একটি নির্বাচন। আর তা নিয়ে চলছে নানা বিতর্ক। ২৮শে জানুয়ারি হয়ে গেছে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচন। এ নির্বাচনকে ঘিরে মাস খানেক আগে থেকেই চলছিল নানা আলোচনা। তবে নির্বাচনের কয়েক দিন আগে শুরু হয় দুই প্যানেলের মধ্যে কাদা ছোড়াছুড়ি। একে অপরের বিরুদ্ধে বক্তব্য যেন নিয়মিত ঘটনায় পরিণত হয়। আর নির্বাচনের দিন এবং তার পরের ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো তো যেন জাতীয় নির্বাচনের উত্তেজনাকেও ছাড়িয়ে গেছে। শিল্পী সমিতির কোনো নির্বাচন নিয়ে এত আলোচনা, বিতর্ক কিংবা সমালোচনা আগে দেখেনি মানুষ।
নির্বাচনে পরাজিত সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী চিত্রনায়িকা নিপুণ নির্বাচনের দিন জয়ী সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী জায়েদ খানের বিরুদ্ধে ভোটারদের টাকা বিলি করার অভিযোগ আনেন। যদিও জায়েদ সেই অভিযোগ শুরু থেকেই অস্বীকার করেন। অন্যদিকে ইলিয়াস কাঞ্চন-নিপুণ প্যানেলে পোলিং এজেন্ট হিসেবে থাকা নায়ক রিয়াজ নির্বাচনের দিন সাংবাদিকদের জানান, ভোট সুষ্ঠু হচ্ছে। ভোটের দিন সন্ধ্যায় নিপুণকে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করেন আপনি ভোট কেনার অভিযোগ এনেছেন। এখনো কি আপনি আশাবাদী নির্বাচন নিয়ে? উত্তরে নিপুণ বলেন, আমি বিশ্বাস করি শিল্পীদের টাকা দিয়ে কেনা যায় না। সুতরাং আমি এখনো আশাবাদী। যদিও নির্বাচনে জায়েদ খান টানা তিনবার সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হওয়ার পর নিপুণ ফলাফল মেনে নিতে পারেননি। যার ফলে ফের ভোট গণনার আবেদন করেন তিনি। পরদিন দুই পক্ষের উপস্থিতিতে ভোট গণনায়ও জায়েদ জয়ী হন। তার পরদিন নিপুণ সংবাদ সম্মেলন করে জানান, নির্বাচন কমিশনার পীরজাদা হারুন তার কাছে ভোটের দিন দুটো চুমু চেয়েছিলেন। তখন তাকে চড় দিয়ে ভোট বর্জন করা উচিত ছিল বলেও জানান তিনি। নেট দুনিয়ায় প্রশ্ন উঠেছে ভোটের দিনই কেন নিপুণ এই প্রতিবাদ করেননি। নির্বাচন কমিশনার পদে থেকে যদি তিনি এমন করেই থাকেন, সেটা তো অবশ্যই অন্যায়। নিপুণের এই অভিযোগের বিরুদ্ধে পীরজাদা হারুন বলেছেন, তিনি ‘ফান’ করেছেন। তার মানে পীরজাদা মেনেই নিলেন এটি তিনি করেছেন। সেদিক থেকে একজন প্রার্থীকে নির্বাচন কমিশনারের পক্ষ থেকে এমন প্রস্তাব দেয়া অবশ্যই অনৈতিক ও অবাক বলেই মনে করছেন শিল্পী সমাজ থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ। নিপুণ আরও জানান, এফডিসির এমডি ও জায়েদ খান একটি গ্যাং। পুলিশের একটি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সঙ্গে জায়েদ খানের একটি স্ক্রিনশটও প্রকাশ করেন তিনি। সেই সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন নির্বাচনে জয়ী সভাপতি নায়ক ইলিয়াস কাঞ্চনও। এদিকে এ সংবাদ সম্মেলনে তার বিরুদ্ধে আনীত সব অভিযোগকে ‘ষড়যন্ত্র’ বলে দাবি করেন জায়েদ খান। গত সোমবার এফডিসিতে সংবাদ সম্মেলন করে তিনি বলেন, নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে ও আমাকে হেয় করতেই আমার সহকর্মীর এমন অভিযোগ। জায়েদ জানান, এই স্ক্রিনশটের খোঁজ তিনি আগেই পেয়েছিলেন। তাই সাইবার ক্রাইম ইউনিটকে সেটা দিয়েছিলেন খতিয়ে দেখতে। সাইবার ক্রাইম ইউনিট জানিয়েছে, স্ক্রিনশটটি সম্পূর্ণ বানানো। অ্যাপস দিয়ে করা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে পুলিশ কাজ করছে বলেও জানান জায়েদ। তিনি দু-একদিনের মধ্যেই নিপুণের বিরুদ্ধে মামলা করবেন বলেও জানান। নায়িকা মুনমুনকে নিয়েও এই সংবাদ সম্মেলনে হাজির হন জায়েদ। মুনমুন আরও একবার জানান, ভোটের দিন তিনি জায়েদের কাছ থেকে টাকা নেননি। ভিডিওটি ঠিক করে দেখলেই সেটা বোঝা যায়। এদিকে বিতর্ক এখানেই থেমে নেই। নির্বাচনের দিন এফডিসির বাকি ১৭ সংগঠনের কোনো সদস্যদের ঢুকতে দেয়া হয়নি এফডিসিতে। সেটা নিয়েই লাগাতার আন্দোলন করছে সংগঠনগুলোর নেতারা। তাদের দাবি এফডিসি এমডির পদত্যাগ ও নির্বাচন কমিশনার পীরজাদা হারুনকে সব নাটক ও সিনেমায় নিষিদ্ধ করা। তবে নির্বাচনের পর ঘটে যাওয়া এমন ঘটনা নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে শিল্পীদের নিয়ে একটি নেতিবাচক ধারণা তৈরি হচ্ছে বলেও মনে করছেন চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট অনেকে। ইলিয়াস কাঞ্চন-নিপুণ প্যানেলের দু’জন সদস্য নাম না প্রকাশ করার শর্তে মানবজমিনকে জানান, নির্বাচনে দুই প্যানেল থেকেই প্রায় সমান জয়লাভ করেছে। বিষয়টি নিয়ে এখন অযথাই অভিযোগের ফুলঝুরি ফুটিয়ে লাভ নেই। যারা হেরেছে তাদের উচিত শিল্পীদের জন্য আগামী দুই বছর কাজ করা। কারণ পদে যাওয়াটাই তো মূল কথা নয়, শিল্পীদের জন্য এমনিতেও তো কাজ করা সম্ভব। সেটা সবার সঙ্গে বা একসঙ্গে হলেই ক্ষতি কি!