করোনা মহামারীতেও এশিয়ায় রফতানি বাড়িয়েছে ব্রাজিল

করোনা মহামারীতে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম ব্রাজিল। সংক্রমণ ও মৃত্যু দুই তালিকায় যুক্তরাষ্ট্রের পর দ্বিতীয় শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে দেশটি। মহামারীতে বড় রকমের ক্ষতির মুখে পড়েছে দেশটির ব্যবসা-বাণিজ্য, অর্থনীতি। তবে করোনাকালেও চীনসহ এশিয়ার দেশগুলোয় অপরিশোধিত জ্বালানি তেল রফতানি বাড়িয়েছেন ব্রাজিলের রফতানিকারকরা। চলতি বছরের প্রথমার্ধে (জানুয়ারি-জুন) এশিয়ায় ব্রাজিলের জ্বালানি তেল রফতানি ৩০ শতাংশ বেড়েছে। জুনে জ্বালানি পণ্যটির রফতানিতে নতুন রেকর্ড হয়েছে। খবর রয়টার্স ও অয়েলপ্রাইসডটকম।

জ্বালানি পণ্যের তথ্য বিশ্লেষণকারী প্রতিষ্ঠান রেফিনিটিভ ইকনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি বছরের জানুয়ারি-জুন সময়ে ব্রাজিল থেকে এশিয়ার দেশগুলোয় প্রতিদিন গড়ে ১০ লাখ ৭০ হাজার ব্যারেল অপরিশোধিত জ্বালানি তেল রফতানি হয়েছে। আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় গত ছয় মাসে ব্রাজিল থেকে এশিয়ার বাজারে জ্বালানি পণ্যটির রফতানি বেড়েছে ৩০ শতাংশ। এর মধ্যে গত জুনে এশিয়ার বাজারে প্রতিদিন গড়ে ১৬ লাখ ২০ হাজার ব্যারেল অপরিশোধিত জ্বালানি তেল রফতানি করেছেন ব্রাজিলের রফতানিকারকরা। ২০১৯ সালের একই সময়ের তুলনায় গত জুনে এ বাণিজ্য প্রায় তিন গুণ বেড়ে নতুন রেকর্ড হয়েছে। সবচেয়ে বেশি রফতানি বেড়েছে চীনের বাজারে।

করোনা মহামারীর মধ্যে এশিয়ার দেশগুলোয় অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের রফতানি বেড়ে যাওয়ায় চাপে থাকা ব্রাজিলীয় অর্থনীতিতে কিছুটা হলেও স্বস্তি ফিরবে বলে মনে করছেন খাতসংশ্লিষ্টরা। ব্রাজিলের রাষ্ট্রায়ত্ত জ্বালানি প্রতিষ্ঠান পেট্রোব্রাসের প্রধান নির্বাহী রবার্তো ক্যাস্টেল্লো ব্রাঙ্কো বলেন, তুনামূলক কম দাম করোনাকালেও ব্রাজিল থেকে জ্বালানি তেলের রফতানি বাড়িয়েছে। ব্রাজিলের প্রতিষ্ঠানগুলো আরো বেশি পরিমাণে উত্তোলন করতে পারলে এশিয়ার বাজারে অপরিশোধিত জ্বালানি তেল বিক্রি আরো বাড়ানো যাবে।

তিনি আরো বলেন, চীন আমাদের কাছ থেকে জ্বালানি তেল কেনার জন্য মুখিয়ে রয়েছে। গত ছয় মাসে ব্রাজিল থেকে রফতানি হওয়া ৭০ শতাংশ অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের গন্তব্য ছিল চীন।

মহামারীর ধাক্কা সামাল দিয়ে চাপে থাকা অর্থনীতির গতি ফেরাতে চাইছে ব্রাজিল সরকার। এজন্য অপরিশোধিত জ্বালানি তেল রফতানি বাড়ানোর চেষ্টা করছে দেশটি। চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে একটি অফশোর খনি থেকে উত্তোলন বাড়ানোর জের ধরে এশিয়ার দেশগুলোয় জ্বালানি তেলের রফতানিতে প্রবৃদ্ধি দেখেছে ব্রাজিল। অন্যদিকে চীনসহ আমদানিনির্ভর এশিয়ার দেশগুলো তুলনামূলক কম দামের সুযোগ কাজে জ্বালানি তেল আমদানি বাড়ানোর চেষ্টায় ছিল। এ দুইয়ের মেলবন্ধনে এশিয়ার দেশগুলোর সঙ্গে ব্রাজিলের জ্বালানি তেল বাণিজ্য পোক্ত হয়ে উঠেছে।

তবে আগামী দিনগুলোয় এশিয়ার বাজারে ব্রাজিলের অপরিশোধিত জ্বালানি তেল রফতানিতে বিদ্যমান প্রবৃদ্ধির গতি শ্লথ হয়ে আসার সম্ভাবনা দেখছেন খাতসংশ্লিষ্টরা। এর প্রথম কারণ অভ্যন্তরীণ বাজারে জ্বালানি তেলের চাহিদা ধীরে ধীরে বাড়ছে। ফলে দেশটি স্বাভাবিকভাবে অভ্যন্তরীণ চাহিদাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেবে। দ্বিতীয়ত, ওপেকের সদস্য না হলেও অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের উত্তোলন ইচ্ছামতো বাড়াতে গেলে আন্তর্জাতিক বিধিনিষেধের আওতায় পড়তে পারে ব্রাজিল। ফলে আগামী দিনগুলোয় দেশটিতে জ্বালানি পণ্যটির উত্তোলন বৃদ্ধির সম্ভাবনা ক্ষীণ। এতে রফতানি প্রবৃদ্ধি শ্লথ হয়ে আসার সম্ভাবনা প্রবল।

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *