আফগান সরকার ও তালেবানের মধ্যে শান্তি আলোচনা শুরু

উপসাগরীয় দেশ কাতারের মধ্যস্থতায় অবশেষে আফগান সরকার ও তালেবানের মধ্যে ‘ঐতিহাসিক’ শান্তি আলোচনা শুরু হয়েছে। যদিও আরো কয়েক মাস আগেই শান্তি আলোচনা শুরুর কথা ছিল। তবে বেশকিছু কারণে তা পিছিয়ে গেছে। খবর বিবিসি।

কাতারের রাজধানী দোহাতে আফগান সরকার ও তালেবান প্রতিনিধিদের মধ্যে প্রথমবারের মতো শান্তি আলোচনাকে কেন্দ্র করে আশার আলো দেখছেন বিশেষজ্ঞরা। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও এ আলোচনাকে ‘ঐতিহাসিক’ উল্লেখ করে এ আলোচনার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দিতে দোহা পৌঁছেছেন।

গত ফেব্রুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তালেবানের নিরাপত্তা চুক্তির পরই এ আলোচনা শুরুর কথা ছিল। কিন্তু একজন বিতর্কিত বন্দি বিনিময়ের বিষয়ে মতবিরোধের জের ধরে তা পিছিয়ে যায়। আফগান সরকারের একটি প্রতিনিধি দল এ শান্তি আলোচনায় যোগ দিতে শুক্রবার (১১ সেপ্টেম্বর) দোহার উদ্দেশে কাবুল ছাড়েন। উনিশ বছর আগে এ দিনটিতেই যুক্তরাষ্ট্রে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটেছিল।

আফগান প্রতিনিধি দলের নেতা আব্দুল্লাহ আব্দুল্লাহ বলেন, তারা একটি ন্যায্য ও মর্যাদাপূর্ণ শান্তির সন্ধান করছেন। এর আগে ছয় বন্দির মুক্তি লাভের পর বৃহস্পতিবারই তালেবান ওই আলোচনায় যোগ দেয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে।

তালেবান ও আফগান সরকারের প্রতিনিধিদের মধ্যে এটাই সরাসরি প্রথম কোনো আলোচনা। তালেবানরা সবসময়ই আলোচনার আমন্ত্রণ প্রত্যাখ্যান করে আফগান সরকারকে আমেরিকার পুতুল আখ্যা দিয়ে আসছিল। তবে দুপক্ষই এখন সহিংসতার অবসান আশা করছে, যা ১৯৭৯ সালে শুরু হয়েছিল।

আলাদা করে হলে এ আলোচনার সঙ্গে যোগসূত্র রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র-তালেবান চুক্তির। কারণ সেখানে বিদেশী সৈন্য সরিয়ে নেয়ার ব্যাপারে একটি সময়সীমা নির্ধারণের কথা বলা হয়েছে। ওয়াশিংটনের সঙ্গে তালেবানের ওই সমঝোতায় পৌঁছাতে এক বছরেরও বেশি সময় লেগেছিল। আফগান সরকারের সঙ্গে তালেবানদের আলোচনার বিষয়টি আরো জটিল মনে করা হচ্ছিল।

অনেকে উদ্বেগে ছিলেন যে নারী অধিকারের বিষয়টি জলাঞ্জলি দেয়া হতে পারে। তবে এ আলোচনা অগ্রসর হলে অনেক কিছু স্পষ্ট হয়ে উঠবে। জঙ্গিগোষ্ঠীটি নব্বই দশক পরবর্তী সময়ে কতটুকু পরিবর্তন হয়েছে তা-ও আগামী দিনগুলোর আলোচনায় ফুটে উঠবে। তারা আগে অস্পষ্ট রাখলেও ইদানীং ইসলামী সরকার হলেও সমন্বয়বাদী সরকারব্যবস্থার কথা বলছেন। নব্বই দশকে কঠোর শরিয়া আইনের মাধ্যমে দেশ পরিচালনা করত তত্কালীন তালেবান সরকার।

আফগান সরকার ও তালেবান মধ্যস্থতাকারীদের মধ্যে মতবিরোধের বিষয় হিসেবে দাঁড়িয়েছে কত বন্দি মুক্তি পাবে তার সংখ্যা ও তারা কারা সেটি।

আবার অব্যাহত সহিংসতাও তাতে ভূমিকা রাখছিল। অন্যদিকে তালেবান যাদের মুক্তি চাইছিল তাদের মধ্যে কয়েকজন শীর্ষ নেতার, যার বেশ কয়েকটি বড় হামলার সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিল। সরকারের একজন প্রতিনিধি বলেছেন, আমরা আমাদের জনগণের খুনিদের মুক্তি দিতে পারি না।

ওয়াশিংটন পোস্টের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, সেখানে তিন আফগানও সম্পৃক্ত ছিলেন যারা আমেরিকান সৈন্যদের মৃত্যুর জন্য দায়ী। ফলে শান্তি প্রক্রিয়াটি স্থবির হয়ে পড়েছিল। তবে গত আগস্টে আফগান সরকার শেষ ৪০০ তালেবান বন্দিকে মুক্তি দিতে শুরু করলে শান্তি আলোচনা নিয়ে ইতিবাচক সম্ভাবনা দেখা দেয়।

তবে সবাইকে সরাসরি মুক্তি দেয়া হয়নি কারণ ফ্রান্স ও অস্ট্রেলিয়া বলছে, এর মধ্যে ছয় তালেবান তাদের নাগরিকদের ওপর হামলার জন্য অভিযুক্ত। সব মিলিয়ে আগস্টের এ বন্দিমুক্তি এবং দোহার মধ্যস্থতা উভয়পক্ষের বরফ গলাতে সহায়তা করেছে।

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *