ওটিটি কন্টেন্টগুলোতে মেধার মূল্যায়ন হচ্ছে

ছোটপর্দার জনপ্রিয় মুখ দীপা খন্দকার। সম্প্রতি গুলশান এভিনিউ-২ ও বাকের খনি নামের দুটি ধারাবাহিকে অভিনয় করছেন। তার অভিনীত পায়ের ছাপ নামের একটি চলচ্চিত্রের শুটিং শুরু হবে শিগগিরই। অভিনয় ও ব্যক্তিজীবনের নানা প্রসঙ্গে কথা বলেছেন বণিক বার্তার সঙ্গে। সাক্ষাত্কার নিয়েছেন মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ

তিন বছর আগে আপনাকে প্রথমবারের মতো চলচ্চিত্রে দেখা গিয়েছিল। দ্বিতীয়বারের মতো হাজির হচ্ছেন বড় পর্দায়?

হ্যাঁ, ২০১৮ সালে ভাইজান সিনেমায় অভিনয় করেছিলাম। এরপর মনমতো চরিত্র না পাওয়ায় সিনেমায় আসিনি। পায়ের ছাপ নামে একটি চলচ্চিত্রে কাজ শুরু করেছি। পরিচালনা করছেন সাইফুল ইসলাম মান্নু। ইম্প্রেস টেলিফিল্মের প্রযোজনায় ছবিটি নির্মিত হচ্ছে। ২৮ মে শুটিং শুরু হবে।

পায়ের ছাপে আপনার চরিত্রটা সম্পর্কে জানতে চাই।

আমি নায়িকার মায়ের চরিত্রে অভিনয় করছি। আমাকে ফ্লাশব্যাকে নায়িকার ছোটবেলায় দেখা যাবে। পায়ের ছাপ একটা মেয়ের জীবনযুদ্ধের গল্প। মেয়েটার ছোটবেলার যুদ্ধের সঙ্গে তার মাও জড়িত। সেই সময়টাতে মেয়ের ও মেয়ের মায়ের সংগ্রাম দেখানো হয়েছে। আমার চরিত্রটা ছোট হলেও গুরুত্বপূর্ণ।

চলচ্চিত্রে নিয়মিত হওয়ার পরিকল্পনা আছে?

চলচ্চিত্রে নিয়মিত হতে চাই। তবে গতানুগতিক চরিত্রে কাজ করতে চাই না। একটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রের জন্য অপেক্ষা করতে হলে করব। তার পরও তথাকথিত টুকটাক অভিনয় করতে চাই না। কথা হয় অনেকের সঙ্গে। আরো কথা হচ্ছে। সবকিছু মিলে গেলে দেখা যাবে। বাণিজ্যিক চলচ্চিত্র কিংবা স্বাধীন চলচ্চিত্র, সব মাধ্যমেই কাজের ইচ্ছা আছে।

ইদানীং চলচ্চিত্রে নায়ক-নায়িকা ছাড়া আর কোনো চরিত্রকে সেভাবে গুরুত্ব দেয়া হয় না।

হ্যাঁ, আমরা সেই সময়টাই পার করছি। তার পরও অপেক্ষায় আছি। ইন্ডিয়া কিংবা অন্যান্য দেশের চলচ্চিত্রে নায়ক-নায়িকার বাইরেও অনেক গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র থাকছে। এমনকি আমি ভাইজান এলো রে করেছি। আমার চরিত্র নায়িকাদের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল। একদিন হয়তো আমাদের চলচ্চিত্রও পরিবর্তন হবে। সময় লাগবে, তবু আশা করছি।

গুলশান এভিনিউয়ে কোন চরিত্রে অভিনয় করছেন?

গুলশান এভিনিউয়ে আমি ছেলের বউয়ের ক্যারেক্টার করেছিলাম। গুলশান এভিনিউ টুতে আমরা বাবা-মায়ের ক্যারেক্টার করছি। নতুন নতুন ছেলেমেয়েরা আমাদের সন্তানের ক্যারেক্টার করছে। তখনো আমি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করেছিলাম। এখনকার চরিত্রটাও খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

অনেকে তো বাবা-মায়ের চরিত্রে অভিনয় করতে চান না। আপনার এক্ষেত্রে কোনো আপত্তি নেই?

আমি মানানসই যেকোনো চরিত্রে অভিনয় করতে চাই। একসময় কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া চরিত্রে অভিনয় করেছি। প্রেমিকার চরিত্রে অভিনয় করেছি। কিন্তু এখন তো বয়স হয়েছে। আমার সন্তানেরা বড় হয়েছে। আমার ছেলের বয়স ১৪ বছর হতে যাচ্ছে। আমার অনেক বন্ধুর বাচ্চার বয়স ২২-২৩ বছর। আমি তো ওদের সমবয়সী। ওরা যদি বাস্তবে ২২-২৩ বছরের সন্তানের মা হতে পারে, তাহলে পর্দায় আমার নায়িকার বা নায়কের মা হতে সমস্যা কোথায়? এছাড়া পর্দায় তো আমরা একটা চরিত্রকে উপস্থাপন করি, নিজেকে না। তাহলে কেন সমস্যা হবে?

বাকের খানি নামে একটা ধারাবাহিকে যুক্ত হয়েছেন। এখানে কেমন চরিত্রে অভিনয় করছেন?

বাকের খনিতে আমি ফকির চরিত্রে অভিনয় করছি, যে রাস্তায় রাস্তায় ভিক্ষা করে। এ ধরনের চরিত্র আমার জন্য একদমই নতুন।

এমন চরিত্রে রূপদানের জন্য নিশ্চয় প্রস্তুতি নিতে হয়েছে?

শিল্পী মানেই তো সবকিছু অবজার্ভ করতে হয়। আমি চলাচলের সময় ফকিরদের কথা বলা, ভিক্ষা চাওয়া, গেটআপ, পোশাকআশাক অবজার্ভ করছি।

বেশ কয়েকটি ওটিটি প্লাটফর্মের জন্য ওয়েবফিল্ম নির্মিত হচ্ছে। এর ইতিবাচক দিক কোনটা বলে আপনার মনে হয়?

টিভি নাটকে স্বজনপ্রীতিটা প্রতিষ্ঠিত হয়ে গিয়েছিল। নাটক প্রচারের ক্ষেত্রে, শিল্পী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে মেধাবীদের চেয়ে নিকটজনদের প্রাধান্য দেয়া হতো। সেই শিল্পী অভিনয় পারে কি পারে না, চরিত্রের সঙ্গে যায় কি যায় না, এসব দেখা হতো না। ওটিটি কন্টেন্টগুলোতে এ স্বজনপ্রীতি চোখে পড়েনি। এখানে যোগ্যদের, মেধাবীদেরই কদর করা হচ্ছে। এটা আমার খুব ভালো লাগছে।

আপনার সময়ের অনেক শিল্পী সোস্যাল মিডিয়ায় খুব অ্যাক্টিভ। আপনাকে সেভাবে দেখা যায় না। এর কারণ কী?

আমি আসলে সোস্যাল মিডিয়া নিয়ে খুব ব্যস্ত থাকতে চাই না। আমার কাছে সবচেয়ে বড় হলো পরিবার। এরপর কাজ। এ দুইয়ের বাইরে আর কোনো ব্যস্ততা আমি নিতে চাই না। সোস্যাল মিডিয়ায় দেয়ার মতো এত সময় আমার নেই। আমার যারা ফলোয়ার তারা আমার কাজ দেখে এবং কাজ দিয়েই আমাকে চেনে।

আপনার প্রিয় পোশাক কী?

আরামদায়ক যেকোনো পোশাক। কিন্তু আরামদায়ক পোশাকই যে সবসময় পরতে পারি তাও না। পরিবেশ-পরিস্থিতি বুঝে অনেক সময় মানানসই পোশাক পরতে হয়।

পোশাক নির্বাচনের ক্ষেত্রে প্রিয় কোনো ব্র্যান্ড আছে?

আমি একদমই ব্র্যান্ডফ্রিক নই।

প্রিয় খাবার?

বাঙালির খাবার—ভাত, মাছ সবচেয়ে প্রিয়। পান্তাভাত, খিচুড়ি।

নির্দিষ্ট করে যদি মাছের নাম জিজ্ঞেস করি?

ইলিশ মাছ প্রিয়। এছাড়া ছোট মাছও থাকে তালিকায়।

অনেকের বিভিন্ন জিনিস সংগ্রহের শখ থাকে। আপনার এমন কোনো শখ আছে?

এমন কোনো শখ আমার ছিল না। তবে শখ ছাড়াই আমি যেটা সংগ্রহ করতে পছন্দ করি, সেটা হলো স্মৃতি। বলতে পারেন স্মৃতি সংগ্রহ করা আমার শখ।

এ মুহূর্তে কোন স্মৃতিটা মনে পড়ছে?

ক্লাস ফোরে পড়ার সময় বাবা মারা যান। এর ১০ মাস পর ভাই মারা যান। এ স্মৃতিটাই বেশি মনে পড়ে। এছাড়া অনেক কিছু হারানো এবং হাজার হাজার প্রাপ্তিই আমার প্রিয় স্মৃতি।

প্রিয় বই?

বই এখন কম পড়া হয়। ব্যস্ততা বেড়েছে, এছাড়া বই পড়তে নিরিবিলি পরিবেশ ও মনোযোগের প্রয়োজন হয়। এখন সেটা পাওয়া কঠিন। তবে কোরআন শরিফ নিয়মিত পড়ি। আমাকে যদি কেউ প্রিয় বই সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে, পাশ থেকে আমার স্বামী বলে কোরআন শরিফ ওর প্রিয় বই।

সর্বশেষ পড়েছেন এমন একটা বই?

এখন বায়োগ্রাফি পড়তে খুবই ভালো লাগে। ছোটবেলায় গল্প-উপন্যাস পড়তাম। এখন বায়োগ্রাফি ও ইতিহাস পড়তে ভালো লাগে। সম্প্রতি ফিলিস্তিন, জেরুজালেম এসব নিয়ে পড়ছিলাম। এখন বলতে পারব, ফেরদৌসী মজুমদারের আত্মকথা পড়ছিলাম। এত মজার লেগেছে। মনে হচ্ছিল তার ছোটবেলা চোখের সামনে ভাসছে।

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *