করোনার টিকা: রক্ত জমাট বাঁধার কারণ জানতে পেরেছেন বিজ্ঞানীরা

বিজ্ঞানীরা মনে করছেন অক্সফোর্ড/এস্ট্রাজেনেকার টিকা দেয়ার পর রক্ত জমাট বাঁধার বিরল কারণ সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। কার্ডিফ এবং যুক্তরাষ্ট্রের একদল গবেষক দেখিয়েছেন, কিভাবে রক্তে থাকা একটি প্রোটিনকে করোনা ভাইরাসের এই টিকার গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান আক্রমণ করে। তারা মনে করছেন এক্ষেত্রে একটি চেইন রিঅ্যাকশন বা চেইন বিক্রিয়া ঘটে। এর সঙ্গে জড়িত রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা। যা রক্তে বিপজ্জনক জমাট বাঁধাতে পারে। এ খবর দিয়েছে অনলাইন বিবিসি।

মনে করা হয়, টিকা আবিষ্কারের ফলে বিশ্বে কোটি কোটি মানুষের প্রাণ রক্ষা করা গেছে। বিরল ক্ষেত্রে রক্ত জমাট বাঁধার ঘটনা নিয়ে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে যে, এই টিকা বিশ্বজুড়ে কিভাবে ব্যবহার করা হয়েছে। বৃটেনে কিভাবে ৪০ বছরের কম বয়সীদের ক্ষেত্রে এটা ব্যবহার করা হয়েছে। রক্ত জমাট বাঁধার বিষয়টি প্রতিরোধ করা যায় কিনা এবং কেন এমন হচ্ছে তা নিয়ে বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধান শুরু হয়। এর উত্তর খুঁজতে কার্ডিফের টিমকে সরকারের জরুরি তহবিল থেকে অর্থ দেয়া হয়। এরপর ওই টিম তাদের প্রথম রিপোর্ট প্রকাশ করার পর তাদের সঙ্গে যোগ দেন অ্যাস্ট্রাজেনেকার নিজস্ব বিজ্ঞানীরা।

এস্ট্রাজেনেকার একজন মুখপাত্র জোর দিয়ে বলেছেন, টিকার চেয়ে করোনা সংক্রমণের কারণে রক্ত জমাট বাঁধার সম্ভাবনা বেশি হতে পারে। তবে কি কারণে রক্ত জমাট বাঁধছে তার পূর্ণাঙ্গ তথ্য ব্যাখ্যা করা হয়নি। যদিও এই গবেষণাতথ্য চূড়ান্ত নয়, তবু এর ফলে অন্তদৃষ্টি আকর্ষণ করে। এসব উদ্ভাবনকে ব্যবহার করার উপায় খুঁজছে এস্ট্রাজেনেকা। চেষ্টা করা হচ্ছে বিরল এই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া যাতে না হয়, তা এড়ানোর।

কেন রক্ত জমাট বাঁধে তার প্রাথমিক দুটি ক্লু দিয়েছেন গবেষকরা। প্রথমত, রক্ত জমাট বাঁধার ঝুঁকি শুধু কিছু টিকার প্রযুক্তিগত কারণে বেশি দেখা গেছে। দ্বিতীয়ত, রোগীদের কারো কারো দেহে অস্বভাবিক কিছু এন্টিবডি দেখা গেছে, যা তাদের রক্তের প্রোটিনকে আক্রমণ করে। একে বলা হয় প্লেটলেট ফ্যাক্টর ফোর।

বৃটেনে যেসব টিকা ব্যবহার করা হয়েছে, তার সবটাই করোনা ভাইরাসের জেনেটিক কোডে কিছু কাজ করে, যা রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে প্রশিক্ষিত করে তোলে। কিছু প্যাকেজ আছে যা চর্বির ভিতরে কোডের সঙ্গে মিশে যায়। এমন ঘটনা ঘটে এডেনোভাইরাসের ক্ষেত্রে। গবেষকরা মনে করছেন, এডেনোভাইরাস কিছু মানুষের দেহে বিরলভাবে রক্ত জমাট বাঁধায়। তাই তারা আনুবীক্ষণিক পর্যায়ে এডেনোভাইরাসের ছবি নেয়ার জন্য একটি প্রযুক্তি ব্যবহার করেন। এর নাম ক্রায়ো-ইলেক্ট্রন মাইক্রোস্কোপ।

বিজ্ঞানীদের এই গবেষণা প্রকাশিত হয়েছে সায়েন্স এডভান্সেস জার্নালে। তাতে তারা বলেছেন, এডেনোভাইরাসের বাইরের পৃষ্ঠ চুম্বকের মতো আকর্ষণ করে প্লেটলেট ফ্যাক্টর ফোর প্রোটিনকে। কার্ডিফ ইউনিভার্সিটির একজন গবেষক প্রফেসর অ্যালান পার্কার বলেছেন, এডেনোভাইরাসের চরমমাত্রায় একটি নেগেটিভ পৃষ্ঠ আছে। অন্যদিকে প্লেটলেট ফ্যাক্টর ফোর হলো চরমমাত্রায় পজেটিভ। ফলে দুটি বিষয় একটি আরেকটির সঙ্গে দ্রুততার সঙ্গে যুক্ত হয়ে যায়। আমরা শুধু প্রাথমিক অবস্থায় রয়েছি। এর পরে অনেক ধাপ আছে।

বিজ্ঞানীরা মনে করেন, এর পরে ধাপ হলো ভুল প্রতিরোধ ব্যবস্থা। তবে এ বিষয়ে আরো গবেষণা প্রয়োজন।

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *