এনবিআরের নজর কৃষকের আয়ে

নভেল করোনাভাইরাসের কারণে কৃষকের আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ৫৬ হাজার কোটি টাকারও বেশি। এমন ক্ষতির পরও খাদ্য চাহিদা মেটাতে কাজ বন্ধ করেননি কৃষকরা। তবে সেই কৃষকের ওপরই পড়ছে করের খড়্গ। এদিকে করোনা-পরবর্তী পরিস্থিতি মোকাবেলায় সরকার কৃষিকে গুরুত্ব দিচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে রাজস্ব বৃদ্ধির নামে কৃষকের আয়ের ওপর মোটা অংকের কর বসিয়ে দেয়া হচ্ছে, যা হতাশাজনক বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, অর্থ আইন ২০১৯-এর মাধ্যমে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) উৎপাদিত মূল্যের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত কাঁচামাল কেনার ক্ষেত্রে ১৫ লাখ টাকা পর্যন্ত যেকোনো ক্রয়ের ওপর ২ শতাংশ হারে উৎসে কর কর্তনের আইন আরোপ করে। এদিকে আয়কর অধ্যাদেশ ১৯৮৪ অনুযায়ী কৃষকের পক্ষে ব্যক্তিগত পর্যায়ে আয়ের ওপর আড়াই লাখ টাকা পর্যন্ত অব্যাহতি দেয়া আছে। কিন্তু এ সুবিধা পাওয়ার জন্য কৃষকের আয়কর প্রত্যাবর্তন-অব্যাহতির সনদ থাকা প্রয়োজন। নয়তো কৃষকের পণ্যে অতিরিক্ত ৫০ শতাংশ অর্থাৎ মোট ৩ শতাংশ উৎসে কর কর্তন হবে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, অর্থ আইন ২০১৯-এর মাধ্যমে উৎপাদিত মূল্যের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত কাঁচামাল কেনার ক্ষেত্রে ১৫ লাখ টাকা পর্যন্ত যেকোনো পরিমাণ ক্রয়ের ওপর ২ শতাংশ হারে উৎসে কর কাটা এখনকার সময় যৌক্তিক নয়। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আলোচনার মাধ্যমে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার পরামর্শ তাদের।

তারা বলছেন, দেশে যেখানে খুব বেশি হলে ৩০ লাখ মানুষ আয়কর রিটার্ন দাখিল করে সেখানে এনবিআর কীভাবে আশা করছে যে, গ্রামের কৃষকরা কর সনদ নেবে আর রিটার্ন দাখিল করবে।

এ বিষয়ে গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, কৃষকের ওপর এ ধরনের কর আরোপ করা একেবারেই যৌক্তিক নয়। এনবিআর উৎস করের ব্যবহার বেশি করে ফেলেছে। আয়কর হওয়া উচিত মুনাফার ওপর। কিন্তু উৎসে কর আরোপ করায় অনেক ক্ষেত্রে তা পণ্যের মূল্যের মধ্যেও ঢুকে পড়ে। এতে ভোক্তারা ক্ষতিগ্রস্ত হন।

সূত্র জানায়, দেশের বিভিন্ন উৎপাদনমুখী প্রতিষ্ঠানে কাঁচামাল হিসেবে কৃষিপণ্য সরবরাহ করেন কৃষক। এনবিআরের নীতিতে কাঁচামাল সরবরাহ করার ক্ষেত্রে বাধার মুখে পড়ছেন তারা। ওই নীতি অনুযায়ী আয়কর সংক্রান্ত কাগজপত্র ছাড়া কৃষিপণ্য কিনতে পারবে না প্রতিষ্ঠানগুলো। আগামী বাজেটে আয়কর অধ্যাদেশ ১৯৮৪-এর সংশ্লিষ্ট ধারায় সংশোধনী এনে কৃষকের আয়ের ওপর ৩ শতাংশ কর কর্তনের বিষয়টি বন্ধ করা উচিত বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. লুত্ফুল হাসান বলেন, দেশে নভেল করোনাভাইরাসের মহাদুর্যোগ মোকাবেলা এবং উৎপাদিত ফসলের ন্যায্যমূল্য না পাওয়ায় কৃষকদের কৃষিকাজে যে অনাগ্রহ সৃষ্টি হচ্ছে ওই সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে তা আরো প্রকট আকার ধারণ করবে। সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা ও জাতীয় কৃষিনীতির বাস্তবায়নসহ কৃষি খাতের সার্বিক উন্নয়নে সরকার বদ্ধপরিকর। আর সরকারের এ কাজে সহায়তা করছেন দেশের অগণিত পরিশ্রমী কৃষক। আসন্ন ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে আয়কর অধ্যাদেশ ১৯৮৪-এর সংশ্লিষ্ট ধারায় প্রয়োজনীয় সংশোধনী এনে কৃষকদের ৩ শতাংশ কর কর্তনের বিষয় থেকে অব্যাহতি প্রদানসহ কৃষিপণ্যের ওপর আরোপিত কর প্রত্যাহার করে দেশের কৃষি উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখা প্রয়োজন।

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *