ক্রয় কর্মসূচির আকার ৬০ হাজার কোটি ইউরো বাড়িয়েছে ইসিবি

নভেল করোনাভাইরাস মোকাবেলায় নতুন করে ৬০ হাজার কোটি ইউরোর (৬৭ হাজার ৩০০ কোটি ডলার) ক্রয় কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছে ইউরোপিয়ান সেন্ট্রাল ব্যাংক (ইসিবি)। নতুন প্যাকেজ ঘোষণার ফলে প্যানডেমিক ইমার্জেন্সি পারচেজ প্রোগ্রাম (পিইপিপি) শীর্ষক কর্মসূচিটির আকার দাঁড়াবে ১ লাখ ৩৫ হাজার কোটি ইউরো। খবর ব্লুমবার্গ।

আর্থিক নীতিনির্ধারণী বৈঠক শেষে এক বিবৃতিতে ইসিবি জানিয়েছে, তাদের পিইপিপি কার্যক্রমটি চালু থাকবে আগামী বছরের জুন পর্যন্ত। আগের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী চলতি বছরের ডিসেম্বরে কর্মসূচিটির মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ছিল।

বিবৃতিতে ইসিবি বলেছে, ‘যতদিন না আমরা মনে করছি যে নভেল করোনাভাইরাসের প্রকোপ শেষ হয়েছে, ততদিন আমরা আমাদের নিট সম্পদ ক্রয় কর্মসূচি চালিয়ে যাব।’

ব্যাংকটি আরা জানিয়েছে, কর্মসূচিটির অধীনে যে সিকিউরিটিজ কেনা হবে, তার ম্যাচিউরিং প্রিন্সিপাল পেমেন্ট আগামী ২০২২ সালের শেষ অবধি পুনর্বিনিয়োগ করা হবে।

নীতিনির্ধারণী বৈঠকে ইউরো অঞ্চলের মূল সুদের হারগুলো অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে। অর্থাৎ ইউরোজোনের ভিত্তি সুদের হার শূন্য শতাংশই থাকবে। আর প্রান্তীয় ঋণ ও আমানতের হার দশমিক ২৫ শতাংশ ও ঋণাত্মক দশমিক ৫ শতাংশ অপরিবর্তিত থাকছে।

বৃহস্পতিবার বৈঠক শেষে ইসিবির প্রেসিডেন্ট ক্রিস্টিন লাগার্দে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘ইউরো অঞ্চলের অর্থনীতি সার্বিকভাবে কঠিন অবস্থায় রয়েছে। মূল্যস্ফীতির পূর্বাভাসও খুব একটা ভালো নয়। এ কারণেই আমরা ক্রয় কর্মসূচির আকার ও মেয়াদ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’

লাগার্দে জানান, এ পদক্ষেপ গ্রহণের বিষয়ে গভর্নিং কাউন্সিলের সবাই একমত ছিলেন। পর্ষদ সদস্যরা মনে করছেন, ৬০ হাজার কোটি ইউরোর এ ক্রয় প্যাকেজ ইউরো অঞ্চলের মূল্যস্ফীতি করোনাপূর্ব সময়ের কাছাকাছি পর্যায়ে নিয়ে যেতে সহায়তা করবে।

ইউরো অঞ্চলের সামষ্টিক অর্থনীতি পর্যালোচনা করতে গিয়ে লাগার্দে বলেন, ‘এ অঞ্চলের অর্থনীতি বর্তমানে নজিরবিহীন সংকোচনের মধ্যে রয়েছে। যদিও লকডাউনের বিধিনিষেধ শিথিল হতে শুরু করায় অর্থনৈতিক কার্যক্রমে উন্নতির কিছুটা আভাস পাওয়া যাচ্ছে। তবে অর্থনীতির সূচকগুলো আগের মাসগুলোয় যে হারে পড়েছিল, এখনকার উন্নতির গতি তার তুলনায় অনেক কম।’

বৃহস্পতিবার প্রকাশিত ইসিবির সর্বশেষ পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, চলতি বছর ইউরো অঞ্চলের প্রকৃত বার্ষিক জিডিপি ৮ দশমিক ৭ শতাংশ কমে যেতে পারে। ২০২১ সালে তা বাড়তে পারে ৫ দশমিক ২ শতাংশ। ২০২২ সালে প্রবৃদ্ধির হার দাঁড়াতে পারে ৩ দশমিক ৩ শতাংশ।

এর আগে মার্চে যে পূর্বাভাস দিয়েছিল ইসিবি, নতুন পূর্বাভাসে সংকোচনের হার তার চেয়ে ৯ দশমিক ৫ শতাংশীয় পয়েন্ট বাড়ানো হয়েছে। এর অর্থ, নতুন পূর্বাভাসে নির্ধারিত মেয়াদ শেষে জিডিপির প্রকৃত মান মার্চের পূর্বাভাসের চেয়ে ৪ শতাংশ কম হতে পারে বলে ধারণা করছে ইসিবি।

নতুন পূর্বাভাসে চলতি বছর মূল্যস্ফীতি দশমিক ৩ শতাংশে দাঁড়াবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এছাড়া ২০২১ সালে দশমিক ৮ শতাংশ ও ২০২২ সালে ১ দশমিক ৩ শতাংশ মূল্যস্ফীতির প্রত্যাশা করছে ইসিবি।

লাগার্দে বলেছেন, সাম্প্রতিক জরিপ ও সংগৃহীত বিভিন্ন তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যাচ্ছে, চলতি বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে ইউরো অঞ্চলের অর্থনীতিতে বড় ধরনের সংকোচন দেখা যেতে পারে। তবে তৃতীয় প্রান্তিক থেকে অর্থনীতির গতিপথ বদলে যেতে পারে। যদিও অর্থনৈতিক সংকোচনের গতি ও উত্তরণের মাত্রার পূর্বাভাস পুরোপুরি অনিশ্চিত একটি বিষয়।

এর আগে ইসিবির বড় ধরনের ক্রয় কর্মসূচি নিয়ে আপত্তি জানিয়েছিল জার্মানি। মে মাসের শুরুর দিকে দেশটির ফেডারেল কনস্টিটিউশনাল কোর্ট রায় দিয়েছিলেন যে ইসিবির এ কর্মসূচি কিছুটা অসাংবিধানিক। তবে সংবাদ সম্মেলনে লাগার্দে বলেছেন, ইসিবির কোনো বিষয়ে রায় দেয়ার এখতিয়ার রয়েছে কেবল ইউরোপিয়ান কোর্ট অব জাস্টিসের। এ আদালত ২০১৮ সালেই রায় দিয়েছেন যে ইসিবির ক্রয় কর্মসূচি ব্যাংকটির মেন্ডেট অনুযায়ীই সম্পন্ন হচ্ছে।

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *