কভিড-১৯ মহামারীতে নকিয়ার ব্রডব্যান্ড ব্যবসা চাঙ্গা

কভিড-১৯ মহামারীর কারণে বৈশ্বিক শিল্প উৎপাদন, আমদানি, রফতানি এবং সর্বোপরি ভোক্তা চাহিদায় বড় আকারে ধস নেমেছে। মরণঘাতী ভাইরাসটির বিস্তার ঠেকাতে লকডাউনসহ নানাবিধ বিধিনিষেধ আরোপ করে বিশ্ব। এতে করে ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রবৃদ্ধি হঠাৎ করে হোঁচট খেয়ে নিম্নমুখী হতে শুরু করেছে। তবে এ মহামারী গুটিকয়েক খাতের জন্য আশীর্বাদ হিসেবে দেখা দিয়েছে। প্রযুক্তি খাত তাদের একটি। বিশেষ করে ইন্টারনেট সেবার চাহিদা আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় বেড়েছে। ফলে বেশকিছু প্রযুক্তি সেবা প্রতিষ্ঠান ব্যবসায় চাঙ্গা ভাব ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছে। ফিনিশ টেলিকম প্রতিষ্ঠান নকিয়া তাদের অন্যতম। ভোক্তা চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় টেলিকম সরঞ্জাম প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানটি ব্রডব্যান্ড ব্যবসায় চাঙ্গা ভাব রয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির একজন শীর্ষ নির্বাহী। খবর রয়টার্স।

নকিয়ার ফিক্সড নেটওয়ার্কের প্রেসিডেন্ট স্যান্ডি মটলি জানান, ভোক্তা পর্যায়ে চাহিদা বাড়তে থাকায় করোনা-পূর্ববর্তী সময়ে তাদের অনেক গ্রাহক নেটওয়ার্কের প্রবৃদ্ধি ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ বাড়িয়ে দেয়ার পরিকল্পনা করেছিল। কিন্তু কভিড-১৯ সেই ট্রাফিক গ্রোথকে এখন রাতারাতি পরিবর্তন করে দিয়েছে।

প্রথম প্রান্তিকে গ্রাহকদের থেকে নকিয়ার ব্রডব্যান্ড নেটওয়ার্ক পরিষেবার ক্রয়াদেশ গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ২২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে উল্লেখ করে প্রতিষ্ঠানটির এ নারী নির্বাহী বলেন, ব্রডব্যান্ড নেটওয়ার্ক পরিষেবা নিয়ে গ্রাহকরা যে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা করেছে, সেটি বাস্তবায়নে তাদের প্রবৃদ্ধি আরো বাড়াতে হবে। যদিও এ বিষয়টি নিয়ে এরই মধ্যে অনেক গ্রাহক আমাদের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে।

গত কয়েক বছর ধরে ফিক্সড-লাইন নেটওয়ার্ক ব্যবসা চাঙ্গা করার চেষ্টা করছে নকিয়া। বিশেষ করে ২০১৬ সালে ফ্রান্সের টেলিকমিউনিকেশন প্রতিষ্ঠান আলকাটেল লুসেন্টের সঙ্গে ১ হাজার ৭০০ কোটি ডলারের একটি চুক্তির পর এ খাতে নকিয়া বাজার হিস্যা বাড়াতে মরিয়া হয়ে কাজ করছে। যদিও ২০১৮ ও ২০১৯ সালে প্রথম প্রান্তিকে প্রতিষ্ঠানটির রাজস্ব আয় যথাক্রমে ১৮ শতাংশ ও ৫ শতাংশ কমেছিল।

বর্তমান বাজার পরিস্থিতির বিষয়ে মটলি বলেন, আমরা গ্রাহকদের কাছ থেকে এখন বেশ সাড়া পাচ্ছি। তবে আমরা মনে করি, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদে এটি আরো বাড়বে।

মটলির এমন প্রাক্কলনের অন্যতম কারণ হতে পারে ইউরোপীয় কমিশনের নীতিগত প্রস্তাব। কারণ ইউরোপীয় ইউনিয়নের কার্যনির্বাহী এ সংস্থাটি ২০২৫ সালের মধ্যে ইউরোপের প্রতিটি বাসায় নেটওয়ার্ক সুবিধা পৌঁছে দেয়ার একটি প্রস্তাব করেছে। শহর বা গ্রাম সবখানে যার ডাউনলোড স্পিড থাকবে কমপক্ষে ১০০ এমবিপিএস। সেটি করা হলে নকিয়ার জন্য এটি আরো বড় সুযোগ হিসেবে দেখা দেবে। তবে এটি যে সহসাই হচ্ছে না সেটিও জানে নকিয়া।

প্রতিষ্ঠানটির ফিক্সড নেটওয়ার্ক ব্যবসার প্রধান প্রযুক্তি কর্মকর্তা (সিটিও) স্টিফ্যান ভ্যানহেস্টেল বলেন, নতুন ফিক্সড নেটওয়ার্ক তৈরি করতে সময় লাগবে। কারণ ফাইবার কেবলের সাহায্যে এ ধরনের নেটওয়ার্ক সুবিধা তৈরি করা রাতারাতি সম্ভব না।

টেলিকম, মিডিয়া ও ডিজিটাল সার্ভিসবিষয়ক বৈশ্বিক পরামর্শক এবং গবেষণা প্রতিষ্ঠান অ্যানালাইসিয়েস মেসনের প্রতিবেদন অনুযায়ী, পুরো ইউরোপের ইন্টারনেট ট্রাফিকের প্রায় ৯০ শতাংশই ফিক্সড ব্রডব্যান্ড ক্যারিয়ার। এর মধ্যে ২০১৯ সালে নকিয়ার ফিক্সড অ্যাকসেসের পরিমাণ ছিল প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নেটওয়ার্ক ব্যবসার বিক্রির ১০ শতাংশ, যার মধ্যে মোবাইল অ্যাকসেস ছিল ৬৪ শতাংশ।

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *