জলাবদ্ধতায় নিমজ্জিত কদমতলী শিল্প এলাকা

নানা সমস্যায় জর্জরিত পুরান ঢাকার প্রাচীন শিল্পনগরীখ্যাত শ্যামপুর-কদমতলী এলাকা। আগের সেই জৌলুস নেই শিল্প-প্রতিষ্ঠানগুলোয়। বর্তমানে ওই এলাকায় লোহার ব্যবসা জমজমাট। এত কিছুর পরও জলাবদ্ধতায় ভোগান্তির কমতি নেই সেখানকার বাসিন্দাদের। দীর্ঘ সময় রাস্তা ও সুয়ারেজ লাইন সংস্কার না হওয়ায় সেখানে জলাবদ্ধতা লেগেই থাকে বছরের পর বছর। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৫৯ নং ওয়ার্ডভুক্ত এলাকাটি বর্তমানে শিল্প ও কল-কারখানা, পোশাক শিল্প, আইসক্রিম ফ্যাক্টরি, বেকারি, করাতকল ও লৌহশিল্পের জন্য পরিচিত। ছোট ও মাঝারি কয়েক হাজার শিল্প-কারখানা রয়েছে সেখানে। গ্যাস, বিদ্যুৎ, বিশুদ্ধ পানির সংকট আর জলাবদ্ধতা, পয়োনিষ্কাশন ও চাঁদাবাজি সমস্যার কারণে এলাকাটি দীর্ঘদিন অবহেলিত।

সরেজমিন দেখা গেছে, কদমতলী শিল্প এলাকার দ্বিতীয় পেজের ২৪ নং রাস্তা বেহাল হয়ে পড়ে আছে। এটি মুন্সীখোলা প্রধান সড়ক থেকে শুরু হয়ে রসুলপুর রেললাইনে গিয়ে মিশেছে। দীর্ঘদিনের অযত্ন, অবহেলা, সংস্কারের অভাব, জলাবদ্ধতা আর পয়োনিষ্কাশনের অভাবে রাস্তাটি ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। সামান্য বৃষ্টিপাতেই তলিয়ে যাচ্ছে পুরো এলাকা। ফলে প্রতিদিনই কোনো না কোনো দুর্ঘটনা ঘটছে রাস্তাটিতে। অথচ জনবহুল এ এলাকার কয়েক লাখ লোকের যাতায়াতের একমাত্র রাস্তা এটি। এ সড়কেই ছোট-বড় ১০টি রি-রোলিং মিল অবস্থিত। প্রতিদিন কয়েকশ ট্রাক বিভিন্ন মিলে কাঁচামাল আনা-নেয়া করে। মিলগুলোয় নিয়োজিত কয়েক হাজার শ্রমিক-কর্মচারীর যাতায়াতও এ পথ দিয়ে। অথচ এটি দেখার যেন কেউ নেই। বাধ্য হয়ে কয়েক দিন আগে সব মিল মালিক একত্র হয়ে রাস্তাটি সংস্কারের উদ্যোগ গ্রহণ করেন। কিন্তু স্থানীয় কিছু প্রভাবশালীর কারণে সে কাজ বন্ধ করে দেয়া হয় বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।

স্থানীয় এক বাসিন্দা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, সংস্কারকাজে বাধার মূল কারণ চাঁদাবাজি। মিল মালিকরা একত্র হয়ে রাস্তাটি সংস্কারের সিদ্ধান্ত নেন। এজন্য কিছু লোকও নিয়োগ করে প্রথমে একটি ড্রেনের কাজ শুরু হয়। কিন্তু স্থানীয় মাস্তান রাস্তাটির সংস্কারকাজে বাধা দেয় এবং মারধর করে কাজ বন্ধ করে দেয়। তারা মোটা অংকের চাঁদা দাবি করে। চাঁদার টাকাটা দিলে তারপর সংস্কারকাজ হবে। রাস্তাটির সংস্কারকাজ নিয়ে এলাকায় এখন থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে।

বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৫৯ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আকাশ কুমার ভৌমিক বণিক বার্তাকে বলেন, শিল্প এলাকার কাজটি করার জন্য আমরা আগের মেয়রের কাছে কাগজপত্র জমা দিয়েছিলাম। তবে সিটি করপোরেশন নির্বাচন থাকায় সেটির অগ্রগতি কতদূর তা জানা যায়নি। নতুন মেয়র এসেছেন, আমরা চেষ্টা করছি যতদূত সম্ভব রাস্তাটি সংস্কার করার। আগামী সেপ্টেম্বরে রাস্তার কাজ হয়ে যাবে।

রাস্তা সংস্কারে মিল শ্রমিকদের স্থানীয় প্রভাবশালীদের বাধা দেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটি ওয়াসা ও জমি মালিকদের সঙ্গে মিল শ্রমিকদের সমস্যা। তবে দুপক্ষের মধ্যে বসে বিষয়টি মীমাংসার চেষ্টা চলছে।

এদিকে রাস্তার কাজ বন্ধ করে দেয়ায় ৭ জুলাই কদমতলী থানায় সাতজনের নাম উল্লেখ করে একটি অভিযোগ দায়ের করেন মিল মালিকরা। অভিযুক্তরা হলেন মো. মিজান, তারেক, ফজলুল হক ফজু, মানিক, রাব্বি, মনির হোসেন ও ইসমাইল।

থানায় দায়েরকৃত অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্তদের একজন ফজলুল হক ফজু বিষয়টি অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, তাঁতী লীগের সঙ্গে মিল মালিকদের একটা গণ্ডগোল আছে। তাদের সঙ্গে কোনো সমস্যা হতে পারে, আমাদের সঙ্গে নয়। আর পত্রিকা পড়ে জেনেছি, মিল মালিকরা ওয়াসার জায়গা খনন করে মাটি বিক্রি করে দিয়েছে। সেজন্য ওয়াসা মামলা করে তাদের মাটি খননের কাজ বন্ধ করে দিয়েছে।

অভিযোগের বিষয়ে কদমতলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জামাল উদ্দীন মীর বণিক বার্তাকে বলেন, যে বিষয় নিয়ে অভিযোগ করা হয়েছে, সেটি আমরা তদন্ত করে দেখছি। তবে এ ঘটনায় জড়িতদের বিষয়ে অভিযোগের প্রমাণ পেলে মামলা হবে।

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *