আস্থা রাখুন, ডিগবাজি খাবো না: সিইসি

নির্বাচন কমিশনের ওপর রাজনৈতিক দলগুলোকে আস্থা রাখার অনুরোধ করলেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল। একই সঙ্গে নির্বাচন কমিশনের কার্যক্রমের ওপর নজর রাখার আহ্বানও জানিয়েছেন তিনি।

সিইসি বলেন, ‘আমাদের ওপর একটু আস্থা রাখুন। আস্থা রাখতে গিয়ে চোখ বন্ধ করে রাখলে হবে না। আপনাদের নজরদারি থাকতে হবে। আমরা কি আসলেই সাধু পুরুষ না ভেতরে ভেতরে অসাধু। সেই জিনিসটা আপনারা যদি নজরদারি না রাখেন, তাহলে আপনারাও আপনাদের দায়িত্ব পালন করলেন না।

তিনি বলেন, ‘কঠোর নজরদারিতে আমাদের রাখতে হবে। কোনো কমপ্লেইন পেয়েছেন? সঙ্গে সঙ্গে আমাদের কাছে পাঠান। অনেক টেলিফোন থাকবে সে সময়। ক্যামেরা দিয়ে হয়তো আমরা অনেক সেন্টার ওয়াচ করতে পারবো। আমরা প্রতিশ্রুতি যে দিচ্ছি তার কিছু মূল্য থাকা উচিত। একেবারে যে আমরা ডিগবাজি খেয়ে যাবো তা তো নয়। সেটি হওয়ার কথা নয়।’

রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে মঙ্গলবার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপের অষ্টম দিনে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের সঙ্গে বৈঠকে এ কথা বলেন সিইসি।

এর আগে কে এম নুরুল হুদার নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন গত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আয়োজন করে। সে ভোটে ব্যাপক অনিয়ম, দিনের ভোট রাতে হওয়াসহ বিভিন্ন কেন্দ্রে শতভাগ ভোট পড়ারও অভিযোগ ওঠে। এরপর ইসির ওপর আস্থা হারানোর কথা বলে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল।

হুদা কমিশনের মেয়াদ শেষের পর দায়িত্ব নিয়ে কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন নতুন কমিশন চেষ্টা করছে সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করে একটা সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন উপহার দেয়ার।

তবে এ ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলগুলোকেও ইসিকে সহায়তা করতে হবে বলে জানান সিইসি হাবিবুল আউয়াল। তিনি বলেন, ‘নির্বাচন নির্বাচনের আইন অনুযায়ী হবে। সময় দেয়া হবে। ভোটাররা যাবেন। ভোট দিতে থাকবেন। আমরা আমাদের সর্বশক্তি দিয়ে আমাদের অংশের দায়িত্ব পালনের চেষ্টা করবো। পাশাপাশি আপনাদের (রাজনৈতিক দল) অনুরোধ থাকবে, আপনারাও কিছু দায়িত্ব নেবেন। দায়িত্ব নিয়ে অর্থশক্তি, পেশিশক্তি, ভোটকেন্দ্রের শৃঙ্খলা রক্ষার চেষ্টা করবেন। আমরা দায়িত্বটা শেয়ার করবো।’

হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘অর্থশক্তিকে আমরা কীভাবে সামাল দেবো, আপনারা আমাকে একটা বুদ্ধি দেন। দেশে অর্থ বেড়েছে। আমাদের সবার বাড়িতে বস্তা বস্তা টাকা। বস্তা বস্তা অর্থ আমরা নির্বাচনে ব্যয় করি। এই অর্থ নিয়ন্ত্রণ করবো কীভাবে? যেটা প্রকাশ্যে হয় তার কিছুটা নির্বাচন কমিশনে দেখানো হয় যে, ৫ লাখ টাকা খরচ করেছে। তার বাইরে গিয়ে যদি আমি গোপনে ৫ কোটি টাকা খরচ করি, কীভাবে আপনি আমাকে ধরবেন বা আমি আপনাকে ধরবো? এগুলোও সম্ভব যদি এ জন্য সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলা হয়। সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘একটি অপসংস্কৃতি হয়ে গেছে। পয়সা নিয়ে ঢালতেছি। মাস্তান হায়ার করতেছি। প্রফেশনাল কিলারও হায়ার করতে খুব বেশি পয়সা লাগবে না। এই সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসতে আমাদের সবাইকে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। অর্থশক্তি, পেশিশক্তির ব্যাপারে আমরা এখনই কিছু বলতে পারবো না। মাঠে আপনাদের থাকতে হবে। তথ্যগুলো পাঠালে আমরা কিন্তু সাহায্য করবো।’

তিনি আরও বলেন, ‘আপনারা আমাদেরকে অবশ্যই চাপে রাখবেন। আমি বিশ্বাস করি এটা প্রয়োজন আছে। আপনাদেরকেও আমাদের ওপর নজরদারি রাখতে হবে। আমাদের থেকে কোনো অনিয়ম লক্ষ্য করলে তা প্রকাশ করে দেবেন। আমরা কোনোভাবেই পক্ষপাতিত্ব করতে চাই না।’

0Shares

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *