কাবা শরীফের কালো পাথরের রহস্যময় ছবি : যেখানে বিজ্ঞানও মাথা নত করে!!

কোভিডের সময় পাথরের কাছে ভিড় নেই, সেই সুযোগে সৌদি সরকারের দুই পবিত্র মসজিদের জেনারেল প্রেসিডেন্সির ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ আল-হাজর আল-আসওয়াদ বা ব্ল্যাক স্টোনের ছবি নিয়েছে ৭ ঘন্টা ধরে। ১,০৫০ টি ছবি তোলা হয়েছে প্রতিটি ছবি ছিল ১৬০ গেগাবাইটের এবং অবিশ্বাস্য ৪৯,০০০ মেগাপিক্সেলের।

তারপর ৫০ ঘন্টা লেগেছে ফোকাস স্ট্যাকিং নামে একটি কৌশল ব্যবহার করে সমাপ্ত ছবিগুলি শার্প করতে। বিভিন্ন ফোকাস পয়েন্টের সাথে একাধিক ফটো একত্রিত করে, ডিজিটাল ফটোগ্রাফিতে ফোকাস স্ট্যাকিং করা হয়।

গত সোমবার ৪মে একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে সৌদি তথ্য মন্ত্রণালয় এই ছবিগুলি প্রকাশ করে। এখন যে কেউ প্রথমবারের মতো একটি বর্ধিত ডিজিটাল ফটোতে পাথরটিকে অতি নিকটে এবং ব্যক্তিগতভাবে দেখতে পাবেন।
এ বি এম কামরুল হাসান: বৈশ্বিক তথ্য ভাণ্ডারে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের অবস্থান ≣ [১] মঠবাড়িয়ায় স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থকদের ওপর হামলার ঘটনায় ৭৯ জনকে আসামী করে মামলা ≣ সিলেটে বাড়তে শুরু করেছে নদ-নদীর পানি

মুসলমানরা কালো পাথর বা অন্য কোন আংটির পাথরকে ভালমন্দের মালিক ভাবে না।
ওমর (রা) বলেন, “আমি স্পষ্টই জানি যে তুমি একটি পাথর মাত্র। তুমি আমাদের ভালো মন্দের, লাভ লোকসানের মালিক নও। বিশ্বনবী (সা)কে চুম্বন দিতে না দেখলে আমি তোমায় চুম্বন দিতাম না” (বুখারী)।
সেই সময় থেকে কাবা শরীফ তওয়াফ করতে গেলে আল-হাজার আল আসওয়াদে স্পর্শ, চুম্বন বা হাত নাড়িয়ে ইশারা করা হয়।
কালো পাথর চুম্বনের তাৎপর্য হচ্ছে-একই পাথরে একই স্থানে জাতি ভেদ নির্বিশেষে লাখ লাখ হাজী শুধু আল্লাহর বান্দা হিসাবে একত্রিত হয়ে সবার ঠোঁট মুখ, হাত–এক ঠোঁট, মুখ, হাত হয়ে যায়। একজনের চুম্বনের জায়গায় অন্যজন বারবার চুম্বন দিতে ঘৃণা করে না, অস্বীকার করে না, বরঞ্চ কুস্তীর মতো ঠেলে ঠুলে চুমু দিতে যায় প্রতিদিন প্রচন্ড ভিড়ের মধ্যে।

হাজী মা বোনেরাও গায়ের জোরে এগিয়ে যায় সামনে কিন্তু আল্লাহর এমনই কুদরত, সেইখানে পুরুষ ও নারীর শরীরের ব্যাপার কারো মাথায়ই আসেনা। চুমু দিয়ে এসে সবার চোখে মুখে সে কি তৃপ্তি, মনে কি আনন্দ, “আলহামদুলিল্লাহ চুমু দিতে পেরেছি!
ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃ) বলেন, “হাজরে আসওয়াদ নামে কাল পাথরটি জান্নাত থেকে আসে, এটা দুধের চেয়েও সাদা ছিল, কিন্তু আদম সন্তানের পাপ এটাকে কাল করেছে”।
তিরমিজি ৮৭৭, সুনানে আহমদ ২৭৯২, ইবনে খুজায়মা হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন ৪/২১৯)।
৭৫৬ সালে হজরত আবদুল্লাহ বিন জোবায়েরের শাসনামলে কাবা শরিফে আগুন লাগলে হাজরে আসওয়াদ তিন টুকরা হয়ে যায়। তিনি ভাঙা টুকরাগুলো রুপার ফ্রেমে বাঁধিয়ে দেন।

শিয়াদের ইতিহাসে বলা হয় ৯৩০ সালে বাহরাইনের কারমাতিয়ান রাজা আবু তাহের পাথরটি জবরদস্তী আল দিরার মসজিদে নিয়ে গেলে আব্বাসীয় নেতারা বিপুল টাকার বিনিময়ে পাথরটি ৯৫২ সালে মক্কায় ফিরিয়ে আনেন। তখন নাকি আটটি টুকরো পাওয়া গিয়েছিলো।

বর্তমান ছবিগুলি পুরানো দুটো ইতিহাসকে কিছুটা ভাবনায় ফেলে দিবে। ছবির কালো কালো গ্রানাইট ধরনের খেজুরের সাইজের আটটি ছোট পাথরকে সেই ভাঙা টুকরা বলা হলেও লালচে অংশ সহ পুরো ছবিটি একটি পাথরের মতোই লাগে গ্রহান্তরের উল্কা পিণ্ডের মতো। যদিও একটি ইতিহাসে বলা হয়েছে, আরেকটি পাথরের মধ্যে ভাঙা আটটি টুকরো বসানো হয়েছিলো।
এখন হাই রিজলিউশন ক্যামেরার ছবি এসেছে। ভবিষ্যতে দুই মসজিদের প্রেসিডেন্সী আরো সুযোগ দিলে আরো অনেক বৈজ্ঞানিক তথ্য পাওয়া যাবে।
একটি উল্কাপিন্ড নিরীক্ষা করে বৈজ্ঞানিকরা এখন হিসাব করে বলতে পারেন এটি ইউনিভার্সের কোন এলাকা থেকে এসেছে এবং কত বছর লেগেছে পৃথিবীতে পৌঁছতে।

যেহেতু নবী (স) বলেছেন এটি জান্নাতের পাথর। আরো একটি বর্ণনায় এসেছে আদম (আ) জান্নাত থেকে পৃথিবীতে জার্নি করার সময় পাথরটি তার লাগেজে ছিলো, আরেক বর্ণনায় তার স্পেস বাহনের সিটের অংশ ছিলো।
যাই হয়ে থাকুক আল্লাহই ভালো জানেন। তবে উল্কা পিন্ড হলে বিজ্ঞানীরা ধারণা করতে পারবে আদম (আ) যে স্থান থেকে পাথরটি নিয়ে জার্নি শুরু করেছিলেন সেটি কি আমাদের জানা ইউনিভার্সের কোন স্থান নাকি এর বাইরে কোন অজানা ডাইমেনশন।

পৃথিবীর মুসলমানদের নতুন প্রজন্ম এখন ধর্মকে বিজ্ঞানের আলোতে বুঝতে চেষ্টা করছে, এই ছবিগুলি অনেক মিথ নিয়ে পরিষ্কার ধারণা দেয়ার জন্যে চিন্তাশীলদের অনেক সহায়তা করবে।

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *