কথিত ‘গুম-হত্যা’: পুলিশ-সিআইডির তিন কর্মকর্তাকে তলব

নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার ফতুল্লা থানায় একটি অপহরণের ৬ বছর ও মামলার ৪ বছর পর যুবক নিজেই আদালতে হাজির হওয়ার ঘটনায় তিনজনকে তলব করেছেন আদালত।

বৃহস্পতিবার (১ অক্টোবর) বিকেলে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আফতাবুজ্জামানের আদালত এ নির্দেশ দেন।

৩০ সেপ্টেম্বর দুপুরে নারায়ণগঞ্জের একটি আদালতে মামলার বিচার কাজ চলাকালে হাজির হন মামুন নামের ওই যুবক। ২০১৪ সালের ১০ মে মামুন অপহরণ হয়েছে অভিযোগ এনে দুই বছর পর ২০১৬ সালের ৯ মে ফতুল্লা মডেল থানায় মামলা করেন তার বাবা আবুল কালাম। ওই মামলায় ৬ জনকে বিবাদী করা হয়। তাদের বিরুদ্ধে মামুনকে অপহরণের পর গুমের অভিযোগ করা হয়েছিল। ৬জন বিভিন্ন মেয়াদে কারাভোগও করেন। রিমান্ডেও তাদের জিজ্ঞাসাবাদের নামে নির্যাতনের অভিযোগ তোলা হয় পুলিশের বিরুদ্ধে।

এ অবস্থায় সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আফতাবুজ্জামানের আদালত মামলার এজহার থেকে অভিযোগপত্র পর্যন্ত পুলিশ ও সিআইডির যে তিন কর্মকর্তা তদন্ত করেছেন তাদের সাত কার্যদিবসের মধ্যে লিখিত তদন্ত প্রতিবেদনসহ আদালতে হাজির হতে বলেছেন।

নারায়ণগঞ্জ সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার নাসির উদ্দিন বলেন, এ মামলার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পুলিশ ও সিআইডির যে তিনজন কর্মকর্তা তদন্ত করেছেন তাদের তলব করেছেন আদালত।

তারা হলেন-ফতুল্লা মডেল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মিজানুর রহমান, নারায়ণগঞ্জ সিআইডির সহকারী পুলিশ সুপার হারুন অর রশিদ ও এসআই জিয়াউদ্দিন উজ্জল।

আদালত সূত্রে জানা যায়, ২০১৪ সালের ১০ মে মামুন অপহরণ হয়েছে অভিযোগ এনে দুই বছর পর ২০১৬ সালের ৯ মে ফতুল্লা মডেল থানায় মামলা করেন বাবা আবুল কালাম। ওই মামলায় ৬ জনকে বিবাদী করা হয়। তাদের বিরুদ্ধে মামুনকে অপহরণের পর গুমের অভিযোগ করা হয়েছিল।

বিবাদীরা হলো তাসলিমা, রকমত, রফিক, সাগর, সাত্তার, সোহেল। মামলার পর পুলিশ অভিযুক্ত ৬জনকেই গ্রেফতার করে। তাদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছিল। অভিযোগ রয়েছে রিমান্ডে থাকা সময়ে আটক ৬ জনকে মারধর করা হয়। এবং ৬জনকেই ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেওয়ার জন্য আদালতে পাঠানো হয়। কিন্তু তাদের কেউ আদালতে জবানবন্দি দেয়নি।

ওই মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ছিলেন ফতুল্লা মডেল থানার এসআই মিজানুর রহমান। তিনি আদালতে আসামিদের রিমান্ড চাওয়ার সময়ে আর্জিতে উল্লেখ করেন, ‘খালাতো বোন তাসলিমা ২০১৪ সালের ১০ মে মামুনকে ডেকে নিয়ে কৌশলে অপহরণ করে বিষাক্ত শরবত পান করিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করে মরদেহ শীতলক্ষ্যায় ফেলে দেয়। ’

পরবর্তীতে মামলাটি পুলিশের অপরাধ বিভাগ সিআইডিকে ন্যস্ত করা হয়। সিআইডি সহকারী পুলিশ সুপার হারুন অর রশিদ ২০১৯ সালের ১৮ ডিসেম্বর মামলার অভিযোগপত্র আদালতে দাখিল করেন। এতে মামলার এজাহারভুক্ত ৬জনকেই অভিযুক্ত করেন। সাক্ষী করা হয়েছিল ২১ জনকে।

অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০১৪ সালের ১০ মে খালাতো বোন তাসলিমাকে দিয়ে কৌশলে মামুনকে বাড়ি ডেকে আনা হয়। পরবর্তীতে মামনুকে বিয়ের প্রস্তাব দেয় তাসলিমা। কিন্তু বিয়েতে রাজি না হওয়াতে বিবাদী ৬ জন মিলে মামুনকে কোমল পানির সঙ্গে চেতনানাশক দ্রব্য খাইয়ে অচেতন করে সিএনজিচালিত অটোরিকশা করে অজ্ঞাতস্থানে নিয়ে যায়। তবে কোথায় কীভাবে কি অবস্থায় রাখা হয়েছে সেটা জানা যায়নি। ’

ঘটনার বিবরণে মামলার অন্যতম আসামি চাঁদপুরের মতলব থানা এলাকার রকমত আলীর মেয়ে তাসলিমা বলেন, ‘আমাকে একই এলাকার মো. আবুল কালামের ছেলে মামুন পছন্দ করতো। আমাকে প্রেমের প্রস্তাব দেয়। কিন্তু আমি সাড়া দেয়নি। পরে আমি আমার ভাইদের সঙ্গে খালার বাড়ি নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা এলাকায় চলে আসি। কয়েকদিন পর আমি বাড়ি চলে যাই। বাড়ি চলে যাওয়ার পর আমার বিয়ে হয়ে যায়। ’

এদিকে মামুন তার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে অভিমান করে বাড়ি থেকে পালিয়ে যায়। কিন্তু মামুনের বাবা আবুল কালাম আমিসহ আমার খালু রকমত, ভাই রফিক, খালাতো ভাই সোহেল ও সাগর এবং আমার মামা সাত্তার আসামি করে মামলা দায়ের করেন। আর এ মামলায় আমি ও আমার ভাই এক বছর ধরে জেল খেটেছি। বাকিরা সবাই এক মাস করে জেলে ছিলো।

‘‘জেলে থাকাবস্থায় আমাদের ওপর অনেক নির্যাতন নিপীড়ন করা হয়। আমাকে গর্ভাবস্থায় জেল খাটতে হয়েছে। দফায় দফায় রিমান্ডে নিয়ে জবানবন্দি আদায়ের চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু আমরা জবানবন্দি দেয়নি। কারণ আমরা এ ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত না। এরই মধ্যে মামুন আদালতে উপস্থিত হয়েছে।

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *