অস্ত্রবিরতিতে রাজি আর্মেনিয়া

বিতর্কিত নাগোর্নো-কারাবাখ নিয়ে চলমান লড়াই-সংঘাতের ষষ্ঠ দিনে এসে অস্ত্রবিরতি প্রস্তাবে সাড়া দিয়েছে আর্মেনিয়া। ফ্রান্স, রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে এ অস্ত্রবিরতির প্রচেষ্টাকে স্বাগত জানিয়ে আজারবাইজানের সঙ্গে বৈঠকে বসতে রাজি হয়েছে তারা। খবর বিবিসি।

দক্ষিণ ককেকাসে গত কয়েকদিনে তীব্র সংঘাতের ঘটনায় হতাহতের সংখ্যা বেড়েছে। গত রোববার বিতর্কিত নাগোর্নো-কারাবাখ নিয়ে দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। আনুষ্ঠানিকভাবে আজারবাইজানের অংশ হলেও ওই অঞ্চলটি পরিচালনা করে আসছে জাতিগত আর্মেনিয়রা।

এর আগেও সাবেক এই সোভিয়েত রাষ্ট্র দুটি একে অন্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নেমেছিল। ১৯৮৮ ও ১৯৯৪ সালের যুদ্ধও অস্ত্রবিরতিতে বন্ধ হয়েছিল।

সর্বশেষ এ সংঘাত বন্ধে ফ্রান্স, রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন ওএসসিই মিনস্ক মধ্যস্থতা গ্রুপটি অস্ত্রবিরতির আহ্বান জানিয়েছে। তবে প্রস্তাবিত শান্তি আলোচনায় এখনো সাড়া দেয়নি আজারবাইজান।

শুক্রবার এক বিবৃতিতে আর্মেনিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, অস্ত্রবিরতিতে পৌঁছানোর লক্ষ্যে সংঘাত নিরসনে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে ফ্রান্স, রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত রয়েছে আর্মেনিয়া।

তবে নাগোর্নো-কারাবাখে আগ্রাসনের বিরুদ্ধে কঠোর ও দৃঢ়চেতা জবাব অব্যাহত থাকবে বলেও আর্মেনিয়ার ওই বিবৃতিতে জানানো হয়েছে। নাগোর্নো-কারাবাখ অঞ্চলের নৃ-তাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, নতুন করে ৫৪ জনসহ মোট ১৫৮ সামরিক সদস্যের প্রাণহানি হয়েছে এই সংঘাতে। এর পরই আর্মেনিয়ার যুদ্ধবিরতির ইচ্ছা প্রকাশ করল।

আজারবাইজানের সঙ্গে সবশেষ এ লড়াই-সংঘাত নিরসন যে আলোচনার মাধ্যমে সম্ভব; বিবদমান দুই পক্ষের মধ্যে প্রথমবারের মতো শুক্রবার বিবৃতি দিয়ে সেই সম্ভাবনার ইঙ্গিত দিল আর্মেনিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। গত রোববার সামরিক লড়াই শুরুর পর এর আগে সংঘাত বন্ধে রাশিয়াসহ পশ্চিমা নেতাদের আহ্বানে সাড়া দেয়নি কোনো দেশ।

ছয়দিন ধরে চলা এ লড়াইয়ে কোনো সামরিক প্রাণহানির কথা না জানালেও আজারবাইজান জানিয়েছে, আর্মেনিয়ার সেনাদের গোলার আঘাতে আজারবাইজানের ১৯ জন বেসামরিক নাগরিক প্রাণ হারিয়েছেন।

তবে দুই দেশের মধ্যে চলমান এ বিবাদ সর্বাত্মক লড়াইয়ে রূপ নেয়ার ঝুঁকি তৈরি করেছে। যাতে করে অনেকেই এতে যুক্ত হতে পারে। এক্ষেত্রে দুই পক্ষের হয়ে সামনের সারিতে মুখোমুখি হতে পারে রাশিয়া ও তুরস্ক।

আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে আজারবাইজানের শক্তিশালী মিত্র হলো তুরস্ক। এদিকে আর্মেনিয়ায় সামরিক ঘাঁটি রয়েছে রাশিয়ার। চলমান লড়াইয়ের মধ্যে তুরস্কের যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করার দাবি করেছে আর্মেনিয়া। অবশ্য তুরস্ক আর আজারবাইজান উভয়ই আর্মেনিয়ার এমন অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে।

বৃহস্পতিবার তুরস্কের নিন্দা জানিয়ে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ বলেন, গোয়েন্দা প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে, জিহাদি গোষ্ঠীগুলোর ৩০০টি যুদ্ধবিমান সিরিয়া থেকে তুরস্ক হয়ে আজারবাইজানে পৌঁছেছে। তিনি একে সীমা অতিক্রমকারী ঘটনা হিসেবে অভিহিত করে এর ব্যাখ্যা দাবি করেছেন আঙ্কারার কাছে।

ব্রাসেলসে ইউরোপীয় ইউনিয়নের নেতাদের এক বৈঠকে তিনি ন্যাটো জোটভুক্ত তুরস্কের আচরণ নিয়ে মনোযোগ দিতে ন্যাটোর সব সদস্য দেশের প্রতি আহ্বান জানান। একই দিনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট মাখোঁ এক যৌথ বিবৃতিতে দীর্ঘদিনের আঞ্চলিক সমস্যার সমাধানে আলোচনার টেবিলে বসার জন্য আজারবাইজান ও আর্মেনিয়ার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *