অবশেষে গ্রেপ্তার হলো রামগঞ্জের ভয়ঙ্কর পরী

লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জে অবশেষে সেই ভয়ঙ্কর পরী বেগমকে গ্রেপ্তার করেছে রামগঞ্জ থানা পুলিশ। গত মঙ্গলবার দুপুরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুনতাসির জাহানের কার্যালয় থেকে তাকে গ্রেপ্তার করেছে থানা পুলিশ। গ্রেপ্তারের পর তাকে লক্ষ্মীপুর জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন রামগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. আনোয়ার হোসেন। গত ২৭শে জুন দৈনিক মানবজমিন পত্রিকায় এক্সক্লুসিভ পাতায় প্রকাশিত ‘সুন্দরী পরীর ভয়ঙ্কর প্রতারণার ফাঁদ’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হলে নড়েচড়ে বসেন প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বিভাগের লোকজন। পরীর গ্রেপ্তারের খবর সর্বত্র ছড়িয়ে পড়লে রামগঞ্জ উপজেলাব্যাপী ভুক্তভোগীরা স্বস্তি প্রকাশ করেছে। পরীর না জানা আরো অনেক অপকর্ম নিয়ে মুখ খুলতে শুরু করেছেন ভুক্তভোগীরা। এদিকে স্থানীয়রা জানিয়েছেন ভয়ঙ্কর ওই পরীকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তার বিভিন্ন অপকর্মের নানান তথ্য বের হয়ে আসবে। কখনো তানিশা আক্তার, আবার কখনো ফারিয়া চৌধুরী অথবা পরী (৩০) যখন যে নামে ভর করুক না কেন যার ওপর একবার পরীর নজর পড়েছে আর্থিক-মানসিক ও শারীরিকভাবে ভয়ঙ্কর বিপদে ফেলে দেয়ার ঘটনা শত শত।
হতদরিদ্র পরিবারে জন্ম নেয়া ও একজন চা বিক্রেতার স্ত্রী হওয়া সত্ত্বেও গোসল করতেন বিলাশবহুল বাথটাবে। রুম ভর্তি দামি দামি আসবাবপত্রে ঠাসা। সমাজের উঁচু স্তরের বেশকিছু পুরুষ পতিতার আনাগোনা ছিল প্রকাশ্যে। রামগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসারসহ প্রশাসন, পুলিশ ও রাজনৈতিক পরিচয়ে উপজেলার শতাধিক গরিব মানুষদের সরকারি ঘর বরাদ্দ, বয়স্ক ও বিধবা ভাতা এবং বিদ্যুতের মিটার দেয়ার নাম করে হাতিয়ে নিয়েছে লাখ লাখ টাকা। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন রঙে বিভিন্ন রূপে টার্গেট করা ব্যক্তিদের জীবন অতিষ্ঠ করে তুললেও অবশেষে শেষ রক্ষা হলো না। স্থানীয় এলাকাবাসী ও ভুক্তভোগী কয়েকজন নারী ও গরিব মানুষরা জানান, শুধু নামেই নয় সুন্দর চেহারার অধিকারী পরী বেগম। কখনো উপজেলা নির্বাহী অফিসার কখনো মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা আবার কখনো সমাজসেবা কর্মকর্তা সেজে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন স্থানে পুরুষ, গ্রামের অবলা দরিদ্র অসহায় নারী ও কিশোরীদের ফাঁদে ফেলে নিজের ইচ্ছা মাফিক অর্থ আদায় করাই হলো এই পরীর কাজ। আর উঠতি বয়সের যুবক, চাকরীজীবী, জনপ্রতিনিধি, রাজনীতিবিদসহ ব্যক্তিদের ফেসবুকে আপত্তিকর চ্যাটিং বা মোবাইল ফোনে কথা বলে ট্র্যাপে ফেলেও প্রতারণার মাধ্যমে হাতিয়ে নিয়েছে কয়েক লাখ টাকা। কিন্তু এ ফাঁদ যে কত ভয়ঙ্কর তা যখন টের পেতো তখন কিছুই করার আর থাকতো না ভুক্তভোগীদের। তার ওইসব অপকর্মকে শেল্টার দেয়ার জন্য রয়েছে উপজেলায় রয়েছে অঘোষিত একটি সিন্ডিকেট। যার ফলশ্রুতিতে ভয়ে কেউ মুখ খুলতে সাহস পায়নি কখনো। এটা কোনো কাল্পনিক কোনো জ্বীন-পরীর গল্প না বা ডানাবিহীন পরীও না। জেলার রামগঞ্জের এক প্রতারক পরী বেগমের কথা বলছি। বেশ কয়েক মাস থেকে সে উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম-গঞ্জের এলাকা থেকে ওই পরী বেগমের নানান প্রতারণার খবর এখন টক অব দ্য রামগঞ্জে পরিণত হয়েছে। পরীর এহেন অশালীন ও প্রতারণার কর্মকাণ্ডের বিচারের দাবিতে ভুক্তভোগী শিরীন আক্তার নামে এক গৃহবধূ একাধিক নারীর পক্ষে বাদী হয়ে গত বৃহস্পতিবার রামগঞ্জ উপজেলার নির্বাহী অফিসার মুনতাসির জাহানের বরাবর একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন।
এ ব্যাপারে পরী বেগমের স্বামী আলমগীর হোসেন জানান, আমার স্ত্রীর বিরুদ্ধে অভিযোগগুলো মিথ্যা। শিরিন বেগম ইউএনও অফিসে যে অভিযোগ করেছে তাও পুরোপুরি সত্য নয়। আমার স্ত্রীর সঙ্গে কথা বলার সময় সে জানায় শিরিন বেগম তাকে মাত্র ২ হাজার ৫০০ টাকা দিয়েছে। বাকি টাকা সে আত্মসাৎ করে আমার স্ত্রীকে দোষারোপ করছে। এ ব্যাপারে রামগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুনতাসির জাহান জানান, ফাতেমা আক্তার পরীর বিরুদ্ধে অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্তের জন্য সমাজসেবা কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেনকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তদন্ত শেষে পরীর বিরুদ্ধে বিধিমোতাবেক আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
রামগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. আনোয়ার হোসেন জানান, আমরা পরী বেগমের বিরুদ্ধে একটি প্রতারণার অভিযোগ পেয়ে তদন্তে সত্যতা পেয়ে তাকে গ্রেপ্তার করেছি। তার বিরুদ্ধে প্রতারণা ও প্রশাসনের পরিচয়ে টাকা হাতিয়ে নেয়ার ঘটনায় গত মঙ্গলবার বিকালে লক্ষ্মীপুর জেলা কারাগারে প্রেরণ করেছি।

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *