ইইউর স্বাক্ষর শেষে বিতর্ক ব্রিটিশ পার্লামেন্টে

ব্রেক্সিট-উত্তর বাণিজ্য চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছেন ইউরোপীয় নেতারা। তারপর তা আরএএফ জেটে করে লন্ডন পাঠানো হয়েছে। সর্বশেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত বিলটি নিয়ে হাউজ অব কমন্সে বিতর্ক শুরু হয়েছে। ৫ ঘণ্টার বিতর্ক শুরুর আগে এ চুক্তিতে সমর্থন দেয়ার জন্য আহ্বান রাখেন ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। খবর এএফপি ও বিবিসি।

দীর্ঘ দরকষাকষির পর গত সপ্তাহে ব্রেক্সিট-উত্তর চুক্তিতে সমঝোতায় আসে যুক্তরাজ্য ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন কর্তৃপক্ষ। গতকাল টেলিভিশনে সম্প্রচারিত একটি অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ১ হাজার ২৪৬ পৃষ্ঠা দীর্ঘ এ চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন ইইউ কমিশন প্রধান উরসুলা ভন ডার লিয়েন, ইউরোপীয় কাউন্সিলের প্রধান চার্লস মিচেলসহ শীর্ষ ইইউ নেতারা।

লিয়েন বলেন, এটা অনেক দীর্ঘ পথ। সময় এসেছে ব্রেক্সিটকে পেছনে ফেলার। আমাদের ভবিষ্যৎ ইউরোপেই।

সর্বসম্মতভাবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ব্রেক্সিট-উত্তর বাণিজ্য চুক্তি অনুমোদন দিয়েছে। যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টে তা অনুমোদন পেলে নতুন বছর থেকেই এটি কার্যকর হবে।

বৃহস্পতিবার রাত ১১টার সময় ইউরোপীয় ইউনিয়নের অভিন্ন বাজার ও কাস্টমস ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে যাবে ব্রিটেন। এতে বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে এক বছরেরও বেশি সময়ের তিক্ত বাদানুবাদের ইতি ঘটবে।

ব্রাসেলসে ইউরোপীয় কাউন্সিল প্রধান মিচেল বলেন, বৃহৎ ইস্যুগুলো নিয়ে যুক্তরাজ্যের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করতে চায় ইউরোপীয় ইউনিয়ন। এক্ষেত্রে জলবায়ু পরিবর্তন ও মহামারী মোকাবেলায় সমন্বিত উদ্যোগ অনেক গুরুত্ব পাবে।

এদিকে ব্রিটেন ইইউর একক বাজার ছেড়ে যাওয়ার পর এখন ক্রস-চ্যানেল বাণিজ্যের শুল্ক ও নিয়ন্ত্রক বিধিগুলো ১ জানুয়ারি থেকে কার্যকর হবে। কিন্তু তাত্ক্ষণিকভাবে এখানে কোনো শুল্ক ও কোটা ব্যবস্থার দেখা মিলবে না, যা কিনা ব্রিটেনের ইইউ ছাড়ার ঘোষণার পর দুই পক্ষের বাণিজ্যকে ব্যাহত করতে পারে।

ইইউর জার্মান মুখপাত্র সেবাস্তিয়ান ফিশার বলেন, ইইউ রাষ্ট্রদূতরা সর্বসম্মতিক্রমে ইইউ-ইউকে বাণিজ্য ও সহযোগিতা চুক্তির এই অস্থায়ী প্রয়োগকে অনুমোদন দিয়েছে।

তবে ১০ মাসের আলোচনার ফলস্বরূপ সামনে আসা বাণিজ্য চুক্তিকে কার্যকর করার ব্যাপারে কোনো ইইউ দেশই হয়তো আর সময়ক্ষেপণ করবে না। জার্মান চ্যান্সেলরের মুখপাত্র উলরিকে ডিমার বলেন, জোট সরকারের এই বিলে কোনো আপত্তি নেই। জার্মানি এই আলোচ্য চুক্তি গ্রহণ করতে পারে। একইভাবে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁর দপ্তর থেকে বলা হয়, তার অফিসও এ চুক্তিকে সমর্থন করে।

ব্রিটেন একই দিনের মধ্যে হাউজ অব কমন্স ও হাউজ অব লর্ডসে আইনটি পাস করাতে চাইছে। কমন্সে ভোটাভুটি শুরুর আগে দেয়া ভাষণে জনসন ব্রিটিশ এমপিদের প্রতি আহ্বান রাখেন, তারা যেন ব্রেক্সিট-উত্তর বাণিজ্য চুক্তির সমর্থনে ভোট দেন এটা দেশটির ইতিহাসে নতুন একটি অধ্যায়ের সূচনা করবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

ইইউ থেকে বেরিয়ে এলে যুক্তরাজ্য যে ব্লকটির সেরা বন্ধু ও মিত্র থাকবে, সে বিষয়েও জোর দেন জনসন।

হাউজ অব কমন্সে জনসনের ক্ষমতাসীন রক্ষণশীল দল সংখ্যাগরিষ্ঠ হওয়ায় এবং এতে অন্যতম বিরোধী দল লেবার পার্টির সমর্থন থাকায় ‘দি ইইউ (ফিউচার রিলেশনশিপ) বিল’টি সহজেই পাস হবে বলে মনে করা হচ্ছে।

কমন্সে ভোটগ্রহণ শেষে তা উচ্চকক্ষ হাউজ অব লর্ডসে পাঠানো হবে। সেখানেও আইনটি অনুমোদন পাবে তা অনেকটা নিশ্চিত। নিম্নকক্ষ ও উচ্চকক্ষে অনুমোদন পেলে তা ব্রিটিশ রানীর কাছে পাঠানো হবে।

আইনটি কার্যকর হলে ভবিষ্যতে উভয় পক্ষের সম্পর্ক কেমন হবে, এ নিয়ে বিভিন্ন পক্ষ তাদের মতামত দিচ্ছে। ব্রিটিশ জেলেরা বলছেন, এ চুক্তির মাধ্যমে ইইউর কাছে তাদেরকে বিকিয়ে দেয়া হয়েছে। যুক্তরাজ্যের অর্থনীতির ৮০ শতাংশের প্রতিনিধিত্বকারী সেবা খাতকে কোনো গুরুত্বই দেয়া হয়নি।

ইউরোপের সঙ্গে স্টুডেন্ট এক্সচেঞ্জ কর্মসূচি থেকে বেরিয়ে আসছে যুক্তরাজ্য সরকার, যার মাধ্যমে অতীতে হাজারো ইউরোপীয় শিক্ষার্থী উপকৃত হয়ে আসছিল।

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *