কোয়ালকমের চিপসেট তৈরির আদেশ পেল স্যামসাং

দক্ষিণ কোরিয়াভিত্তিক স্যামসাং ফাইভজি স্মার্টফোনের জন্য কোয়ালকমের মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন প্রসেসর (এপি) বা চিপসেট তৈরির আদেশ পেয়েছে। অর্থাৎ মার্কিন চিপ নির্মাতা কোয়ালকমের স্ন্যাপড্রাগন ৪-সিরিজের প্রসেসরের ফাইভজি সংস্করণ তৈরি করতে যাচ্ছে স্যামসাং, যা আগামী বছর বৈশ্বিক বাজারে সরবরাহ শুরু হবে। খবর টেলিকম লিড।

বিশ্বের অন্যতম চিপসেট সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান কোয়ালকম। চীনভিত্তিক শাওমি ও অপোর পাশাপাশি মটোরোলার মতো মোবাইল ডিভাইস নির্মাতারা কোয়ালকমের নতুন চিপ ব্যবহারের সিদ্ধান্ত জানিয়েছে।

স্যামসাং স্থানীয়ভাবে চিপ উৎপাদন জোরদার করছে। এরই অংশ হিসেবে নিজ দেশে ষষ্ঠ চিপ প্রডাকশন লাইন নিয়ে কাজ শুরু করেছে প্রতিষ্ঠানটি। যেখানে মোবাইল ডিভাইস; বিশেষ করে স্মার্টফোন এবং কম্পিউটারের লজিক চিপ তৈরি করবে প্রতিষ্ঠানটি।

বৈশ্বিক চিপ বাজার খারাপ সময় পার করছে। বাজারটিকে যুক্তরাষ্ট্র-চীনের বাণিজ্য বিরোধের জেরে বড় ধরনের অস্থিরতার মধ্য দিয়ে যেতে হচ্ছে। বিশ্বের বৃহৎ চুক্তিভিত্তিক চিপ নির্মাতা তাইওয়ানভিত্তিক তাইওয়ান সেমিকন্ডাক্টর কোম্পানি (টিএসএমসি) লিমিটেডের অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্যামসাং। বাণিজ্যযুদ্ধের জেরে হুয়াওয়ের কাছ থেকে নতুন করে চিপ ক্রয়াদেশ নেয়া বন্ধ করেছে টিএসএমসি। এ পরিস্থিতিতে স্যামসাংয়ের নিজস্ব প্রযুক্তিতে তৈরি চিপের চাহিদা বাড়বে বলে মনে করা হচ্ছে। যে কারণে গত মে মাসে দক্ষিণ কোরিয়ায় চিপ উৎপাদন ক্ষমতা বাড়াতে ষষ্ঠ প্রডাকশন লাইন নির্মাণে কাজ শুরু করেছে প্রতিষ্ঠানটি।

বিবৃতিতে স্যামসাং জানায়, তাদের নতুন প্রডাকশন ফ্যাসিলিটি উৎপাদন সক্ষমতা বাড়াবে। আমরা আগামী বছরের দ্বিতীয়ার্ধ থেকে এক্সট্রিম আল্ট্রাভায়োলেট (ইইউভি) প্রযুক্তিতে ৫ ন্যানোমিটার চিপ উৎপাদন শুরুর প্রত্যাশা করছি। সেক্ষেত্রে নতুন প্রডাকশন লাইন কাজে লাগানো হবে। ধারণা করা হচ্ছে, সম্প্রসারিত প্রডাকশন লাইনে কোয়ালকমের জন্য ফাইভজি স্মার্টফোনের চিপসেট বানাবে প্রতিষ্ঠানটি।

গত মে মাসে ১ হাজার ২০০ কোটি ডলার ব্যয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অ্যারিজোনা অঙ্গরাজ্যে নতুন অ্যাডভান্সড চিপ উৎপাদন কারখানা নির্মাণের ঘোষণা দিয়েছিল টিএসএমসি। প্রতিষ্ঠানটির নতুন কারখানা স্থাপনের ঘোষণা আসার পর পরই নিজস্ব চিপ উৎপাদন সক্ষমতা বাড়ানোর ঘোষণা দেয় প্রতিদ্বন্দ্বী স্যামসাং। স্যামসাং বর্তমানে দক্ষিণ কোরিয়ায় মোট পাঁচটি এবং যুক্তরাষ্ট্রে একটি চিপ উৎপাদন কারখানা পরিচালনা করছে।

গত সপ্তাহে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহৎ স্মার্টফোন নির্মাতা হুয়াওয়ের ওপর নতুন বিধিনিষেধ জারি করেছেন মার্কিন বিচার বিভাগ। এর আওতায় মার্কিন প্রযুক্তি ব্যবহার করে চিপ উৎপাদন করে এমন অন্য কোনো দেশের প্রতিষ্ঠান হুয়াওয়ের সঙ্গে ব্যবসা করতে হলে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে লাইসেন্স নিতে হবে। যে কারণে হুয়াওয়ের কাছ থেকে চিপের নতুন ক্রয়াদেশ নেয়া বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছে টিএসএমসি। ওই সময় বিষয়টিকে স্যামসাংয়ের জন্য নতুন সম্ভাবনার দ্বার বলে উল্লেখ করা হয়েছিল। তবে নিষেধাজ্ঞার কবলে থাকা হুয়াওয়েকে চিপ সরবরাহ করতে পারবে না স্যামসাং। শুধু চিপসেট নয়; হুয়াওয়েকে ডিসপ্লে প্যানেল সরবরাহের ক্ষেত্রেও বাধার মুখে পড়তে যাচ্ছে স্যামসাং।

চীনভিত্তিক হুয়াওয়ের প্রিমিয়াম ডিভাইসের বৃহৎ দুই ডিসপ্লে প্যানেল সরবরাহকারী স্যামসাং ডিসপ্লে ও এলজি ডিসপ্লে। কিন্তু মার্কিন প্রশাসন হুয়াওয়ের ওপর আরোপিত বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞার পরিসর আরো বর্ধিত করায় উভয় প্রতিষ্ঠান ডিসপ্লে প্যানেল সরবরাহ বন্ধ করার বিষয়ে ভাবছে। বাস্তবে এমন হলে ডিভাইস উৎপাদনের জন্য ডিসপ্লে প্যানেল সংকটে পড়বে হুয়াওয়ে।

স্যামসাং ইলেকট্রনিকসের ডিসপ্লে প্যানেল নির্মাণ বিভাগ স্যামসাং ডিসপ্লে, যা শুধু হুয়াওয়ে নয়; মার্কিন প্রযুক্তি জায়ান্ট অ্যাপলের ডিভাইসেরও অন্যতম ওএলইডি ডিসপ্লে স্ক্রিন সরবরাহকারী। অন্যদিকে এলজি ইলেকট্রনিকসের ডিসপ্লে প্যানেল নির্মাণ বিভাগ এলজি ডিসপ্লে। এ প্রতিষ্ঠানটিও হুয়াওয়ের পাশাপাশি অ্যাপলের আইফোনের উন্নত ডিসপ্লে স্ক্রিন সরবরাহকারী।

স্যামসাং ডিসপ্লে বিষয়টি ঘিরে কোনো মন্তব্য করেনি। অন্যদিকে এলজি ডিসপ্লের এক বিবৃতিতে জানানো হয়, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন হুয়াওয়ের ওপর আরোপিত বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞার পরিসর বাড়িয়েছে। এখন থেকে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক না হলেও তাদের প্রযুক্তি ব্যবহার করে পণ্য উন্নয়ন করছে এমন প্রতিষ্ঠান হুয়াওয়ের সঙ্গে ব্যবসা করতে চাইলে বিশেষ লাইসেন্স নিতে হবে, যা এলজি ডিসপ্লের ব্যবসায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। কিন্তু তারা নিষেধাজ্ঞা অগ্রাহ্য করে মার্কিন প্রশাসনের রোষানলে পড়তে চায় না। যে কারণে হুয়াওয়েকে ডিসপ্লে প্যানেল সরবরাহ সীমিত করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। একই সঙ্গে ব্যবসার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে নতুন গ্রাহক অন্বেষণের কার্যক্রম অব্যাহত রাখবে বলে জানায় প্রতিষ্ঠানটি।

গত মাসে হুয়াওয়ে ইস্যুতে আরো কঠোর হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। হুয়াওয়ের ওপর দীর্ঘদিন ধরে মার্কিন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নিষেধাজ্ঞা আরোপিত রয়েছে। এছাড়া প্রতিষ্ঠানটিকে যুক্তরাষ্ট্রে কালো তালিকাভুক্ত করেছে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন। এর ফলে মার্কিন প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে হুয়াওয়ের ব্যবসা কার্যক্রম অনেকটা স্থবির হয়ে পড়েছে। নিজেদের পণ্য উন্নয়নে মার্কিন ব্যবসা অংশীদারদের কাছ থেকে সফটওয়্যার, হার্ডওয়্যার ও সেমিকন্ডাক্টর পণ্য ক্রয়ের পথ বন্ধ রয়েছে প্রতিষ্ঠানটির। এ পরিস্থিতির মধ্যে হুয়াওয়ে ইস্যুতে আরো কঠোর হওয়ার ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *