কোন্‌ দিকে যাচ্ছে সংগীতাঙ্গন

কোনো শো কিংবা কনসার্ট নেই। স্টুডিওপাড়ায় নেই ভিড়। না অডিও গানের, না সিনেমার। প্রফেশনাল স্টুডিওগুলো গত কয়েক মাস ধরেই প্রায় শূন্য। অডিও কোম্পানিগুলোর অফিসও বন্ধ। অনলাইনে চলছে টুকটাক কাজ। আর মিউজিক ভিডিওর শুটিং তো হচ্ছে না বললেই চলে। করোনাভাইরাসের প্রভাবে গত কয়েকমাস ধরেই একই চিত্র দেখা যাচ্ছে।

কোনো উন্নতি নেই। যার ফলে শিল্পী, গীতিকার, সুরকার থেকে শুরু করে অডিও কোম্পানিগুলোও বেশ খারাপ অবস্থার মধ্যে পড়েছে। শুধু তাই নয়, করোনার কারণে শিল্পী ও মিউজিশিয়ানরা সব থেকে অনিশ্চয়তায় পড়েছেন শো নিয়ে। কারণ করোনা কবে নাগাদ যাবে কিংবা গেলেও শো আয়োজন কতটুকু হবে তা নিয়ে শঙ্কা রয়েছে। শিল্পী-মিউজিশিয়ানদের আয়ের সব থেকে বড় উৎস হলো শো কিংবা কনসার্ট। অনেক শিল্পী ও মিউজিশিয়ানই চলতি পরিস্থিতি নিয়ে হতাশা ব্যক্ত করেছেন। আয়ের নতুন উৎস নিয়ে ভাবার জন্যও পরামর্শ দিয়েছেন কেউ কেউ। এদিকে সামনে কোরবানির ঈদ। প্রতি বছরই ঈদকে ঘিরে জমে ওঠে গানের বাজার। তবে এবার সেই অবস্থা নেই। গত রোজার ঈদেও গান প্রকাশ হয়েছে খুব কম সংখ্যক। কেবলমাত্র যাদের হোমস্টুডিও রয়েছে তারাই কেবল গান করতে পেরেছেন। অন্যদিকে এরইমধ্যে অনেক কোম্পানিও গান প্রকাশ বন্ধ রেখেছে কিংবা কমিয়ে দিয়েছে। যার ফলে নতুন গান থেকে আয়ের পথও বন্ধ হয়ে এসেছে অনেকটাই। সব মিলিয়ে করোনা পরিস্থিতির এই সময়ে সংগীতাঙ্গন কোন্‌ পথে যাচ্ছে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। অনেকেই এই সময়ে সরকারি প্রণোদনার কথা বলছেন, আবার অনেকে বলছেন নিজেদের গানের ন্যায্য রয়্যালিটি নিশ্চিত করার কথা। চলতি পরিস্থিতি নিয়ে গুণী সংগীতশিল্পী সামিনা চৌধুরী বলেন, বিষয়টি আমাকেও ভাবাচ্ছে। ভাবাচ্ছে শোবিজের সঙ্গে জড়িত সকলকে। কণ্ঠশিল্পী, যন্ত্রশিল্পী, নাট্যশিল্পী ও নৃত্যশিল্পীদের জীবন জীবিকার কথা খুব করে ভাবছিলাম। করোনার এই পরিস্থিতিতে কাজ বন্ধ। কিন্তু শিল্পীদেরও বাড়ি ভাড়া দিতে হবে, খাওয়া-দাওয়া করতে হবে, ব্যাংক লোন দিতে হবে। আবার করোনা এ পরিস্থিতিতে ঘরেই থাকতে হবে। সত্যি বলতে চ্যানেলগুলো শিল্পীদের ওপর চলে। গানের ব্যাপারে বলতে পারি যে, চ্যানেলগুলোতে আগের অনুষ্ঠান যা দেখানো হবে এবং যতবার দেখানো হবে, ততবার শিল্পী ও যন্ত্রশিল্পীদের সম্মানী দিতে পারে চ্যানেলগুলো। তাতে শিল্পীরা অন্তত কিছুটা চিন্তা মুক্ত থাকলো। করোনার আক্রমণ না থাকলে তো চ্যানেলগুলো লাইভ শোর আয়োজন করতোই। এখনো হচ্ছে, তবে খুব কম। তাও সব চ্যানেলে নয়। চ্যানেলগুলো এটি করলে দারুণ একটা সহযোগিতা হতে পারে। সরকার না পারলে চ্যানেলগুলো এ কাজটি করুক আমাদের জন্য। ত্রাণ নয়, পরিশ্রমের সম্মানীটুকুই দেবে চ্যানেলগুলো। কারণ সবার শেষে আমরা একটিই পরিবার। বিষয়টি নিয়ে চ্যানেলগুলোর দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। এ বিষয়ে কন্ঠশিল্পী দিনাত জাহান মুন্নী বলেন, আমরা যারা গানবাজনা করি তাদের আয়-রোজগারের সকল পথই প্রায় বন্ধ। এখন আমাদের কাজের মূল ক্ষেত্র টেলিভিশন। তবে নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে গান করতে হবে। করোনাকাল এক অনিশ্চিত সময়। সবাই  যেমনি ঝুঁকি নিয়ে চাকরি করছেন, আমাদের গানটাও আমাদের পেশা। এদিকে করোনায় এরইমধ্যে আক্রান্ত হয়েছে সংগীতাঙ্গনের বেশ ক’জন মানুষ। এরমধ্যে রয়েছেন সংগীতশিল্পী ও গানবাংলা চ্যানেলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাপস ও তার স্ত্রী ফারজানা মুন্নী, প্রতিথযশা যন্ত্রশিল্পী রিচার্ড কিশোরসহ অনেকে। এদিকে এরইমধ্যে শিল্পকলা একাডেমির মাধ্যমে সরকারি সহায়তা পেয়েছেন বেশ কিছু শিল্পী ও মিউজিশিয়ান। এমন খারাপ সময়ে সংগীতাঙ্গনের জন্য সরকারি প্রণোদনা অব্যাহত রাখার কথাও বলছেন সংগীতবোদ্ধারা।

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *