গ্রেপ্তার ৬, অস্ত্র ও ২টি মোটরসাইকেল উদ্ধার ব্যাংক ডাকাতি তাঁতী লীগ নেতার নেতৃত্বে

চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা তাঁতী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদকের নেতৃত্বে ব্যাংকের টাকা ডাকাতির সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে ছয়জনকে গ্রেপ্তার করেছে কোতোয়ালি থানাপুলিশ। গত শুক্রবার রাতভর অভিযান চালিয়ে চট্টগ্রাম শহর, ফটিকছড়ি ও আনোয়ারা এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। গত ১৬ জুন নগরীর ওয়াসা মোড়ে দিনদুপুরে এক ব্যক্তি ব্যাংক থেকে টাকা তুলে কর্মস্থলে যাওয়ার পথে পাঁচ লাখ টাকা ডাকাতি হয়। ওই ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে তাদের গ্রেপ্তার করা হলো।

গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা তাঁতী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাসুদুর রহমান, কুমিল্লার মুরাদনগর হালিরচর গ্রামের কামাল হোসেন, চট্টগ্রাম শহরের শুলকবহর এলাকার মোক্তার হোসেন, সাতকানিয়া দোলারপাড়া গ্রামের মো. সাদ্দাম হোসেন, ফটিকছড়ি থানার দক্ষিণ ধুরুং গ্রামের শের আলী ও সীতাকু- থানার উত্তর সলিমপুর গ্রামের মোহাম্মদ এরশাদ। তাদের কাছ থেকে একটি দেশীয় এলজি, দুই রাউন্ড কার্তুজ, ডাকাতিতে ব্যবহৃত দুটি মোটরসাইকেল ও ডাকাতি করা ৫০ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়েছে।

গ্রেপ্তারকৃতরা পুলিশকে বলেছে, আজ রবিবার তাদের আরও একটি ডাকাতির পরিকল্পনা ছিল। সে অনুযায়ী তাদের বেশিরভাগ সদস্য নগরীতে আসেন। কিন্তু ডাকাতির আগেই পুলিশের হাতে ধরা পড়ে যান।

চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের উপকমিশনার (দক্ষিণ) এসএম মেহেদী হাসান বলেন, গ্রেপ্তারকৃত দলটির একাধিক সদস্য গত ২৬ জুনের আগেও ব্যাংকের টাকা ডাকাতির আরও পাঁচটি ঘটনায় জড়িত। এর মধ্যে ২০১৮ সালে চান্দগাঁও এলাকায় ১০ লাখ টাকা, তার আগে নগরীর অক্সিজেন, নিউমার্কেট ও কোতোয়ালি থানার পেছনে এ ধরনের ব্যাংকের টাকা ডাকাতির কথা স্বীকার করেছে।

advertisement

গত ১৬ জুন দুপুরে ফারুক আহাম্মদ নামে এক ব্যক্তি এক্সিম ব্যাংকের সিডিএ অ্যাভিনিউ শাখা থেকে ৫ লাখ টাকা তুলে সিএনজি অটোরিকশায় করে আগ্রাবাদ যাচ্ছিলেন। নগরীর ওয়াসার মোড় ফেলে জমিয়তুল ফালাহ মসজিদের গেটে তার সিএনজির গতিরোধ করে টাকা ছিনতাই করে দুর্বৃত্তরা।

কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মহসীন বলেন, মামলাটির তদন্তে নেমে প্রথমে মাসুদকে শনাক্ত করা হয়। তাকে কর্ণফুলী উপজেলার মইজ্যারটেক এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে নগরীর ওয়াসা মোড় থেকে কামাল, মোক্তার, সাদ্দাম ও এরশাদকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে শের আলী নামে তাদের আরেক সহযোগীকে ফটিকছড়ি থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। ওয়াসা মোড়ে গ্রেপ্তার অভিযান চালানোর সময় দুজন পালিয়ে যায়। তিনি বলেন, ডাকাতির কাজে ব্যবহার করা দুটি মোটরসাইকেলই মাসুদ দিয়েছেন। আর দলনেতা হিসেবে ৫ লাখ টাকার মধ্যে ২ লাখ ২০ হাজার টাকাই তিনি নিয়ে নেন।

গ্রেপ্তার ডাকাত দলের সদস্যরা পুলিশকে জানান, গ্রেপ্তার ছয়জনের মধ্যে শের আলী সোর্স হিসেবে ব্যাংকের আশপাশে ঘোরাফেরা করেন। অন্য ছিনতাইকারীরা আশপাশে বিক্ষিপ্তভাবে থাকেন। টার্গেট করা ব্যক্তি ব্যাংক থেকে বের হওয়ার পর সোর্স তাকে অনুসরণ করে অপেক্ষায় থাকা ছিনতাইকারীদের সংকেত দেয়। তখন তারাও টার্গেট করা ওই ব্যক্তির পিছু নেয়। গ্রাহক হেঁটে বা গাড়িতে করে গন্তব্যে যাওয়ার সময় সুযোগ বুঝে গতিরোধ করে অস্ত্র ঠেকিয়ে টাকাগুলো নিয়ে নেয়।

ডাকাত দলের নেতা মাসুদুর রহমান চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা তাঁতী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক। ২০১৬ সালে তার বিরুদ্ধে কোতোয়ালি থানায় দুটি ছিনতাইয়ের মামলা হয়। পুলিশ কর্মকর্তারা বলেন, তিনি অন্তত আরও তিনটি ডাকাতি ও ছিনতাইয়ে অংশ নেন। কিন্তু মামলা হয়নি।

চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা তাঁতী লীগের বর্তমান যুগ্ম আহ্বায়ক আজিজুল হক বলেন, তাঁতী লীগের দক্ষিণ জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক থাকা অবস্থায় দুই বছর আগে মাসুদুর রহমান ছিনতাইয়ের মামলায় গ্রেপ্তার হন। এ ঘটনা জানাজানির পর কেন্দ্র থেকে তাঁতী লীগের কমিটি ভেঙে নতুন আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। এখন দাপ্তরিকভাবে মাসুদুর রহমানের সঙ্গে সংগঠনের কোনো সম্পর্ক নেই। এর পরও কেউ নিজেকে দলীয় নেতা পরিচয় দিলে আমরা তো বাধা দিতে পারি না।

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *