করোনা মহামারীতে বৈশ্বিক ইস্পাত উৎপাদনে ধস

নভেল করোনাভাইরাসের মহামারীর প্রভাব অন্যান্য খাতের মতো বৈশ্বিক ইস্পাত উৎপাদন খাতেও পড়েছে। চলতি বছরের শুরু থেকেই ধাতুটির উৎপাদনে নিম্নমুখী প্রবণতা পড়েছে। এ ধারাবাহিকতায় ২০২০ সালের প্রথমার্ধে (জানুয়ারি-জুন) বিশ্বজুড়ে অপরিশোধিত ইস্পাত উৎপাদন আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৬ শতাংশ কমেছে। এর মধ্যে জুনে কমেছে ৭ শতাংশ। শীর্ষ ৬৪ উৎপাদনকারী দেশে পণ্যটির উৎপাদনের তথ্য বিশ্লেষণ করে সর্বশেষ মাসভিত্তিক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে ওয়ার্ল্ড স্টিল অ্যাসোসিয়েশন (ডব্লিউএসএ)। খবর রয়টার্স ও মেটাল বুলেটিন।

ওয়ার্ল্ড স্টিলের প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, চলতি বছরের প্রথমার্ধে সংস্থাভুক্ত ৬৪ দেশে সব মিলিয়ে ৮৭ কোটি ৩১ লাখ টন অপরিশোধিত ইস্পাত উৎপাদন হয়েছে, আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় যা ৬ শতাংশ কম। শিল্প ধাতুটির শীর্ষ উৎপাদনকারী অঞ্চল এশিয়াসহ ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকায় এ সময় উৎপাদন কমেছে। পণ্যটির উৎপাদন সবচেয়ে বেশি কমেছে ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত (ইইউ) দেশগুলোয়। এর পরে রয়েছে যথাক্রমে উত্তর আমেরিকা ও এশিয়া।

প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, জানুয়ারি-জুন সময়ে এশিয়ার দেশগুলো সম্মিলিতভাবে ৬৪ কোটি ২০ লাখ টন অপরিশোধিত ইস্পাত উৎপাদন করেছে, ২০১৯ সালের একই সময়ের তুলনায় যা ৩ শতাংশ কম। একই সময়ে ইইউভুক্ত দেশগুলো উৎপাদন করেছে মোট ৬ কোটি ৮৩ লাখ টন ইস্পাত, আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় যা ১৮ দশমিক ৭ শতাংশ কম। এদিকে চলতি বছরের প্রথমার্ধে ২০১৯ সালের একই সময়ের তুলনায় ১৭ দশমিক ৬ শতাংশ কমে উত্তর আমেরিকার ইস্পাত উৎপাদন নেমেছে ৫ কোটি ২ লাখ টনে।

এদিকে সর্বশেষ মাস জুনে বিশ্বজুড়ে মোট ১৪ কোটি ৮৩ লাখ টন অপরিশোধিত ইস্পাত উৎপাদিত হয়েছে বলে জানিয়েছে ওয়ার্ল্ড স্টিল। আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ধাতুটির উৎপাদন কমেছে ৭ শতাংশ। চীন ব্যতীত প্রায় প্রতিটি শীর্ষ উৎপাদনকারী দেশে পণ্যটির উৎপাদনে মন্দা ভাব বজায় রয়েছে।

জুনে চীনের কারখানাগুলোয় উৎপাদন হয়েছে মোট ৯ কোটি ১৬ লাখ টন অপরিশোধিত ইস্পাত, আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় দেশটিতে ধাতুটির উৎপাদনে প্রবৃদ্ধি মিলেছে ৪ দশমিক ৫ শতাংশ। তবে পণ্যটির দ্বিতীয় শীর্ষ উৎপাদনকারী দেশ ভারতে উৎপাদন ব্যাপক হারে কমেছে। আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ২৬ দশমিক ৩ শতাংশ কমে এ সময় দেশটি উৎপাদন করেছে মাত্র ৬৯ লাখ টন ইস্পাত। এদিকে চলতি বছরের জুনে জাপানের ইস্পাত উৎপাদন আগের বছরের একই মাসের তুলনায় ৩৬ দশমিক ৩ শতাংশ কমে ৫৬ লাখ টনে নেমেছে। পণ্যটির অন্যতম শীর্ষ উৎপাদনকারী দেশ দক্ষিণ কোরিয়া গত মাসে ৫১ লাখ টন ইস্পাত উৎপাদন করেছে, আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় যা ১৪ দশমিক ৩ শতাংশ কম।

ইইউভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে ইস্পাত উৎপাদন সবচেয়ে বেশি কমেছে ফ্রান্সে। দেশটি গত মাসে সব মিলিয়ে আট লাখ টন অপরিশোধিত ইস্পাত উৎপাদন করেছে। আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় দেশটিতে পণ্যটির উৎপাদন কমেছে ৩৪ দশমিক ৯ শতাংশ। এদিকে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৩১ দশমিক ৫ শতাংশ কমে একই পরিমাণ ইস্পাত উৎপাদন করেছে স্পেন। এছাড়া অঞ্চলটির শীর্ষ ইস্পাত উৎপাদনকারী দেশ জার্মানির গত মাসের উৎপাদন দাঁড়িয়েছে ২৫ লাখ টনে, আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় যা ২৭ দশমিক ৩ শতাংশ কম। একই সময়ে এক বছরের ব্যবধানে ১৩ শতাংশ কমে ইতালিতে ইস্পাত উৎপাদন নেমেছে ১৮ লাখ টনে।

অন্যদিকে গত মাসে যুক্তরাষ্ট্র উৎপাদন করেছে মোট ৪৭ লাখ টন অপরিশোধিত ইস্পাত, আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় দেশটিতে শিল্প ধাতুটির উৎপাদন কমেছে ৩৪ দশমিক ৫ শতাংশ।

এর বাইরে গত জুনে সিআইএসভুক্ত (কমনওয়েলথ অব ইনডিপেনডেন্স স্টেটস) দেশগুলোয় সম্মিলিতভাবে অপরিশোধিত ইস্পাত উৎপাদন দাঁড়িয়েছে ৭৯ লাখ টনে, আগের বছরের জুনের তুলনায় যা ৫ শতাংশ কম। এর মধ্যে ইউক্রেনের ইস্পাত উৎপাদন ২০১৯ সালের জুনের তুলনায় ৯ শতাংশ বেড়ে ১৮ লাখ টনে উন্নীত হয়েছে। ধাতুটির উৎপাদনে প্রবৃদ্ধি মিলেছে তুরস্কেও। গত মাসে দেশটি ২৮ লাখ টন ইস্পাত উৎপাদন করেছে, আগের বছরের তুলনায় যা ৪ দশমিক ১ শতাংশ বেশি।

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *