ডেল্টার সংক্রমণ সত্ত্বেও আগস্টে চীনের বাণিজ্যে উল্লম্ফন

গত বছরের মাঝামাঝি থেকেই ঘুরে দাঁড়িয়েছিল চীনা অর্থনীতি। কভিডের বিপর্যয় কাটিয়ে রেকর্ড প্রবৃদ্ধির দেখা পায় দেশটি। এরপর চলতি বছরের মাঝামাঝিতে আবারো ছড়িয়ে পড়ে কভিডের অতি সংক্রামক ডেল্টার প্রাদুর্ভাব। গত মাসে কয়েকটি কনটেইনার বন্দরের কার্যক্রম স্থগিত রাখতেও বাধ্য হয় দেশটি। ঝুঁকি তৈরি হয় বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির পুনরুদ্ধার কার্যক্রমে। এমন পরিস্থিতিতেও আগস্টে চীনের বাণিজ্যপ্রবাহ অপ্রত্যাশিতভাবে বেড়েছে। খবর এপি।

গতকাল প্রকাশিত চীনের শুল্ক বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, আগস্টে চীনের রফতানি আয় ২৯ হাজার ৪৩০ কোটি ডলারে পৌঁছেছে। আয়ের এ পরিমাণ আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ২৫ দশমিক ৬ শতাংশ বেশি। দেশটির রফতানি আয়ে এমন প্রবৃদ্ধি জুলাইয়ে ১৮ দশমিক ৯ শতাংশকেও ছাড়িয়ে গেছে। বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন পণ্যের তুমুল চাহিদা চীনের রফতানি বাড়াতে সহায়তা করেছে।

রফতানির পাশাপাশি দেশটির আমদানিও রেকর্ড পরিমাণ বেড়েছে। গত মাসে আমদানি ৩৩ দশমিক ১ শতাংশ বেড়ে ২৩ হাজার ৬০০ কোটি ডলারে পৌঁছেছে। জুলাইয়ে এ প্রবৃদ্ধির পরিমাণ ছিল ২৮ দশমিক ৭ শতাংশ, যদিও আগস্টে চীনের বাণিজ্য উদ্বৃত্ত কিছুটা সংকুচিত হয়েছে। এ সময় দেশটির বাণিজ্য উদ্বৃত্ত ১ শতাংশ কমে ৫ হাজার ৮৩০ কোটি ডলারে পৌঁছেছে।

গত বছরের বিশ্বজুড়ে অর্থনৈতিক কার্যক্রম বন্ধের প্রভাব এবং যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য দেশে পুনরায় সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ায় চীনের বাণিজ্যপ্রবাহে শ্লথগতির শঙ্কা তৈরি হয়েছিল। পুনরায় সংক্রমণ বৈশ্বিক শিল্প উৎপাদন চেইনে দীর্ঘস্থায়ী বাধার সৃষ্টি করে এবং প্রভাবিত করে ভোক্তাদের অনুভূতিকে। আবার স্বাস্থ্য সংকট কমে যাওয়া, বিনোদন ও অন্যান্য পরিষেবা শিল্প পুনরায় চালু এবং বৈদেশিক প্রতিদ্বন্দ্বীরা বিশ্ববাজারে ফিরে আসার বিষয়টিও চীনের রফতানি প্রবৃদ্ধিতে শঙ্কা তৈরি করেছিল। যদিও বিশ্বজুড়ে চীনা পণ্যের তুমুল চাহিদা আশঙ্কাগুলোকে পরাজিত করতে সহায়তা করেছে।

ক্যাপিটাল ইকোনমিকসের শিনে ইউ একটি প্রতিবেদনে বলেন, গত মাসে প্রত্যাশার তুলনায় চীনের রফতানি ও আমদানি অনেক বেশি শক্তিশালী ছিল। এক্ষেত্রে ভোক্তা চাহিদা অবদান রেখেছে।

কভিডজনিত কারণে বিশ্বজুড়ে কারখানা ও দোকান বন্ধ হয়ে যাওয়ায় গত বছরের প্রথমার্ধে বৈশ্বিক চাহিদা কমে গিয়েছিল। ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টি ভাইরাসটি নিয়ন্ত্রণে এনে ২০২০ সালের মার্চে বিধিনিষেধ শিথিল করে। এরপর দেশটির রফতানি আয় বাড়তে থাকে। এ সময় প্রতিদ্বন্দ্বী দেশগুলো মহামারী মোকাবেলায় অর্থনৈতিক কার্যক্রম সংকুচিত করেছিল। ফলে চলতি বছরের শুরুর দিকে চীনের রফতানি আকাশছোঁয়া উচ্চতায় পৌঁছে যায়।

যুক্তরাষ্ট্রে চীনের রফতানি আগস্টে ১৫ দশমিক ৫ শতাংশ বেড়ে ৫ হাজার ১৭০ কোটি ডলারে পৌঁছেছে। বেইজিংয়ের প্রযুক্তিগত উচ্চাকাঙ্ক্ষার বিরুদ্ধে দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক বৃদ্ধি সত্ত্বেও এ প্রবৃদ্ধির পরিমাণ বেড়েছে। তবে এ সময়ে চীনে মার্কিন পণ্য আমদানিও বেড়েছে। আগস্টে যুক্তরাষ্ট্র থেকে চীনের আমদানি আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৩৩ দশমিক ৩ শতাংশ বেড়ে ১ হাজার ৪০০ কোটি ডলারে পৌঁছেছে। জুলাইয়ে এ প্রবৃদ্ধি ছিল ২৫ দশমিক ৫ শতাংশ।

চলতি বছরের জানুয়ারিতে দায়িত্ব নেয়া মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এখনো পরিষ্কার করেননি যে চীনা পণ্য আমদানিতে তিনি তার উত্তরসূরি ডোনাল্ড ট্রাম্প আরোপিত শুল্ক প্রত্যাহার করবেন কিনা। বিষয়টি নিয়ে দুই পক্ষ আলোচনার জন্য একমত হলেও এখনো কোনো তারিখ ঘোষণা করা হয়নি।

এদিকে ২৭ দেশের জোট ইউরোপীয় ইউনিয়নে (ইইউ) চীনের রফতানি কমেছে। গত মাসে ইইউতে চীনের রফতানি ৯ দশমিক ৯ শতাংশ কমে ৪ হাজার ৬২০ কোটি ডলারে দাঁড়িয়েছে। পাশাপাশি ইইউ থেকে আমদানি ২২ শতাংশ কমে ২ হাজার ৫৩০ কোটি ডলারে পৌঁছেছে। ইউরোপের সঙ্গে চীনের বাণিজ্য উদ্বৃত্ত ১০ দশমিক ৯ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৯০ কোটি ডলারে।

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *