আফ্রিকাকে পাঁচ বছর পিছিয়ে দিতে পারে

কভিড-১৯ মহামারী থেকে উত্তরণে বিশ্বজুড়ে টিকাদান কার্যক্রম চলছে। তবে এক্ষেত্রে অসম প্রতিযোগিতা তৈরি হয়েছে। উন্নত দেশগুলো দ্রুতগতিতে তাদের নাগরিকদের টিকার আওতায় নিয়ে আসছে। এক্ষেত্রে পিছিয়ে আছে স্বল্পোন্নত দেশগুলো। যুক্তরাষ্ট্র যেখানে কয়েক মাসের মধ্যে টিকাদান কার্যক্রম শেষ করার প্রত্যাশা করছে, সেখানে আফ্রিকা মহাদেশের মাত্র কয়েক শতাংশ মানুষকে টিকা দেয়া হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে আফ্রিকার জাতিসংঘের অর্থনৈতিক কমিশন (ইউএনইসিএ) বলছে, কভিড-১৯ টিকাদান কার্যক্রমে ধীরগতি এবং দরিদ্র ও ধনী দেশগুলোর মধ্যে ব্যবধান দূর করতে তহবিলের অভাবের মতো বিষয়গুলো আফ্রিকাকে দুই থেকে পাঁচ বছর পিছিয়ে দিতে পারে। খবর ব্লুমবার্গ।

সম্প্রতি এক সাক্ষাত্কারে ইউএনইসিএর নির্বাহী সচিব ভেরা সংওয়ে বলেন, আফ্রিকা দ্রুত টিকাদান কার্যক্রম এগিয়ে নিতে পারছে না। সুতরাং পরিষ্কারভাবে অঞ্চলটির অর্থনৈতিক বৃদ্ধি হ্রাস পেতে চলেছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আগামী দিনে ভ্রমণ ও ব্যবসার ক্ষেত্রে মূল অনুষঙ্গ হতে চলেছে কভিড-১৯ টিকা। ফলে নিশ্চিতভাবেই টিকা না নেয়া দেশগুলোর নাগরিকরা বিশ্বজুড়ে ভ্রমণ ও ব্যবসার ক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়বে। ভেরা সংওয়ে বলেন, টিকা না পাওয়ার বিষয়টি ভ্রমণ ও ব্যবসার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করবে। এটা বাণিজ্যকে ধীর এবং বিনিয়োগকে বাধাগ্রস্ত করবে। এ বিষয়গুলো আফ্রিকার অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি পিছিয়ে দিতে এবং ২ কোটি ৬০ লাখ কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে। ধনী ও অনুন্নত দেশগুলোর মধ্যে তৈরি হওয়া ব্যবধান বন্ধ করতে না পারলে এটা অত্যন্ত উদ্বেগজনক।

২০২১ সালে চার দশকের মধ্যে দ্রুতগতিতে বৈশ্বিক উৎপাদন বৃদ্ধির পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে। তবে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) সাব-সাহারান আফ্রিকায় ৩ দশমিক ৪ শতাংশ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস দিয়েছে। এটা অন্যান্য অঞ্চলের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস থেকে অনেক কম।

আইএমএফ জানিয়েছে, দরিদ্র দেশগুলোর অর্থনীতিকে আগামী পাঁচ বছরে পুনর্নিমাণের জন্য ৪৫ হাজার কোটি ডলার সহায়তা করা প্রয়োজন। পাশাপাশি উন্নত অর্থনীতির সঙ্গে তাদের আয়ের বৃদ্ধিকে আরো ত্বরান্বিত করতে হবে। কয়েকটি আফ্রিকান অর্থনীতি আইএমএফের ৬৫ হাজার কোটি ডলার বিশেষ তহবিল পেতে যাচ্ছে। কভিড-১৯ মহামারী ও পর্বতসম ঋণের বোঝা মোকাবেলায় বৈশ্বিক ঋণদানকারী সংস্থাটি উদীয়মান ও নিম্ন আয়ের দেশগুলোকে এ সহায়তা করার পরিকল্পনা করছে। আফ্রিকার রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী, ১৩০ কোটি জনসংখ্যার এ মহাদেশে মাত্র ১ কোটি ৫০ লাখ ডোজ কভিড-১৯ টিকা দেয়া হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে দেশগুলোয় টিকাদান কার্যক্রম বিস্তৃত করতে ওই অঞ্চলে টিকা উৎপাদনে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন সাংওয়ে।

তিনি বলেন, যদি কেবল উন্নত দেশগুলোই টিকা দেয়, তবে আমাদের উন্নয়নশীল দেশগুলোয় ভাইরাসটির নতুন নতুন স্ট্রেন তৈরি হবে। আর এটা অবশেষে উন্নত বিশ্বে প্রবেশ করবে এবং পুনরায় বিশ্বজুড়ে সংক্রমণের ঝড় দেখা দেবে। সুতরাং টিকা সত্যই জনসাধারণের সম্পদ এবং আমরা কীভাবে সম্মিলিতভাবে এ টিকাদান কার্যক্রম এগিয়ে নিতে পারি, তা দেখতে হবে। টিকাদান কার্যক্রমে ধীরগতির জন্য আফ্রিকা ও ঘনবসতিপূর্ণ শহরগুলো ভারতের মতো একই ধরনের দুর্ভোগের ঝুঁকিতে রয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে সর্বাধিক সস্তা টিকা উৎপাদনকারী দেশটি বৈশ্বিক করোনাভাইরাসের হট স্পট হয়ে উঠেছে।

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *