উত্তর ও দক্ষিণ কোরিয়ার মধ্যে যুদ্ধ শুরু হচ্ছে!

দক্ষিণ কোরিয়ার বিরুদ্ধে একশন নিতে প্রস্তুত উত্তর কোরিয়ার সেনাবাহিনী। তাদের সঙ্গে সম্পর্কে ভেঙে দেয়ার এটাই উত্তম সময়। দক্ষিণ কোরিয়াকে এমন হুঁশিয়ারি দিয়েছেন উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উনের বহুল আলোচিত বোন কিম ইয়ো জং। বিভক্ত দুই কোরিয়ার শীর্ষ নেতাদের প্রথম বৈঠকের ২০তম বার্ষিকীকে তিনি এমন মন্তব্য করেছেন। তার এমন হুঙ্কারে অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন, তবে কি নতুন করে যুদ্ধ শুরু হচ্ছে উত্তর ও দক্ষিণ কোরিয়ার মধ্যে? এ খবর দিয়েছে ভারতের অনলাইন এনডিটিভি। কিম ইয়ো জং দক্ষিণ কোরিয়াকে শত্রু আখ্যায়িত করে বলেন, শত্রুদের বিরুদ্ধে পরবর্তী একশনটা আসবে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে। রাষ্ট্রীয় সংবাদ মাধ্যম কোরিয়ান সেন্ট্রাল নিউজ এজেন্সির মাধ্যমে শনিবার তিনি বলেন, দক্ষিণ কোরিয়ার আচরণের নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি দেয়ার চেয়ে ধারাবাহিক প্রতিশোধমুলক ব্যবস্থা নেয়াই উত্তম।
তিনি দক্ষিণ কোরিয়াকে আরো কড়া ভাষায় আক্রমণ করে বলেন, রাবিশকে ডাস্টবিনেই ছুড়ে ফেলা উচিত।

আমাদের সুপ্রিম নেতা, দল এবং রাষ্ট্র আমাকে যে ক্ষমতা দিয়েছে, তার চর্চা করতে আমি সেনাবাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছি। তাদেরকে বলেছি, শত্রুর বিরুদ্ধে পরবর্তী সুচিন্তিত একশনে যেতে।
উল্লেখ্য, ২০০০ সালের ১৩ই জুন দুই কোরিয়ার শীর্ষ নেতাদের মধ্যে প্রথম সামিট শুরু হয়েছিল। তখনকার প্রেসিডেন্ট কিম দায়ে-জংয়ের পুনরুজ্জীবিতকরণ প্রচেষ্টা ছিল, যার মাধ্যমে বাণিজ্যের গতি বৃদ্ধি পেয়েছে। যৌথ প্রকল্পগুলো গতি পেয়েছে এবং এ প্রচেষ্টার ফলে দক্ষিণ কোরিয়ার নেতা পেয়েছিলেন শান্তিতে নোবেল পুরস্কার। সেই সামিটের ২০তম বার্ষিকীকে এমন অনৈক্যের হুমকি দিয়েছেন কিম ইয়ো জং।
দুই কোরিয়ার মধ্যে পুনরুজ্জীবিত করার এই নীতিকে বলা হয়েছিল ‘সানসাইন পলিসি’। এটা তাদের মধ্যকার উত্তেজনাকে প্রশমিত করতে সাহায্য করেছিল। এ ছাড়া পারমাণবিক অস্ত্র বিষয়ক কর্মসূচির জন্য উত্তর কোরিয়ার নেতাদের নগদ অর্থ দিয়েছিল দক্ষিণ কোরিয়া। এ জন্য তাদের অনেক সমালোচনা হয়েছে। কিন্তু উদ্ভূত পরিস্থিতিতে দক্ষিণ কোরিয়ার বর্তমান প্রেসিডেন্টের অফিস থেকে বলা হয়েছে, বিভক্ত এই উপদ্বীপ রাষ্ট্র দুটির মধ্যকার বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে রোববার ভিডিও কনফারেন্সে জরুরি বৈঠক করেছেন দেশটির নিরাপত্তা বিষয়ক কর্মকর্তারা। তারপর শীর্ষ স্থানীয় কর্মকর্তাদের নিয়ে সোমবার বৈঠক করার পরিকল্পনা রয়েছে প্রেসিডেন্ট মুন জায়ে ইনের।
ওদিকে পার্লামেন্টে প্রেসিডেন্টের প্রগতিশীল শিবির সহযোগিতার আহ্বান জানিয়ে একটি প্রতীকি প্রস্তাব আনার পক্ষে এবং আনুষ্ঠানিকভাবে ১৯৫০ থেকে ১৯৫৩ সাল পর্যন্ত কোরিয়া যুদ্ধের ইতির সিদ্ধান্ত জানানোর পক্ষে প্রস্তাব আনতে চান। ওই যুদ্ধ কোনো শান্তিচুক্তি ছাড়াই শেষ হয়েছিল। তার অর্থ হলো, টেকনিক্যালি এখনও যুদ্ধে লিপ্ত আছে দুই কোরিয়া। কিন্তু এমন প্রস্তাবের বিরোধিতা করছেন দেশটির রক্ষণশীল বিরোধীরা। তারা বলছেন, সরকার এমন উদ্যোগ নিলে তাতে দুর্বল হয়ে পড়বে দক্ষিণ কোরিয়া। সরকারের যেকোনো প্রস্তাবকে ভোটে আটকে দেয়ার মতো ভোট নেই এই বিরোধীদের।
দক্ষিণ কোরিয়ার একত্রীকরণ বিষয়ক মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, তারা বিষয়টিকে গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে এবং উত্তর কোরিয়াকে ইন্টারকোরিয়ান চুক্তি মেনে চলতে আহ্বান জানাচ্ছে। বার্তা সংস্থা ইয়ানহোপ বলেছে, দক্ষিণ কোরিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় তার সেনাবাহিনীকে প্রস্তুত রাখার ব্যবস্থা নিচ্ছে।
দুই কোরিয়ার মধ্যে সর্বশেষ এই উত্তেজনা সৃষ্টির নেপথ্যে রয়েছেন দক্ষিণ কোরিয়ার কিছু অধিকারকর্মী। তারা সীমান্তবর্তী এলাকায় পিয়ংইয়ং বিরোধী বার্তা লিখে অনেক বেলুন উড়িয়েছে। তা গিয়ে পড়েছে উত্তর কোরিয়ায়। উত্তর কোরিয়া এর কড়া প্রতিবাদ জানিয়েছে। তারা বলেছে, উত্তর কোরিয়ার পক্ষত্যাগীদের নিয়ন্ত্রণে নিতে ব্যর্থতার জন্য দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে সীমান্ত শহরে সংলাপ বন্ধ করে দিচ্ছে তারা। এরপর থেকেই উত্তেজনা অব্যাহত রয়েছে। দু’বছর আগে সিউলের সঙ্গে পিয়ংইয়ংয়ের যে যোগাযোগ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল এ সপ্তাহে তা বন্ধ করে দিয়েছে উত্তর কোরিয়া। ২০১৮ সালে দুই কোরিয়ার মধ্যে আন্তঃযোগাযোগ প্রতিষ্ঠিত হয়। তারপর প্রথমবারের মতো মঙ্গলবার দক্ষিণ কোরিয়ার সেনাবাহিনীর কোনো কলের উত্তর দেয় নি উত্তর কোরিয়া।

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *