ্ছতা আনতে এর আগে ওয়াল্ট ডিজনির সাবেক কো-নির্বাহী কেভিন মেয়ারকে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে টিকটক। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক। টিকটকের নতুন সিইও প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে ওঠা চীন সরকারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার অভিযোগ এড়াতে চীনের বাইরে কার্যালয় নির্মাণের পরিকল্পনা নিয়েছেন।

ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের চাপে রয়েছে টিকটক অ্যাপ। ভারত-চীন সীমান্ত উত্তেজনার জেরে ভারতে নিষিদ্ধ করা হয়েছে অ্যাপটিকে। অন্যদিকে তথ্যনিরাপত্তা ইস্যুকে কেন্দ্র করে যুক্তরাষ্ট্রে নিষিদ্ধ হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। এ পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্রে সম্ভাব্য নিষেধাজ্ঞা ও ভারতে আরোপিত নিষেধাজ্ঞা থেকে মুক্ত হতে চীন থেকে টিকটকের প্রধান কার্যালয় অন্যত্র সরিয়ে নেয়ার ঘোষণা দিয়েছে প্যারেন্ট কোম্পানি বাইটডান্স।

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *