কী আছে প্রিয়াংকার অসমাপ্ত স্মৃতিকথায়?

প্রিয়াংকা চোপড়া জোনাস এখন রীতিমতো বৈশ্বিক তারকা। বলিউডের পাশাপাশি হলিউডেও এখন তার সরব উপস্থিতি। সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে তার স্মৃতিচারণমূলক গ্রন্থ আনফিনিশড: আ মেমোয়ার। বইয়ের নাম থেকে বোঝাই যাচ্ছে, ভবিষ্যতে তিনি তার জীবনস্মৃতি নিয়ে আরো বই লিখবেন। মূলত ক্যারিয়ারের মধ্যজীবনে তিনি ফিরে তাকিয়েছেন তার প্রাথমিক উত্থান পর্বের দিকে। প্রিয়াংকার ব্যক্তিজীবন ও ক্যারিয়ারের মোড় ঘোরানো সব বাঁক কিংবা বিতর্কিত ঘটনা সম্পর্কে অজানা সব তথ্য পাওয়া যাচ্ছে এ বইয়ে। প্রিয়াংকার অসমাপ্ত স্মৃতিকথা থেকে কিছু অংশ—

মুখ ফসকে মাদার তেরেসার নাম

২০০০ সালে প্রিয়াংকার মাথায় ওঠে মিস ইন্ডিয়া ওয়ার্ল্ড খেতাব। সে বছরই আবার জিতে নেন মিস ওয়ার্ল্ড টাইটেল। এ অনুষ্ঠানে একটি প্রশ্ন ছিল—আজকের দিনে জীবিত নারীদের মধ্যে কাকে সবচেয়ে সফল মনে করেন? জবাবে প্রিয়াংকা মাদার তেরেসার নাম নেন। অথচ মাদার তেরেসা মারা গিয়েছিলেন সেই ১৯৯৭ সালে।

এ অস্বস্তিকর ভুল বিষয়ে একজন ইভেন্ট অর্গানাইজার তাকে সতর্ক করেন এবং আসন্ন সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয়ে তাকে প্রশ্নের উত্তর দিতে প্রস্তুতি নেয়ার পরামর্শ দেন। প্রিয়াংকার ‘সার্ভাইভাল ইনস্টিংক্ট’ সফলতার সঙ্গেই সেদিন পরিস্থিতি সামলেছিলেন। প্রিয়াংকা লিখেছেন, ‘মনে আছে সেদিন আমি বলেছিলাম যে আমাকে এমন সম্মান দেয়ার জন্য কৃতজ্ঞ এবং এটা খুব অসাধারণ ব্যাপার যে আমরা যে দুনিয়ায় বাস করছি সেখানে ভুলগুলো ক্ষমা করা হয়।’

প্লাস্টিক চোপড়া

প্রিয়াংকা লিখেছেন, ২০০১ সালে তার নাকের ভেতরে একটি পলিপ পাওয়া যায়। কিন্তু সেটা সার্জারি করে ফেলে দেয়ার সময় ডাক্তার একটা ভুল করে বসেন। এরপর সেটা ঠিক করতে তাকে আরো কয়েকবার সার্জারি করাতে হয়। এ কারণেই সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তার চেহারায় বেশ পরিবর্তন এসেছে এবং জুটেছে ‘প্লাস্টিক চোপড়া’ টাইটেল। এবং বইয়ে লিখেছেন, ‘এ টাইটেল আমার পুরো পেশাদার জীবনে পিছু ছাড়েনি।’

ত্বক ফর্সাকারী ক্রিমের অ্যাম্বাসেডর

প্রিয়াংকা চোপড়া যতই তারকা খ্যাতি পেয়েছেন ততই বিভিন্ন কনজিউমার ব্র্যান্ড তাকে তাদের পণ্যের বিজ্ঞাপনে ব্যবহারে আগ্রহ দেখিয়েছে। এগুলোর মধ্যে আছে বিউটি ও স্কিন কেয়ার কোম্পানিগুলোও। এরা ত্বকের ফর্সা রঙকে নারীর সৌন্দর্যের অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে দেখানো হয়। প্রিয়াংকা স্বীকার করেছেন, এসব বিজ্ঞাপনে তার ত্বককে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি ফর্সা হিসেবে দেখানো হয়েছে। প্রিয়াংকা লিখেছেন, ত্বকের রঙের প্রতি এমন বর্ণবাদী দৃষ্টিভঙ্গিকে অনুমোদন এমনকি প্রমোট করায় প্রিয়াংকা লজ্জিত বোধ করেন। এবং পরবর্তী সময়ে সেসব ব্র্যান্ড থেকে নিজেকে দূরে রেখেছেন। প্রিয়াংকা চোপড়া লিখেছেন, ‘…সেটা ছিল আমার ক্যারিয়ারের সবচেয়ে বড় ভুল পদক্ষেপ এবং এটা আমার গভীর অনুশোচনার একটি। এবং আমি এজন্য গভীরভাবে দুঃখিত।’

ইনসাইডার-আউটসাইডার

হিন্দি ছবির দুনিয়ায় আউটসাইডার হিসেবে জায়গা করে নিতে সংগ্রাম করতে হয়েছিল প্রিয়াংকাকে। এ বিষয়ে তিনি তার বাইয়ে লিখেছেন, ‘স্টুডিওগুলো বেশির ভাগই কোনো না কোনো পরিবারের মালিকানাধীন। তাদের কাছে আমাকে বারবার প্রমাণ করতে হয়েছে যে আমি তাদের টেবিলে একটা আসন পাওয়ার যোগ্য।’ এছাড়া তাকে মাঝে মাঝেই তার ত্বকের রঙের জন্য স্টুডিও-সংশ্লিষ্টদের কাছে শুনতে হয়েছে ‘বেশি কালো’।

কোয়ান্টিকো এবং হলিউডে অবস্থান তৈরি

আমেরিকান টেলিভিশন সিরিজে প্রথমবারের মতো কোনো লিড চরিত্রে দক্ষিণ এশিয়ার একজন তারকাকে নেয়া হয় এবং তিনি প্রিয়াংকা চোপড়া। এটা তার পেশাদার জীবনেও বড় পরিবর্তন নিয়ে আসে। ২০১৫-১৮ সালের মধ্যে কোয়ান্টিকোর তিনটি সিজন প্রকাশিত হয়েছে। সিরিজে প্রিয়াংকাকে দেখা যায় একজন এফবিআই এজেন্টের চরিত্রে।

প্রিয়াংকাকে স্বাগত জানাতে আমেরিকার মিডিয়া কিছুটা সময় নিয়েছিল। ‘আমি মাথা নিচু রেখে কেবল কাজ করে গেছি।’ প্রথম সিজন জনপ্রিয় হওয়ার পর আমেরিকার মিডিয়ায় প্রিয়াংকার স্বীকৃতি মেলে। ম্যাগাজিনের প্রচ্ছদ, রেড কার্পেটে প্রিয়াংকাকে দেখা যেতে থাকে।

নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে ছবি নিয়ে বিতর্ক

২০১৭ সালে প্রিয়াংকা বার্লিনে ছিলেন বেওয়াচ ছবির প্রচারণায়। সেখানে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে প্রিয়াংকার একটি ছবি ঘিরে বিতর্ক শুরু হয়। নরেন্দ্র মোদি তখন জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মের্কেলের সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য বার্লিনে অবস্থান করছিলেন।

মোদির সঙ্গে সাক্ষাতের সময় প্রিয়াংকা তার পোশাকের জন্য সমালোচিত হতে থাকেন। এ বিষয়ে বইয়ে তার বক্তব্য এ রকম—প্রধানমন্ত্রী এবং আমি একই হোটেলে অবস্থান করছিলাম। আমি তার দপ্তরে যোগাযোগ করি একটি সাক্ষাতের অনুরোধ নিয়ে। এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রিয়াংকা, তার ভাই ও আমেরিকান এজেন্ট নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে কয়েক মিনিট সময় কাটান এবং বেওয়াচের প্রচারণার সময় পরা পোশাকটিই তখন তার গায়ে ছিল।

ছবিতে তার খোলা পা এবং পায়ের ওপর পা তুলে বসা নিয়েও সমালোচনা শুরু হয়। তিনি দেশের প্রধানমন্ত্রীকে অসম্মান করেছেন বলেও অভিযোগ ওঠে। প্রিয়াংকা লিখেছেন, এসব সমালোচনা-অভিযোগ শুনে তিনি ‘ক্ষুব্ধ এবং দ্বিধান্বিত’ হয়ে পড়েছিলেন। ‘মানুষের ক্ষোভের জবাব দিতে গিয়ে সে রাতে ডিনারের সময় শর্ট স্কার্ট পরে মায়ের সঙ্গে একটা ছবি তুলি। ছবিতেও আমার এক পা আরেক পায়ের ওপর তোলা ছিল। ছবিটা অনলাইনে পোস্ট করে আমি ক্যাপশন দিয়েছিলাম, ‘পরিবারের মধ্যে এসব চলে।’ যা হোক, সব হাসি-ঠাট্টা পাশে সরিয়ে রেখে আমি অনুভব করেছিলাম যে আমি যথেষ্ট সম্মান বজায় রেখেই নিজেকে উপস্থাপন করেছিলাম।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন সময় নেতিবাচক সমালোচনা, বিদ্রুপ মোকাবেলা করতে গিয়ে এ প্লাটফর্মগুলোর সঙ্গে তার সম্পর্কও বদলে গেছে। বইয়ে এ বিষয়ে লিখেছেন, ‘যে সম্পর্কটা একসময় ছিল উপভোগ্য ও ইতিবাচক, সেটিই একসময় হয়ে ওঠে ভয় আর অবিশ্বাসের…আমি দেখেছি অনেক সময় কথা বলা উচিত আবার অনেক সময় চুপ করে থাকাই ভালো। আমিও তাই আমার মতো করেই যুদ্ধটা চালিয়ে যাচ্ছি।’

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *