কার্বন নিঃসরণ বন্ধে ধনী দেশগুলোকে প্রধান ভূমিকায় থাকার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর

বৈশ্বিক উষ্ণায়ন ঠেকাতে কার্বন নিঃসরণ বন্ধে ধনী দেশগুলোকে প্রধান ভূমিকা পালনের আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, পৃথিবীকে বাঁচাতে হলে আগামীকাল নয়, আজই পদক্ষেপ নেয়ার সময়। গতকাল ফরেন পলিসি ভার্চুয়াল ক্লাইমেট সামিটে ভিডিও বার্তায় এ আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।

শেখ হাসিনা বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কোনো নির্দিষ্ট সীমারেখা নেই। যদি একটি দেশ কার্বন নিঃসরণ করে, তবে এতে প্রতিটি দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সুতরাং প্রতিটি দেশকে এর বিরুদ্ধে ভূমিকা পালন করতে হবে। ধনী দেশগুলো, বিশেষ করে জি-২০ভুক্ত দেশগুলোর উচিত বৈশ্বিক কার্বন নিঃসরণ বন্ধে প্রধান ভূমিকা পালন করা। নিচের দিকে ১০০টি দেশ ৩ দশমিক ৫ শতাংশ বৈশ্বিক গ্রিনহাউজ গ্যাস কার্বন নিঃসরণের জন্য দায়ী, যেখানে জি-২০ দেশগুলো ৮০ শতাংশ কার্বন নিঃসরণের জন্য দায়ী।

জলবায়ু পরিবর্তনের হুমকির কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, এ সময়ে কভিড-১৯ মহামারীর পর সম্ভবত সবচেয়ে বেশি আলোচিত বিষয় জলবায়ু পরিবর্তন ইস্যু। জলবায়ু পরিবর্তন প্রতিটি দেশের জন্য এখন অনেক বড় হুমকি, বিশেষ করে বাংলাদেশের মতো ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর জন্য।

ক্রমান্বয়ে বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধির কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বৈশ্বিক তাপমাত্রা বাড়ছে, এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। এ তাপমাত্রা বৃদ্ধিই সব অনিষ্টের মূল। ক্রমাগত বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি মানবজাতির জন্য অত্যন্ত উদ্বেগের বিষয়। প্যারিস জলবায়ু চুক্তি অনুযায়ী আমরা বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে রাখতে সম্মত হয়েছিলাম। কিন্তু তাপমাত্রা বৃদ্ধির জন্য দায়ী গ্রিনহাউজ গ্যাস নিঃসরণ বন্ধে বাস্তব কিছু হয়নি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বাংলাদেশের মতো দেশগুলো বন্যা, খরা, জলোচ্ছ্বাস, বজ্রপাতসহ ঘন ঘন বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং এসব দুর্যোগের ধ্বংসযজ্ঞের মুখোমুখি হচ্ছে। বর্তমানে বাংলাদেশের ওপর দিয়ে দাপদাহ বয়ে যাচ্ছে। গত বছর বন্যায় বাংলাদেশের এক-তৃতীয়াংশ পানির নিচে নিমজ্জিত হয়। সুপার সাইক্লোন আম্পানসহ বেশ কয়েকটি ঘূর্ণিঝড় বাংলাদেশে আঘাত করে। আর এ সবকিছু হচ্ছে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে।

করোনা পরিস্থিতির কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, গোটা বিশ্ব কভিড-১৯ মহামারীর মধ্যে একটি কঠিন সময় পার করছে। কভিড-১৯ ভাইরাসে বিপুলসংখ্যক মানুষ মারা গেছে এবং প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ সংক্রমিত হচ্ছে। প্রাণঘাতী এ ভাইরাসের ছোবল থেকে আমাদের সবার ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা দরকার।

মিয়ানমার থেকে জোরপূর্বক বিতাড়িত ১ দশমিক ১ মিলিয়ন রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেয়ার কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, কক্সবাজার এলাকার পরিবেশ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত।

নিজস্ব অর্থায়নে বাংলাদেশের জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ড গঠনের কথা উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, প্রতি বছর জলবায়ু পরিবর্তনজনিত অভিযোজন ও সুরক্ষা ব্যবস্থা নির্মাণে বাংলাদেশ প্রতি বছর গড়ে জিডিপির ২ দশমিক ৫ শতাংশ ব্যয় করছে, যা ৫ বিলিয়ন ডলারের সমান। বাংলাদেশ ১২ হাজার আশ্রয় কেন্দ্র ও উপকূলে দুই লাখ হেক্টর উপকূলীয় সবুজ বেষ্টনী তৈরি করার কথা উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।

ভিডিওবার্তায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্যারিস জলবায়ু চুক্তিতে ফিরে আসায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সিদ্ধান্তের প্রশংসা করেন।

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *