ভরণ-পোষণ ও বাসস্থান স্ত্রীর অধিকার। ভরণ-পোষণের ব্যাপারে শরিয়ত নির্ধারিত পরিমাপ নির্ধারিত করে দেয়নি। বরং শরিয়তের ভাষায় স্ত্রীকে প্রয়োজন পরিমাণ ভরণ-পোষণ দেওয়া স্বামীর কর্তব্য। এর পরিমাণ পরিবেশ-পরিস্থিতি, অবস্থা ও স্বামীর সামর্থ্যনির্ভর। (আলমুহিতুল বুরহানি : ৩/৫২৯-৫৩০, ফাতহুল কদির : ৩/১৯৪)
কোরআনে কারিমে ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা স্ত্রীদের জন্য তোমাদের সামর্থ্য অনুযায়ী নিজেদের ঘরে বাসস্থানের ব্যবস্থা করো।’ (সুরা : তালাক, আয়াত : ৬)
মহানবী (সা.) বিদায় হজের ভাষণে দীর্ঘ বয়ানের এক পর্যায়ে বলেছিলেন, ‘অতএব তোমরা স্ত্রীদের ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় করো, কেননা তোমরা তাদের আল্লাহর আমানত ও প্রতিশ্রুতির ওপর গ্রহণ করেছ এবং তোমরা আল্লাহর হুকুমেই তাদের লজ্জাস্থানকে হালাল হিসেবে পেয়েছ। তাদের ওপর তোমাদের অধিকার হলো, তারা তোমাদের অপছন্দ হয় এমন লোককে তোমাদের বিছানায় আসতে দেবে না। যদি তারা এ অন্যায় কাজ করে, তাহলে তাদের হালকা প্রহার করতে পারবে, যাতে শরীরে কোনো জখম বা আঘাত না হয়। আর তোমাদের ওপর তাদের অধিকার হলো, তাদের জন্য প্রয়োজন অনুপাতে খাবার ও পোশাকের ব্যবস্থা করা।’ (সহিহ মুসলিম : হাদিস : ১২১৮)
স্বামী প্রয়োজনীয় খরচ না দিলে করণীয় : স্বামী যদি বিহিত কোনা কারণ ছাড়া স্ত্রী-সন্তানের তথা সাংসারিক জরুরি খরচ না করে, তাহলে স্ত্রী স্বামীর অনুমতি ছাড়াও স্বামীর সম্পদ থেকে প্রয়োজনমতো অপচয় না করে খরচ করতে পারবে। হাদিস শরিফে এসেছে, ‘সাহাবিয়া হিনদ বিনতে উতবা (রা.) রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে এসে বলেন, হে আল্লাহর রাসুল! আমার স্বামী আবু সুফিয়ান সংসারের খরচে সংকীর্ণতাকারী, সে আমার ও আমার সন্তানের প্রয়োজন পরিমাণ খরচ দেয় না, তবে আমি তার অগোচরে তার থেকে কিছু নিয়ে থাকি। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, হ্যাঁ, তুমি তোমার ও তোমার সন্তানের প্রয়োজন পরিমাণ তার অগোচরে তার থেকে নিতে পারবে।’ (বুখারি, হাদিস : ৫২৬৪, বাদায়েউস সানায়ে : ২/২৭)
তবে স্বামী-স্ত্রী উভয়ের মালিকানা ভিন্ন হওয়ায় অনুমতি ছাড়া একে অন্যের সম্পদ ব্যয় করা অবৈধ। স্বামী যদি নিয়মমাফিক ভরণ-পোষণ ও স্বাভাবিক হাতখরচের প্রয়োজন পূরণ করে থাকে, তাহলে তার কাছ থেকে তার অগোচরে টাকা-পয়সা নিয়ে নেওয়া এবং তাকে না জানিয়ে বিভিন্ন খাতে ব্যয় করা বৈধ হবে না। (আলবাহরুর রায়েক : ৪/১৭৭)
স্ত্রীর বাসস্থান : স্ত্রী যদি উচ্চবিত্ত পরিবারের মেয়ে হয়, তাহলে সে যদি স্বামীর যৌথ পরিবার থেকে ভিন্ন ঘরের দাবি করে, তাহলে স্বামীর সামর্থ্য অনুযায়ী তাকে ভিন্ন ঘরের ব্যবস্থা করে দিতে হবে। স্বামীর বাবা-মায়ের সঙ্গে যৌথভাবে থাকতে স্ত্রী বাধ্য নয়। আর মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে হলে তাকে স্বামীর পরিবারের সঙ্গে এক ঘরে রাখা গেলেও তার পৃথক কক্ষ, টয়লেট-গোসলখানা রান্নাঘরসহ যাবতীয় প্রয়োজনীয় জিনিস ভিন্ন করারও দাবি করতে পারবে। এ ক্ষেত্রেও স্বামীর পরিবারের সঙ্গে যৌথভাবে থাকতে স্ত্রীকে বাধ্য করা যাবে না। আর নিম্নবিত্ত পরিবারের হলে টয়লেট-গোসলখানা, পাকের ঘর ইত্যাদি ভিন্ন দিতে বাধ্য না হলেও তার জন্য একটি পৃথক কক্ষের ব্যবস্থা অবশ্যই করতে হবে, যার হস্তক্ষেপ স্ত্রী ছাড়া অন্য কেউ করতে পারবে না। ওই কক্ষে স্বামীর বাবা-মা, ভাই-বোন বিনা অনুমতিতে প্রবেশ করতে পারবে না। স্ত্রীর এমন সংরক্ষিত কক্ষ দাবি করার অধিকার আছে।