জাকাত দয়া নয়, ধনীদের সম্পদে গরিবের অধিকার

ইসলাম আল্লাহ- প্রদত্ত মানবকল্যাণের জীবনব্যবস্থা। এ জীবনব্যবস্থা মানুষকে অন্য মানুষের কল্যাণে নিবেদিত হতে উদ্বুদ্ধ করে। ইসলামী বিধান অনুযায়ী আল্লাহ সব সম্পদের মালিক। তিনি কৃপাবশত বান্দাকে সম্পদের অধিকারী করেন। ধনীর সম্পদে গরিবের হক থাকে যা জাকাতের মাধ্যমে তাদের পৌঁছে দিতে হবে। এটি গরিবের প্রতি ধনীর কৃপা প্রদর্শন নয়, বরং তাদের অধিকার।

ইসলামের ভিত্তি পাঁচটি বিষয়ের ওপর প্রতিষ্ঠিত। এগুলো হলো ১. আল্লাহ ছাড়া অন্য কোনো মাবুদ নেই এবং হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর রসুল এ সাক্ষ্য প্রদান ২. নামাজ কায়েম ৩. জাকাত আদায় ৪. হজ পালন ৫. রমজানের রোজা রাখা।

আল কোরআন ও হাদিসের আলোকে স্পষ্টভাবে বলা যায়, জাকাত আল্লাহ কর্তৃক সামর্থ্যবানদের ওপর ফরজ একটি বিধান এবং ইসলামের একটি অন্যতম স্তম্ভ। ইতিহাসমতে আল্লাহর এ বিধান অর্থাৎ জাকাত আনুষ্ঠানিকভাবে তৃতীয় হিজরি সনে অর্থাৎ ৬২২ খ্রিস্টাব্দে ফরজ হয়। জাকাত শব্দের অর্থ বৃদ্ধি পাওয়া, পবিত্রতা বা পরিশুদ্ধতা। জাকাতের আরেক অর্থ পরিবর্ধন। ইসলামী বিশ্বকোষ অনুযায়ী জাকাতের অর্থ পবিত্রতা ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা।
আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘হে নবী! আপনি তাদের মালামাল থেকে জাকাত গ্রহণ করুন যাতে আপনি এর মাধ্যমে সেগুলোকে পবিত্র ও বরকতময় পরিশুদ্ধ করতে পারেন।’ সুরা তওবা আয়াত ১০৩।

ইসলামী শরিয়তের পরিভাষায়, বনি হাশেম অর্থাৎ আওলাদে রসুল (সা.) ছাড়া জীবনযাত্রার অপরিহার্য প্রয়োজন পূরণের পর সম্পদ পূর্ণ এক বছরকাল অতিক্রম করলে ওই সম্পদ থেকে নির্দিষ্ট অংশ গরিব ও অভাবীদের মধ্যে বণ্টন করাকে জাকাত বলা হয়। এটাকে জাকাত বলার কারণ হলো এভাবে জাকাতদাতার অর্থসম্পদ এবং তার নিজের আত্মা পবিত্র-পরিচ্ছন্ন হয়ে যায়।

রসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘জাকাত ইসলামে ধনী-গরিবের সেতুবন্ধ।’ মুসলিম। ইসলামী শরিয়তের পরিভাষায় বছর অতিক্রান্ত হয়েছে এমন নিসাব পরিমাণ সম্পদের একটি অংশ গরিব-অভাবীদের মধ্যে একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির লক্ষ্যে অর্পণ করাই হলো জাকাত। সম্পদের ওই অংশকে তার হক হিসেবে অর্পণ করতে হবে। এর অন্যথা হলে চলবে না। অর্থাৎ যিনি জাকাত দেবেন তিনি একে দয়া-দাক্ষিণ্য ভাবতে পারবেন না। তাকে ভাবতে হবে এটি আল্লাহর পক্ষ থেকে দেওয়া গরিবের অধিকার।
মনজুরুল হক: সাধারণ মানুষের কাটা ঘায়ে নুনের ছিটা কেন? ≣ [১] প্রধান বিচারপতির বিদায় সংবর্ধনা বর্জন করেছে বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা ≣ ছাগল চুরির অপবাদে প্রতিবন্ধীসহ তিন কিশোরকে গাছে বেঁধে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন

প্রাপ্তবয়স্ক, সুস্থ মস্তিষ্কসম্পন্ন সাড়ে ৭ ভরি সোনা, সাড়ে ৫২ তোলা রৌপ্যের মালিক মুসলিম নর-নারীর ওপর জাকাত প্রদান করা ফরজ। কোনো ব্যক্তি মৌলিক প্রয়োজনীয় উপকরণাদি ছাড়া নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হওয়ার পর চাঁদের হিসাবে পরিপূর্ণ এক বছর অতিবাহিত হলে তার ওপর পূর্ববর্তী বছরের জাকাত প্রদান করা ফরজ। অবশ্য যদি কোনো ব্যক্তি জাকাতের নিসাবের মালিক হওয়ার পাশাপাশি ঋণগ্রস্ত হয় তবে ঋণ বাদ দিয়ে নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হলে তার ওপর জাকাত ফরজ হবে।

জাকাত ফরজ হওয়ার পর যদি কোনো ব্যক্তি জাকাত প্রদান না করে টাকা খরচ করে ফেলে তা হলেও তাকে তার আগের জাকাত দিতে হবে। নাবালেগ ও পাগলের ওপর জাকাত ফরজ হবে না। কারণ তাদের ওপর শরিয়তের বিধান আরোপিত হয় না। তবে যদি কোনো মস্তিষ্কবিকৃত ব্যক্তি নিসাবের মালিক হওয়ার সময় এবং বছর পরিপূর্ণ হওয়ার সময় সুস্থ থাকে কিন্তু মধ্যবর্তী সময় মস্তিষ্ক বিকৃতির শিকার হয় তাহলে তাকে জাকাত প্রদান করতে হবে।

জাকাতদাতা গরিব ব্যক্তিকে জাকাত দেওয়ার ক্ষেত্রে কোনো জাগতিক স্বার্থের কথা ভাবলেও তা বৈধ বলে বিবেচিত হবে না। এ ধরনের যে কোনো প্রয়াসে জাকাত আদায় হবে না। জাকাতদানকারী গরিব ব্যক্তিকে জাকাত দান করে তার ওপর কোনো অনুগ্রহ করছেন এমন ভাবলেও তা অন্যায় বলে বিবেচিত হবে। কারণ সম্পদের ওই নির্দিষ্ট অংশ হলো আল্লাহর পক্ষ থেকে দেওয়া গরিবের হক বা অধিকার।

আল কোরআনে ইরশাদ হচ্ছে, ‘এবং তাদের (ধনীদের) সম্পত্তির মধ্যে রয়েছে অভাবগ্রস্ত ও বঞ্চিতদের অধিকার।’ সুরা জারিয়াত আয়াত ১৯।

জাকাত বণ্টনের ব্যাপারে আল কোরআনের স্পষ্ট ঘোষণা হচ্ছে, ‘নিশ্চয়ই সাদাকাহ (জাকাত) তো কেবল নিঃস্ব, অভাবগ্রস্ত ও জাকাত আদায়ে নিয়োজিত কর্মচারীদের জন্য, যাদের চিত্ত আকর্ষণ করা হয় তাদের জন্য, দাসমুক্তির জন্য, ঋণগ্রস্তদের, আল্লাহর পথে ও মুসাফিরদের জন্য। এটাই আল্লাহর বিধান।’ সুরা তওবা আয়াত ৬০।

যারা জাকাতদানে অস্বীকৃতি জানাবে বা কার্পণ্য করবে তাদের ওপর আল্লাহর বিধান অত্যন্ত কঠোর। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) সূত্রে বর্ণিত, রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি তার সম্পদের জাকাত আদায় করবে না কিয়ামতের দিন আল্লাহ তার গলায় সাপ ঝুলিয়ে দেবেন।’ তিরমিজি।

ইসলাম ধনীদের সম্পত্তির বর্ধিত অংশকে গরিবের পাওনা বা হক হিসেবে দেখে। যে কারণে জাকাত আদায়কালে আদায়কারীর উদ্দেশ্য হতে হবে একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি। এর অন্যথা হলে তা আমল হিসেবে বিবেচিত হবে না। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ নিয়ে তাঁর অনুসারীদের সতর্ক করে বলেছেন, ‘নিশ্চয় নেক আমলের মধ্যে সামান্যতম লৌকিকতা শিরক।’

আল্লাহ আমাদের সবাইকে যথাযথভাবে জাকাত আদায়ের তৌফিক দান করুন।

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *