অফিস স্পেস অর্ধেকে নামিয়ে আনছে ফুজিত্সু

জাপানভিত্তিক তথ্যপ্রযুক্তি সেবা এবং পণ্য সরবরাহকারী ফুজিত্সু লিমিটেড নিজেদের অফিস স্পেস অর্ধেকে নামিয়ে আনার ঘোষণা দিয়েছে, যা আগামী তিন বছরের মধ্যে বাস্তবায়ন করা হবে। কভিড-১৯ মহামারীর ভয়াবহ এ সময়ে সামগ্রিক ব্যবসার দিক বিবেচনা করে ব্যয় সংকোচন এবং নতুন বাস্তবতার সঙ্গে মানিয়ে নিতে এমন পরিকল্পনা নিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। অফিস স্পেস কমানোর পাশাপাশি অর্ধেক কর্মীকে বাসায় থেকে স্থায়ীভাবে কাজ করার সুবিধা দিতে যাচ্ছে ফুজিত্সু। বিষয়টি নিয়ে কার্যক্রম চলমান রয়েছে। খবর রয়টার্স।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, শুধু জাপানেই ফুজিত্সুর কর্মী রয়েছে ৮০ হাজার। এর অর্ধেকই ফ্লেক্সিবল কাজের সুবিধা পাবেন। ফুজিত্সুর দাবি, বাসায় থেকে কাজের সুবিধা সব সময় একটি স্ট্যান্ডার্ডের মধ্যে পড়ে। কর্মীরা সুবিধামতো কাজ করতে পারবেন।

চীনের উহানে গত বছর ডিসেম্বরে প্রথম নভেল করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। ভাইরাসটি খুব দ্রুত বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে। নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণে সৃষ্ট কভিড-১৯ মহামারীর ভয়াবহতা এখনো উদ্বেগজনক পর্যায়ে রয়েছে। বিশ্বজুড়ে প্রতিদিনই আক্রান্ত এবং মৃতের সংখ্যা বাড়ছে। প্রতিকূল এ সময়ে কর্মীদের নিরাপত্তার স্বার্থে এর আগে সোস্যাল মিডিয়া জায়ান্ট ফেসবুক ও মাইক্রোব্লগিং সাইট টুইটার নিজেদের কর্মীদের জন্য স্থায়ীভাবে বাসায় থেকে কাজের সুবিধা দেয়ার ঘোষণা দিয়েছিল। কিন্তু ফেসবুক ও টুইটারের মতো সিলিকন ভ্যালির টেক জায়ান্টগুলোর সিদ্ধান্তের সঙ্গে ফুজিত্সুর পরিকল্পনাকে একই কাতারে ফেলা ঠিক হবে না বলে মনে করা হচ্ছে। যদিও ফুজিত্সু অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোর মতোই বলছে, কভিড-১৯ মহামারীর ভয়াবহ এ সময়ে প্রতিষ্ঠানটি ‘নতুন স্বাভাবিক’ পরিস্থিতির সঙ্গে কর্মীদের মানিয়ে নেয়া এবং কাজের সুযোগ করে দিচ্ছে।

বৈশ্বিক তথ্যপ্রযুক্তি সেবা ও হার্ডওয়্যার খাতে ফুজিত্সু একটি নামকরা ব্র্যান্ড। ফুজিত্সুর নামের সঙ্গে প্রথমেই সামনে আসে স্মার্ট গেটআপের ল্যাপটপ। ফুজিত্সু ব্যক্তিগত ব্যবহার্য কম্পিউটিং পণ্য তৈরি করলেও এর ব্যাপ্তি অনেক বড়। ফুজিত্সুর পণ্যতালিকায় ল্যাপটপের পাশাপাশি রয়েছে মেইনফ্রেম কম্পিউটার প্রযুক্তি, প্রসেসর, স্টোরেজ ডিভাইস, টেলিকম যন্ত্রাংশ, মাইক্রোইলেকট্রনিক্স, এয়ার কন্ডিশনিং এবং তথ্যপ্রযুক্তি সলিউশন সেবা। তথ্যপ্রযুক্তি হার্ডওয়্যার ব্যবসায় খুব একটা ভালো অবস্থানে নেই ফুজিত্সু। যে কারণে হার্ডওয়্যার উৎপাদন থেকে নজর এখন অনেকটাই তথ্যপ্রযুক্তি সলিউশন সেবায় সরিয়ে নিতে কাজ করছে। এর সঙ্গে তাল মিলিয়ে জাপানে প্রতিষ্ঠানটির ৮০ হাজার গ্রুপ কর্মী সুবিধাজনক সময় এবং যেখান থেকে সম্ভব সেখান থেকে ‘বাসা-থেকে-কাজ’ মানের অধীনে কাজ করবেন।

বিবৃতিতে ফুজিত্সুর মানব সম্পদ বিভাগের প্রধান হিরোকি হিরামাটসু বলেন, অফিসে ?বসে দৈনন্দিন সম্পাদন করবেন এমন নকশার ওপর নির্ভরশীল কর্মীদের কাজ, ভাতা ও কল্যাণ কাঠামো আমরা নতুন করে খতিয়ে দেখছি। অফিস স্পেস কমানোর পাশাপাশি অনেক কর্মী এক স্থানে রয়েছেন এ রকম জায়গায় স্যাটেলাইট অফিস স্থাপনের পরিকল্পনাও রয়েছে ফুজিত্সুর। কাজের জন্য নির্ধারিত স্থান ও পরিবেশের সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসার দিকেই অগ্রসর হচ্ছি আমরা।

কভিড-১৯ মহামারী ঘিরে ফুজিত্সুর নতুন এ সিদ্ধান্তে ‘নতুন স্বাভাবিক’ বিষয়টি কেবল সিলিকন ভ্যালির থাকছে না। ফুজিত্সু গুগল-ফেসবুকের মতো আরো অনেক বৃহৎ মার্কিন প্রযুক্তি জায়ান্টের আগের প্রতিষ্ঠান। জাপানভিত্তিক এ প্রতিষ্ঠান রেওয়াজ মানার বেলায় কট্টর অবস্থানেই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। এর ফলে মনে করা হচ্ছে, ফুজিত্সুর এ সিদ্ধান্ত সম্ভবত গোটা বিশ্বের জন্য জানান দিচ্ছে যে ‘ নভেল করোনাভাইরাসপূর্ব স্বাভাবিক’ দিয়ে আর চলবে না। ব্যক্তি কিংবা করপোরেট প্রতিষ্ঠান সবাইকে নতুন করে ভাবতে হবে।

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *