অনিশ্চয়তায় এশিয়ায় জ্বালানি তেলের চাহিদা বৃদ্ধির প্রবণতা

অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের শীর্ষ ভোক্তা দেশগুলোর অধিকাংশের অবস্থান এশিয়ায়। তাই এশিয়ার বাজার পরিস্থিতি জ্বালানি পণ্যটির ওঠানামার ক্ষেত্রে বিরাট অবদান রাখে। সম্প্রতি নভেল করোনাভাইরাস সংকট কাটিয়ে এ অঞ্চলের অর্থনীতিতে গতি ফিরেছে। মাঝে চীন, ভারতসহ অনেক দেশেই জ্বালানি তেলের চাহিদায় উল্লম্ফন দেখা দিয়েছে। তবে জ্বালানি পণ্যটির চাহিদা বৃদ্ধির সে গতি বর্তমানে অনেকটা ফিকে হয়ে এসেছে। দ্বিতীয় পর্যায়ে মহামারী সংক্রমণের আশঙ্কা থেকে এশিয়ার বাজারে জ্বালানি তেলের চাহিদায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে বলে মনে করছেন খাতসংশ্লিষ্টরা। এদিকে ব্রাজিল ও নরওয়েসহ কয়েকটি নন-ওপেক দেশের উত্তোলন বৃদ্ধির প্রবণতায় ওপেক জোটের জ্বালানি তেলের চাহিদা আরো কমিয়ে আনতে পারে। খবর রয়টার্স ও আইসিআইএস।

মালয়েশিয়ার রাষ্ট্রায়ত্ত জ্বালানি তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাস কোম্পানি পেট্রোলিয়াম ন্যাশনাল বারহাদের (পেট্রোনাস) বিদায়ী সিইও এ বিষয়ে বলেন, নভেল করোনাভাইরাসের কারণে গত কয়েক মাস ধরে এশিয়ার অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের চাহিদায় ধস নেমেছে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে পরিস্থিতি অনেকটা সামলে উঠেছে অঞ্চলটি। অর্থনৈতিক গতির সঙ্গে সঙ্গে পণ্যটির চাহিদা চাঙ্গা হয়ে উঠেছিল। ঠিক এ সময় এসে দ্বিতীয় ধাপে এশিয়ায় মহামারী প্রাদুর্ভাব বাড়তে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। আর সত্যি তা হলে অঞ্চলটিতে জ্বালানি পণ্যটির ব্যবহার ফের ধাক্কা খাবে এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই।

পেট্রোনাসের বর্তমান প্রেসিডেন্ট ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ওয়ান জুলকিফলি বিন ওয়ান আরিফিন বলেন, এশিয়ার অধিকাংশ দেশে সম্প্রতি অর্থনৈতিক কার্যক্রম স্বাভাবিকে ফেরার লক্ষণ দেখা দিয়েছে। তবে সে তুলনায় জ্বালানি তেলের চাহিদা বৃদ্ধির প্রবণতা বেশ হতাশাজনক। এছাড়া মহামারীতে ডিসপোজেবল আয়ের পরিমাণ কমায় অনেক দেশের সরকারের কাছে জ্বালানি সাশ্রয়ক্ষমতার বৃদ্ধি অগ্রাধিকার পেয়েছে। কারণ এমন সময়ে পণ্যটির চাহিদা কমেছে, যখন এশিয়ার দেশগুলোতে জ্বালানি তেলের পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে, বিশ্ববাজারে সরবরাহ ব্যাহত হচ্ছে, একই সঙ্গে ভোক্তারা পণ্যটির ক্রয় কমিয়ে দিয়েছে।

এদিকে জ্বালানি তেলের বাজার নিয়ন্ত্রণে ওপেক প্লাস জোটের রেকর্ড উত্তোলন হ্রাস চুক্তিটি বছর শেষে লক্ষ্য পূরণে ব্যর্থ হতে পারে। একদিকে চাহিদা হ্রাসের সম্ভাবনা, অন্যদিকে নন-ওপেকের দেশগুলো বিশেষ করে ব্রাজিল ও নরওয়ে থেকে পণ্যটির সরবরাহ বৃদ্ধি এক্ষেত্রে মূল প্রভাবক হিসেবে কাজ করতে পারে। সম্প্রতি ওপেক চলতি বছর জোটটির সদস্যভুক্ত দেশগুলোর জ্বালানি তেলের চাহিদার পূর্বাভাস কমিয়ে এনেছে।

ওপেকের সর্বশেষ পূর্বাভাসে জানানো হয়েছে, চলতি বছর ওপেকভুক্ত দেশগুলোর জ্বালানি তেলের বৈশ্বিক চাহিদা কমে দৈনিক গড়ে ২ কোটি ৩৬ লাখ ব্যারেলে নামতে পারে, আগের মাসের পূর্বাভাসের তুলনায় যা দৈনিক গড়ে ৭ লাখ ব্যারেল কম। অন্যদিকে এ সময় নন-ওপেক দেশগুলোতে জ্বালানি পণ্যটির উত্তোলন দৈনিক গড়ে তিন লাখ ব্যারেল বাড়তে পারে বলে জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। বিশেষ করে ব্রাজিল, নরওয়ে, গায়ানা ও অস্ট্রেলিয়াতে পণ্যটির উত্তোলন ব্যাপকহারে বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

তবে সবকিছু ছাপিয়ে বছরের দ্বিতয়ার্ধেও জ্বালানি তেলের বৈশ্বিক উত্তোলনে নিম্নমুখী প্রবণতা পড়তে পারে। মূলত বৈশ্বিক চাহিদার ধস ও অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা পণ্যটির চাহিদা হ্রাসে প্রভাবক হিসেবে কাজ করতে পারে। এছাড়া ওপেক প্লাস জোটের রেকর্ড উত্তোলন হ্রাস চুক্তি তো রয়েছেই। চুক্তিটির নথি অনুযায়ী, ওপেক ও নন-ওপেকের কয়েকটি দেশ সম্মিলিতভাবে আগামী ৩১ জুলাই পর্যন্ত দৈনিক গড়ে ৯৭ লাখ ব্যারেল জ্বালানি তেল উত্তোলন কমিয়ে আনবে, যা পণ্যটির মোট বৈশ্বিক সরবরাহের ১০ শতাংশ। চুক্তিতে স্বাক্ষর করা সব সদস্য দেশ মোট সক্ষমতার ২৩ শতাংশ জ্বালানি তেল উত্তোলন কমাবে। এর মধ্যে সৌদি আরব ও রাশিয়া প্রত্যেকেই আলাদাভাবে পণ্যটির উত্তোলন দৈনিক গড়ে ২৫ লাখ ব্যারেল এবং ইরাক একা দৈনিক গড়ে ১০ লাখ ব্যারেল কমাবে। ওপেকের ইতিহাসে সংশ্লিষ্ট দেশগুলো এটাই সর্বোচ্চ জ্বালানি তেলের উত্তোলন হ্রাস চুক্তি। এছাড়া মে মাসে নির্দিষ্ট কোটার তুলনায় বেশি উত্তোলন করায় চুক্তিতে ভারসাম্য ফেরাতে ইরাক ও কাজাখস্তানের চলতি মাস থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত অতিরিক্ত উত্তোলন কর্তনের কথা রয়েছে।

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *