এবারও অনুপ্রেরণার ‘ইত্যাদি’

জনপ্রিয় ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ‘ইত্যাদি’তে বরাবরই খুঁজে পাওয়া যায় আমাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য, প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন, পর্যটকদের জন্য আকর্ষণীয় এবং জনগুরুত্বপূর্ণ অনেক স্থান। পাওয়া যায় শিকড়ের সন্ধান। এ ছাড়াও ইত্যাদিতে পাওয়া যায় জনকল্যাণকামী, সৎ সাহসী, মানবিক মূল্যবোধে সমৃদ্ধ মহৎ হৃদয়ের মানুষের সন্ধান। ইত্যাদি শুধু মানুষের সমস্যাই তুলে ধরে না, তা সমাধানেরও চেষ্টা করে। ইত্যাদির এবারের পর্বটি দর্শকদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। রাজশাহীর সারদায় বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমির ভেতরে ঐতিহ্যবাহী নীলকুঠি সাহেবদের বাসভবন ‘ছোট কুঠি’র সামনে ধারণ করা হয় এবারের পর্ব। স্বাস্থ্যবিধি মেনে দর্শক উপস্থিতিতে ধারণ করা হয়েছে অনুষ্ঠানটি। দূরত্বকে গুরুত্ব দিয়ে বসানো দর্শকদের মুখে ইত্যাদির মাস্ক ছিল করোনাকালীন নতুন সংযোজন।
ছোট কুঠির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নির্মাণ করা হয়েছে মঞ্চ। ইত্যাদি দেখতে দেখতে কখনও নির্মল আনন্দ-হাসি, কখনওবা কান্নায় ভিজে গেছে চোখ। মামা-ভাগ্নের পর্বে ‘প্রতিটি মানুষেরই ক্লিন ইমেজ থাকা জরুরি’ এবং ঠিকাদার ও কর্মকর্তা পর্বে ‘ঘুষ খোরকে বর্জ্যভূক প্রাণীর সঙ্গে তুলনা করা’ ছিল তীক্ষ্ণ তীর। কিছু কিছু টকশোতে প্রতারক ও মিথ্যাবাদীদের দিয়ে নীতিবাক্য বলানো, সন্তান পালনে অভিভাবকদের ভূমিকা, নানি-নাতির মিষ্টি খুনসুটি সর্বোপরি হ্যান্ড স্যানিটাইজের মতো ব্রেইন স্যানিটাইজের ধারণা দেয়া-এসব আইডিয়া একমাত্র হানিফ সংকেতের দ্বারাই সম্ভব। অর্থাৎ হাতকে জীবাণুমুক্ত করতে যেমন হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করা প্রয়োজন তেমনি প্রতীকী অর্থে মাথা থেকে সকল খারাপ চিন্তার জীবাণুগুলোকে মেরে ফেলার জন্য ব্রেইন স্যানিটাইজার প্রয়োজন। এ যেন মানুষকে আত্মশুদ্ধির অনুপ্রেরণায় উদ্বুদ্ধ করা। অনুষ্ঠানের শুরুতে রাজশাহী ও বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমি সম্পর্কিত প্রতিবেদন দু’টি ছিল তথ্যবহুল ও শিক্ষণীয়। এসব প্রতিবেদন শুনেছি আর্কাইভে নেয়া হচ্ছে। এটি কর্তৃপক্ষের একটি ভালো উদ্যোগ। ইত্যাদির মাধ্যমে দর্শকরা সারদা পুলিশ একাডেমির কর্মতৎপরতা সম্পর্কে জানতে পেরেছে। শুধু তাই নয়, এই ইত্যাদির মাধ্যমে দর্শকরা এবার প্রথমবারের মতো দেখেছে পুলিশের অসাধারণ নৃত্য। ‘শকুন অশুভ নয় শুভ’, ইত্যাদির মাধ্যমে বিষয়টি জেনে অনেকেই এখন শকুন সংরক্ষণে সচেতন হবেন। এটিও শুভ উদ্যোগ। ধানমণ্ডি লেকের ব্যতিক্রমী উপস্থাপনা, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী মহোদয়ের অঙ্গীকার এবং প্রচারের পরদিনই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম শুরু, ৫০০ সাঁকোর নির্মাতা বগুড়ার জাহিদুল ইসলামের কাজকে ত্বরান্বিত করতে মোটরসাইকেল দেয়া-এসবই ইত্যাদির প্রশংসনীয় উদ্যোগ। এবারের চোখ ভেজা প্রতিবেদনগুলোর মধ্যে খিদিরপুরের নদীভাঙন কবলিত মানুষের হাহাকার, শমেস ডাক্তার দম্পতির এতিমখানা পরিচালনার জন্য ভিক্ষাবৃত্তি করার প্রতিবেদন দু’টি ছিল হৃদয় ছোঁয়া। প্লে-ব্যাক সম্রাট এন্ড্রু কিশোরের সমাধিতে হানিফ সংকেতের বিনম্র শ্রদ্ধায় শেষ করা পর্বটি দেখেও চোখের পানি ধরে রাখতে পারেনি কেউই।

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *