জটিল রোগের মহৌষধ এসব গাছ

জটিল রোগের মহৌষধ এসব গাছ হথর্ন (কাটাযুক্ত গাছ) গাছের ফুল

কয়েক হাজার বছর ধরে বিভিন্ন রোগের চিকিৎসায় গাছের লতা-পাতা, ছাল, শিকড় ব্যবহার করা হচ্ছে। অ্যালোপ্যাথির প্রসারের কারণে এ ধরনের চিকিৎসার কার্যকারিতা নিয়ে অনেকেই সন্দিহান।

তবে কয়েকটি ভেষজ ওষুধের কার্যকারিতা অবাক করবে তাদেরও।

গাছের বিভিন্ন অংশ থেকে তৈরি করা ওষুধ দিয়ে যে রোগ সারানো যায় তা অনেকেই বিশ্বাস করেন না। তবে বাস্তবতা হলো, গাছ-গাছালির ওষুধি গুণ বিজ্ঞান-স্বীকৃত। তাই অ্যালোপ্যাথি চিকিৎসাতেও অনেক ক্ষেত্রে কোনো না কোনোভাবে গাছগাছালির ব্যবহার হচ্ছে।

বলে রাখা ভালো এক তৃতীয়াংশ আধুনিক ওষুধই হয় সরাসরি নয়তো পরোক্ষভাবে গাছ, অণুজীব ও বিভিন্ন প্রাণী থেকে। গাছপালাকে কীভাবে ও কতটা চিকিৎসার কাজে ব্যবহার করা যায় তা নিয়ে নিরন্তর গবেষণা করে চলেছেন গবেষকরা। মাঝে মধ্যেই বিস্ময়কর সব তথ্য বেরিয়ে আসছে তাদের গবেষণায়।

সেরকমই এক তথ্য জানান স্ক্রিপস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের গবেষকরা। তাদের গবেষণায় উঠে এসেছে গালবুলিমিমা বেলগ্রাভেনা নামে একটি গাছের নাম। যে গাছের  ছাল ডিপ্রেশন ও উদ্বেগ কমায়।

গালবুলিমিমা বেলগ্রাভেনা

গালবুলিমিমা বেলগ্রাভেনা এক প্রজাতির গাছ। এ গাছের ছাল ডিপ্রেশন ও উদ্বেগ কমানোর মহৌষধ। দীর্ঘদিন গবেষণা করেই এমন সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন গবেষকরা। বিশ্বের সব দেশেই মন খারাপের রোগে ভুগছেন অসংখ্য মানুষ। তারা কি হাত বাড়ালেই পেয়ে যাবেন গালবুলিমিমা বেলগ্রাভেনা গাছের ছাল? না, এ গাছগুলো এত সহজলভ্য নয়। এখন পর্যন্ত শুধু পাপুয়ানিউগিনি এবং নর্দার্ন অস্ট্রেলিয়ার জঙ্গলেই দেখা গেছে এ গাছ।

ভেলভেট বিনস থেকে পারকিনসন্সের ওষুধ

ভারত ও চীনের আয়ুর্বেদী চিকিৎসকেরা এ গাছের রস কাঁপুনি রোগের চিকিৎসায় প্রয়োগ করছেন অন্তত তিন হাজার বছর ধরে। চিকিৎসা শাস্ত্রের পরিভাষায় ওই কাঁপুনি রোগই পারকিনসন্স রোগ৷ ভেলভেট বিন নামের এ বুনো ফলটিতে যে সত্যিই পারকিনসন্স রোগের ওষুধ লেভোডোপার উপাদান রয়েছে তা এখন গবেষণালব্ধ তথ্য।

হথর্ন বা কাঁটাগাছ হৃদরোগের চিকিৎসায়

সম্প্রতি এক গবেষণায় বেরিয়ে এসেছে রক্তচাপ কমানোয় হথর্ন, অর্থাৎ এক ধরনের কাঁটা গাছের বিস্ময়কর কার্যকারিতার খবর। বিজ্ঞানীরা বলছেন, এ ধরনের গাছে রয়েছে বায়োফ্ল্যাভোনয়েডস এবং প্রোয়ান্থোসিনিডিনসের মতো উপাদান, যা হৃদরোগের চিকিৎসায় কাজে লাগে। হথর্নের এ গুণের কথা অবশ্য গ্রিক চিকিৎসক ডিয়োস্কোরিডস প্রথম শতাব্দিতে এবং চীনা চিকিৎসক ট্যাং-বেন-চাও সপ্তম শতাব্দিতেই জানতে পেরেছিলেন।

ক্যান্সার চিকিৎসায় ইউ গাছের ছাল

ইউ গাছের বেশিরভাগ অংশই বিষাক্ত। ইউরোপের পুরানো বহু জায়গায় ঘুরেফিরে এসেছে এ গাছের কথা। শেক্সপিয়ারের অমর রচনা ম্যাকবেথেও থার্ড উইচও বলেছে, স্লিপস অব ইউ সিলভার্ড ইন দ্য মুন’স এক্লিপস।  তবে সব ধরনের ইউ গাছ থেকে ওষুধ হয়না। উত্তর অ্যামেরিকায় এক ধরনের ইউ গাছ পাওয়া যায়, প্যাসিফিক ইউ নামের সেই গাছেই শুধু পাওয়া গেছে ক্যান্সার চিকিৎসায় ব্যবহারযোগ্য ওষুধের উপাদান।

ব্যথা নিরোধে উইলো গাছের ছাল

ক্রিকেট খেলার খোঁজ যারা রাখেন, তাদের অনেকেই হয়তো উইলো কাঠের গুণগান শুনেছেন। হ্যাঁ, উইলো কাঠ দিয়ে তৈরি হয় খুব ভালো মানের ক্রিকেট ব্যাট। ব্যথার ওষুধের উৎস অবশ্য অন্য এক ধরনের উইলো। চার হাজার বছর আগে মিশর ও সুমেরু অঞ্চলে প্রথম দেখা যায় ব্যথা কমানোায় এ প্রজাতির উইলোর ছালের প্রয়োগ।

গবেষণায় দেখা গেছে, এ ধরনের উইলোর ছালে রয়েছে সালিসিন নামের একটি উপাদান, যা একসময় ভূমিকা রেখেছিল অ্যাসপিরিন তৈরিতে।

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *