ইসলামে শ্রমিক অধিকার ও সমাজের চিত্র

ইসমাঈল আযহার: [২] হালাল ও সৎ পথে উপার্জন করে জীবন পরিচালনার নির্দেশ দিয়েছে ইসলাম। অসৎ পথে উপার্যনকারীর ব্যাপারে কঠিন শাস্তি বর্ণিত হয়েছে হাদিসে। যুগে যুগে নবীরা তাদের অনুসারীদেরকে হালাল পথে উপার্যন করতে বলেছেন এবং নিজেরাও হালাল ও সৎ পথে উপার্যন করেছেন।

[৩] কোনো নবীই উপার্যনহীন ছিলেন না। কেউ আল্লাহর ওপর ভরসা করে হাত গুটিয়ে বসে ছিলেন না। হাত গুটিয়ে বসে থাকা মূলত তাওয়াক্কুলই নয়। কাজ করার পর ফলাফল আল্লাহর ওপর ছেড়ে দেওয়া হলো তাওয়াক্কুল বা আল্লাহর ওপর ভরসা।

[৪] ইসলাম হালাল উপার্যনের সঙ্গে সঙ্গে শ্রমিকের অধিকারের ব্যাপারে খুবই গুরুত্ব দিয়েছে। বুখারী শরীফের এক হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, ‘নিজ হাতে উপার্জন করা খাদ্যের চেয়ে শ্রেষ্ঠ খাদ্য আর কিছুই হয় না। আর আল্লাহর নবী হযরত দাউদ (আ.) নিজ হাতে উপার্জন করে খেতেন।

[৫] আরেক হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, হজরত মুসা (আ.) হজরত শোয়াইব (আ.) এর বাড়িতে রাখালের দায়িত্ব পালন করেছেন। হজরত দাউদ (আ.) লোহা পুড়িয়ে বর্ম ও অস্ত্র বানাতেন। হযরত আদম (আ.) চাষাবাদ করতেন। আর আমাদের প্রিয় নবী মুহাম্মাদ (সা.) রাখালি ও ব্যবসা করতেন। মানুষের বাড়িতে কখনো কখনো কাজও করেছেন বলে সিরাতের কিতাবে পাওয়া যায়।

[৬] শ্রমিকের অধিকার সম্পর্কে হাদিসে কুদসিতে রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহ তায়ালা বলেন, কেয়ামতের দিন আমি তিন ব্যক্তির বিরুদ্ধে থাকব। তাদের একজন হলো- যে কোনো ব্যক্তিকে মজুর নিয়োগ করলো এবং তার থেকে পুরোপুরি কাজ আদায় করলো অথচ তার প্রাপ্য পারিশ্রমিক দিলো না। (বুখারী শরীফ)

[৭] শ্রমিকের সঙ্গে আচার-আচরণ সম্পর্কেও ইসলাম সুস্পষ্ট দিক-নির্দেশনা দিয়েছে। বিদায় হজের ভাষণে রসুল (সা.) বলেছেন, শ্রমিকের সঙ্গে উত্তম আচরণ করবে। তোমরা যা খাবে তাদেরকে তাই খাওয়াবে। তোমরা যে মানের পোশাক পড়বে তাদেরকেও তাই পড়াবে। কেননা তারা তোমাদের ভাই। আল্লাহ তাদেরকে তোমাদের অধীন করেছেন।

[৮] এক হাদিসে রাসুল সা. শ্রমিকের গায়ের ঘাম সুকানোর আগে তাদের পারিশ্রমিক শোধ করতে বলেছেন। কিন্তু আমাদের সমাজের বাস্তব চিত্র খুবই দুখের। শ্রমিককে দিয়ে দিনভর কাজ করিয়ে নিলেও ন্যায্য পারিশ্রমিক দিতে মালিকপক্ষ পুরোপুরি অনিচ্ছুক বললেই চলে। আজ ন্যায্য পরিশ্রমিক দেওয়া ও তা যথাসময়ে পরিশোধ করা নিয়ে নিয়ে টাল-বাহানা করা স্বাভাবিক বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। অপরের হক মেরে খেলে কঠিন শাস্তি হবে। এজন্য জাহান্নামের আগুনে জ¦লতে হবে।

[৯] ব্যক্তি-জীবন থেকে শুরু করে সমাজ, জাতি, রাষ্ট্র এমনকি আন্তর্জাতিক- সর্বক্ষেত্রেই অধিকার হরণের অন্ত নেই। ক্ষেত-ফসল, ফলমূল, পানির মাছ, ওষুধ দিয়ে, আগুনে পুড়িয়ে বিনষ্ট করা, সহায়-সম্পদ, ঘরবাড়ি, ভূমি ইত্যাদি অন্যায় ও জোরপূর্বক দখল করা, সবই না যায়েজ।

[১০] রাসুল (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি মিথ্যা বলে মুসলমানের হক অধিকার করছে, আল্লাহ তায়ালা জাহান্নামের আগুন তার জন্য অবধারিত করে রেখেছেন এবং জান্নাত তার জন্য হারাম করেছেন। এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর দরবারে আরজ করে, হে আল্লাহর রাসূল (সা.), যদি সামান্য বস্তু হয়? বললেন, ‘মেসওয়াকের কাঠি সমান হলেও (অতি সামন্য হলেও)।’ (মুসলিম)

[১১] মাল-দৌলত, সহায়-সম্পদ, যা বৈধভাবে অর্জিত, তা আল্লাহ প্রদত্ত নিয়ামত, যার হেফাজতের জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করা উচিত, এতে সওয়াবও রয়েছে। একে বিনষ্ট ও ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করতে হবে। আর তেমনই রক্ষা করতে হবে শ্রমিকের হকসমূহ। আল্লাহ তায়ালা বিত্তবানদের দ্বারা গরীবদের রিজিকের ব্যবস্থা করেন। তাদের হক আদায় না করলে কিয়ামতের দিন ভয়াবহ শাস্তির ভাগ করতে হবে। তাই আসুন শ্রমিকের হক আদায় করি এবং তাদের সঙ্গে সুন্দর ব্যবহার ও ন্যায্য পারিশ্রমিক নিশ্চিত করি। আল্লাহ আমাদের তাওফিক দান করুন।

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *