আ’লীগের দৃষ্টি এবার তৃণমূলে, মনোযোগী হচ্ছেন দলের কেন্দ্রীয় নেতারা

আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর সম্মেলনের পর পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন প্রায় শেষ। এবার জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে সংগঠনকে শক্তিশালী করতে মনোযোগী হচ্ছেন দলের কেন্দ্রীয় নেতারা। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। তৃণমূলে দল ও সহযোগী সংগঠনের কমিটি গঠন এবং যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়া শুরু করে দিয়েছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতারা। এরই মধ্যে অনেক জেলা-উপজেলায় সম্মেলন করতে আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়েছে। আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর বর্ধিত সভাও অনুষ্ঠিত হচ্ছে বিভিন্ন জেলায়।

দলের জ্যেষ্ঠ নেতারা বলছেন, পরপর তিনবার ক্ষমতায় থাকলেও তৃণমূলে সংগঠন তেমন গোছানো হয়নি। বছরের পর বছর মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি দিয়ে চলছে দলীয় কার্যক্রম। স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের নির্বাচন আসলেই অন্তর্কোন্দল প্রকাশ্যে আসে। এতে করে সাধারণ মানুষের মধ্যে সংগঠন সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা সৃষ্টি হচ্ছে। নতুন নেতৃত্বও তৈরি হচ্ছে না। সংগঠনে প্রাণ সঞ্চারের জন্য নতুন কমিটির কোনো বিকল্প নেই। তাই সারাদেশে মেয়াদোত্তীর্ণ সব ইউনিটে সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন নেতৃত্ব নির্বাচন করা হবে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ২০ ও ২১ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগের ২১তম জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এর এক সপ্তাহের মধ্যেই পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করে দলটি। তবে আওয়ামী লীগের ৭৮টি সাংগঠনিক জেলার মধ্যে ৪৭ জেলায় দীর্ঘদিন ধরে সম্মেলন হচ্ছে না। এই ৪৭ জেলার সম্মেলনের আগে তাদের অধীনে উপজেলা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ডগুলোতে সম্মেলনের প্রস্তুতি নিচ্ছে আওয়ামী লীগ। এজন্য কেন্দ্রীয় নেতাদের সমন্বয়ে গঠিত আটটি সাংগঠনিক টিম বিভিন্ন এলাকায় সফর করছে।
[১] পশ্চিম বঙ্গে ৫০০ টাকা খরচে ৯০ মিনিটে পাওয়া যাবে করোনা শনাক্ত রিপোর্ট ≣ গর্ভবতী অবস্থায় বিয়ে করা কি জায়েজ? ≣ [১] কোভিড-১৯ এ বাগেরহাটে ডাক্তারের মৃত্যু, নতুন শনাক্ত ৩১

এরই মধ্যে অনেক এলাকায় নতুন সম্মেলনও অনুষ্ঠিত হয়েছে। নাটোর, পাবনা, রাজশাহীর বেশকিছু জায়গায় নতুন সম্মেলন হয়েছে। ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণার পরপরই থানা ও ওয়ার্ড কমিটি গঠনে মনোযোগ দেবেন নেতারা।

তাছাড়া দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া চলছে। এ উপলক্ষে পদপ্রত্যাশীরা নেতাকর্মীদের নিয়ে সভা সমাবেশ ও শো-ডাউন করছেন।

\হআবার অনেকেই কেন্দ্রীয় নেতাদের ধারস্ত হচ্ছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও সরব রয়েছেন পদপ্রত্যাশী ও তাদের কর্মী-সমর্থকরা। তাদের মধ্যে বেশ উৎসাহ-উদ্দীপনা লক্ষ করা যাচ্ছে।

সূত্রমতে, তৃণমূলের কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে অভিযোগের স্তূপ জমা পড়েছে গণভবন ও আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে। প্রতিদিনই জেলা-উপজেলা বর্তমান সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এবং বিভিন্ন পদপ্রত্যাশীদের নামে নানা অভিযোগ আসছে। তাছাড়া সম্মেলন হওয়া জেলাগুলোর পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের ক্ষেত্রেও অভিযোগের শেষ নেই। এসব অভিযোগ যাচাই-বাছাই করছেন কেন্দ্রীয় নেতারা।

আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, অভিযোগের মধ্যে বেশির ভাগই অনুপ্রবেশ ও বিএনপি-জামায়াত সংশ্লিষ্টতা। তবে চাঁদাবাজি, মাদক, পদবাণিজ্য, দখল ও মারধরের অভিযোগও রয়েছে পদপ্রত্যাশীদের বিরুদ্ধে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এসব অভিযোগ যাচাই-বাছাই করছেন কেন্দ্রীয় নেতারা। অভিযোগ আসা আর যাচাই-বাছাই করাও সাংগঠনিক প্রক্রিয়ার অংশ। তাই এসব অভিযোগ ছাড়াও যারা কমিটিতে আসতে চাইছেন তাদের সম্পর্কে বিভিন্ন মাধ্যমে খোঁজ-খবর নেওয়া হচ্ছে। সব মিলিয়ে তৃণমূল ঢেলে সাজাতে কেন্দ্র থেকে যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে তার ছোঁয়া লেগেছে জেলা ও উপজেলায়।

\হএ প্রসঙ্গে আলাপকালে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন যায়যায়দিনকে বলেন, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে সাংগঠনিক কাজ মনিটরিং করার জন্য কেন্দ্রীয় নেতাদের সমন্বয়ে বিভাগীয় কমিটি গঠন করা হয়েছে। এসব কমিটির তত্ত্বাবধানে জেলায় জেলায় বর্ধিত সভা করা হবে। কয়েকটি জায়গায় বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সারাদেশে ইউনিটগুলোকে শক্তিশালী করতে কমিটি গঠন প্রক্রিয়াধীন রয়েছে উলেস্নখ করে তিনি আরও বলেন, পর্যায়ক্রমে মেয়াদোত্তীর্ণ সব কমিটি গঠন করা হবে। কোভিড-১৯ এর কারণে জনসমাগমসহ সব বিষয়েই চিন্তা করতে হচ্ছে। এর মধ্যে অনেকে এলাকায় কমিটি গঠন প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। আমরা সংশ্লিষ্ট নেতৃবৃন্দের সঙ্গে সমন্বয় করে কমিটি গঠন প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করছি।

অন্যদিকে, ২০১৯ সালের নভেম্বরে কৃষক লীগ, শ্রমিক লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, যুবলীগ ও মৎস্যজীবী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এই চার সহযোগী ও এক ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের সবটিতেই শীর্ষ পদে এসেছে নতুন নেতৃত্ব। সম্প্রতি এসব সংগঠনের পূর্ণাঙ্গ কমিটিও ঘোষণা করা হয়েছে। নতুন কমিটি ও নতুন নেতৃত্ব পেয়ে অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে চাঙ্গা আওয়ামী লীগের এসব সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী।

সহযোগী সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কেন্দ্রীয় কমিটি গঠন শেষ। তাই এখন তাদের দৃষ্টি তৃণমূলে। এরই মধ্যে যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, কৃষকলীগ, শ্রমিক লীগ ও মৎস্যজীবী লীগের জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া শুরু করেছে। সদ্য পূর্ণাঙ্গ কমিটি পাওয়া যুবলীগ ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণসহ সারাদেশের কমিটি গঠন প্রক্রিয়া শুরু করবে। কৃষকলীগ, শ্রমিক লীগ ও মৎস্যজীবী লীগও এই প্রক্রিয়া শুরু করেছে বলে জানিয়েছেন সংগঠনের শীর্ষ নেতারা। স্বেচ্ছাসেবক লীগের ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের সম্মেলন হয়েছে। এখন বাকি পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা। তাছাড়া জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে সম্মেলনের প্রক্রিয়া শুরু করে দিয়েছে সংগঠনটি। সম্মেলন করার লক্ষ্যে গত রোববার সিলেট জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

আলাপকালে স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি নির্মল রঞ্জন গুহ যায়যায়দিনকে বলেন, তৃণমূলে নতুন কমিটি গঠন করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ জন্য প্রথমেই জেলায় জেলায় বর্ধিত সভা করব। বর্ধিত সভা থেকে সম্মেলনের তারিখ নির্ধারণ করা হবে। এ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সারাদেশে স্বেচ্ছাসেবক লীগের নতুন কমিটি গঠন করা হবে। তৃণমূলের সম্মেলনের জন্য কেন্দ্রীয় নেতাদের সমন্বয়ে আলাদা টিম গঠনের কাজও প্রক্রিয়াধীন বলে জানান তিনি।

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *