চীন-যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যযুদ্ধ শুরুর বছর পেরিয়েছে অনেক আগেই। এ সময়ের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির শিকার হওয়া খাতের তালিকায় শুরুর দিকে রয়েছে মার্কিন সয়াবিন রফতানি খাত। বাণিজ্যযুদ্ধের দামামায় যুক্তরাষ্ট্রের সয়াবিন আমদানিতে বেইজিংয়ের বাড়তি শুল্ক আরোপ ও আমদানি কমিয়ে দেয়ায় বড় ধাক্কা খান যুক্তরাষ্ট্রের রফতানিকারকরা। তবে বাণিজ্যযুদ্ধ নিরসনে দুই পক্ষের একান্ত প্রচেষ্টার ফলে উত্তেজনার পারদ কমতে শুরু করার পর থেকে চীন-মার্কিন সয়াবিন বাণিজ্য একটু একটু করে বাড়তে শুরু করে। এ ধারাবাহিকতায় সর্বশেষ সপ্তাহে মার্কিন রফতানিকারকরা চীনের বাজারে ৭ লাখ টনের বেশি সয়াবিন রফতানি করেছেন। সর্বশেষ ১৬ মাসের মধ্যে এটাই চীনের উদ্দেশে যুক্তরাষ্ট্র থেকে রওনা হওয়া সয়াবিনের সবচেয়ে বড় চালান। খবর এগ্রিমানি ও রয়টার্স।
মার্কিন কৃষি বিভাগ (ইউএসডিএ) দেশটির সয়াবিন রফতানির গতিশীলতা নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চীনের বাজারে মার্কিন রফতানিকারকরা সব মিলিয়ে ৭ লাখ ২০ হাজার টন সয়াবিন রফতানি করেছেন। বাণিজ্যযুদ্ধ শুরুর পর সর্বশেষ ১৬ মাসের মধ্যে এটাই চীনে মার্কিন সয়াবিনের সর্বোচ্চ রফতানি।
এছাড়াও ৪ জুন শেষ হওয়া সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্র থেকে সব মিলিয়ে ১০ লাখ টন সয়াবিন রফতানি হয়েছে বলে প্রতিবেদনে জানিয়েছে ইউএসডিএ। এর মধ্যে চীনের বাজারে রফতানি হয়েছে ৩ লাখ ৩৭ হাজার টন সয়াবিন। আরো ২ লাখ ১৩ হাজার টন সয়াবিনের রফতানি গন্তব্য প্রতিবেদনে প্রকাশ করা হয়নি।
খাতসংশ্লিষ্টদের ধারণা, মার্কিন রফতানিকারকদের কাছ থেকে এসব সয়াবিন বেনামে কিনেছেন চীনা আমদানিকারকরা। আর এর ফলে কৃষিপণ্যের বাজারে সয়াবিনের বেচাকেনা বৃদ্ধি পেয়ে দাম আগের তুলনায় আরো বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।
খাতসংশ্লিষ্টরা জানান, ২০১৮ সালে বাণিজ্যযুদ্ধ শুরুর পর পরই মার্কিন সয়াবিনের আমদানি শুল্ক বাড়িয়ে দেয় বেইজিং। ফলে যুক্তরাষ্ট্র থেকে সয়াবিন কিনতে চীনা আমদানিকারকদের ব্যয় বেড়ে যায়। এ পরিস্থিতিতে কৃষিপণ্যটির আমদানিতে তারা যুক্তরাষ্ট্রের পরিবর্তে ব্রাজিলের প্রতি ঝুঁকে পড়েন। কমতে কমতে এক পর্যায়ে যুক্তরাষ্ট্র থেকে সয়াবিন আমদানি পুরোপুরি বন্ধ করে দেয় চীন। বড় ধরনের ধাক্কা খায় মার্কিন সয়াবিন রফতানি খাত। ব্রাজিলের কাছে বিশ্বের শীর্ষ সয়াবিন রফতানিকারকের স্বীকৃতি হারায় যুক্তরাষ্ট্র।
এ কারণে চীন-মার্কিন বাণিজ্যযুদ্ধ নিরসনের কূটনৈতিক আলোচনায় ওয়াশিংটনের পক্ষ থেকে বরাবর সয়াবিন রফতানি খাত অগ্রাধিকার পেয়েছে। কেননা চীন বিশ্বের শীর্ষ সয়াবিন আমদানিকারক দেশ। তাই চীনে কৃষিপণ্যটির বাজার হারাতে চায়নি ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন। কূটনৈতিক উদ্যোগের জের ধরে গত বছর থেকে বাণিজ্যযুদ্ধের উত্তেজনা একটু একটু করে কমতির দিকে রয়েছে। যদিও নভেল করোনাভাইরাসের বৈশ্বিক মহামারী চীন-মার্কিন বিরোধে নতুন পালক যুক্ত করেছে। তবুও বাণিজ্যিক সুবিধার কথা বিবেচনা করে দুই দেশ সয়াবিন বাণিজ্য ধীরে ধীরে সম্প্রসারণ করছে।
ইউএসডিএর তথ্য অনুযায়ী, গত বছর যুক্তরাষ্ট্র থেকে আন্তর্জাতিক বাজারে সব মিলিয়ে ৪ কোটি ৯৬ লাখ ৬৮ হাজার টন সয়াবিন রফতানি হয়েছে, যা আগের বছরের তুলনায় ৪ দশমিক ৪২ শতাংশ বেশি। অন্যদিকে একই সময়ে বিশ্বের শীর্ষ সয়াবিন আমদানিকারক দেশ চীনে কৃষিপণ্যটির সম্মিলিত আমদানি দাঁড়িয়েছে ৮ কোটি ৮০ লাখ টনে, যা আগের বছরের তুলনায় ৬ দশমিক ৬১ শতাংশ বেশি।